Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

ফল্গুধারার মতো হিন্দুত্ববাদ বইত বলিউডে, এখন তা আগ্রাসী ভূমিকায়

আজকের প্রেক্ষিতে ভাবলে, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’ বা তদনুরূপ লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ছবিতে প্রদর্শিত হিন্দুত্ব তেমন আগ্রাসী ছিল না।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ১৬:৪২
Share: Save:

এক মায়ের তিন ছেলে। কিন্তু কুচক্রীদের দাপটে তিন ছেলে তিন দিকে হারিয়ে গেল ছোটবেলায়। একজন গিয়ে পড়ে এক খ্রিস্টান ফাদারের হাতে, একজন এক মুসলমান পরিবারে আর একজন হিন্দু বাড়িতে। তিন জন বড় হয়। সেই কুচক্রীর সঙ্গে তাদের টক্কর বাধে। তার পর সব ভিলেনির অন্ত ঘটিয়ে তারা বেরিয়ে আসে। সত্য সামনে আসে। তারা জানতে পারে, তারা একই মায়ের সন্তান। মা-ও আবির্ভূতা হন এই সময়ে। পারিবারিক পুনর্মিলন ঘটে। প্রসঙ্গত, এই মা কিন্তু হিন্দু। ১৯৭৭ সালে মনমোহন দেশাই পরিচালিত ছবি ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’-র এই ছিল থিম।

১৯৭০ দশকে এই ‘হারিয়ে পাওয়া’ বা ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ ফরমুলা বলিউডের চেনা ছক। সিনেমা ও সমাজ নিয়ে যাঁরা ভাবনা-চিন্তা করেন, তাঁদের মতে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ তৈরি করতে গেলে আত্মপরিচয় নিয়ে একটা ঘোটালা রাখা প্রয়োজন। ১৯৭০-এর দশক সেই রাগী যুবাটিকে নির্মাণ করতে গিয়েই তাকে বিচ্ছিন্ন করে পরিবার থেকে। এবং আবার ফিরিয়ে আনে যাবতীয় প্রতিশোধ চরিতার্থ হওয়ার পর।

এই ‘পরিবারটি’ অনেক সময়েই রাষ্ট্রের বকলম। ১৯৭০ দশকের বিবিধ ঘোলাজলের প্রেক্ষিতে এই সব ছবি ছিল রাষ্ট্রীয় আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়ার গল্প। মনে রাখতে হবে ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’-র মা কিন্তু হিন্দু। তাঁর তিন সন্তান তিন ধর্মে বেড়ে উঠলেও তারা হিন্দু মায়েরই সন্তান। ছবির শেষে সেই ‘হিন্দু’ আত্মপরিচয়টিই বড় হয়ে ওঠে। দর্শকের কর্ণকুহরে এটা যেন ফিস ফিস করে বলে দেওয়া হয়— মুসলিমই হও আর খ্রিস্টানই হও, তুমি কিন্তু আদতে হিন্দু মা (ভারতমাতা)-র সন্তান।

হিন্দু মায়ের তিন সন্তান অমর, আকবর এবং অ্যান্টনি। ছবি: সংগৃহীত

আরও পড়ুন: ভাইয়ের সঙ্গে বিকিনি পরে ছবি! কটাক্ষের মুখে সারা

আজকের প্রেক্ষিতে ভাবলে, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’ বা তদনুরূপ লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ছবিতে প্রদর্শিত হিন্দুত্ব তেমন আগ্রাসী ছিল না। বলা যায়, এখানে জাতিসত্তার প্রশ্নটিকে ভারি নরম সুরে, সুকুমার রায়ের ভাষায় ‘নাইনিতালের নতুন আলু’-র মতো ভারি নরম ভাবে গাওয়া হয়েছিল। জরুরি অবস্থার শেষে দেশের কোণে কোণে জমে থাকা ক্ষোভকে প্রশমিত করতেই কি এই ফরমুলা ব্যবহৃত হয়েছিল? অমিতাভ বচ্চন তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্সে রাগি যুবকের ইমেজ উগরে দিয়ে কি হলের অন্ধকারে বসে থাকা বেকার যুবকটির অবচেতনের বিষ বাষ্পগুলিকে নিরাপদে বের করে দেওয়ার কাজটি করছিলেন? এই সব প্রশ্ন সঙ্গত ভাবেই ওঠে। ‘হিন্দুত্ব’-র প্রশ্নটা খানিক পিছনে পড়ে থাকে। ১৯৭০ বা তার লেজ ধরে যখন ১৯৮০-র দশকের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ছবিগুলি বলিউড নির্মাণ করতে থাকে, তখন জাতিসত্তার প্রশ্নটিকে স্মরণে রাখা হলেও তার তলায় ফল্গুস্রোতের মতো বইয়ে দেওয়া হয় হিন্দুত্বের একটা ধারণা। অবশ্য এই ‘হিন্দুত্ব’ ছিল বেশ মৃদু। তার মধ্যে আগ্রাসী ভাব ছিল না। কেবল বিনীত কণ্ঠে মনে করিয়ে দেওয়া ছিল— বাপু, তুমি যে ধর্মেই বিলং করো না কেন, আসলে তুমি এক মায়ের সন্তান। আর সেই মা হিন্দুত্ব-সঞ্জাত ভারতমাতা।

এই মৃদু বা আবেদন-নিবেদন মার্কা হিন্দুত্ব কিন্তু খুব বেশিদিন স্থায়ী হল না বলিউডে। ১৯৯০-এর মধ্যেই এক আগ্রাসী চেহারায় আবির্ভূত হতে শুরু করে বলিউডি ছবিতে উপস্থাপিত হিন্দু জাতীয়তাবাদ। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’(১৯৯৫) বা ‘হম আপকে হ্যায় কওন’-এর মতো ছবিতে উঠে আসে গোঁড়া হিন্দু যৌথ পারিবারিক পরিসর, গুরুগম্ভীর পিতৃতন্ত্র। ১৯৯০-এর দশকে নির্মিত পারিবারিক ছবিগুলি আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ বোধ হলেও, এগুলি ছিল আগ্রাসী পিতৃতান্ত্রিক ছবি। মনে রাখতে হবে এই ছবিগুলিতে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় কোনও মুসলমান চরিত্রকে দেখা যায়নি। যদি বা কোনও মুসলমান চরিত্র চিত্রনাট্যে উঁকি দিয়েছে, তো তার ভূমিকা থেকেছে একান্ত গৌণ। ১৯৯১-এর ছবি ‘সনম বেওয়াফা’ ছিল একটি ব্যতিক্রম। ‘রোমিও-জুলিয়েট’-এর ধাঁচায় তৈরি সেই ছবি ছিল দুই মুসলমান পরিবারের রেশারেশির বাতাবরণে উন্মাদ প্রেমের গল্প। কিন্তু লক্ষণীয় এটাও যে, এই ছবিতে যে পরিমাণ পারিবারিক হিংসা দেখানো হয়েছিল, তা সেই সময়ের অন্য ছবিতে দৃশ্যমান ছিল না। সন্দেহ হয়, সাওন কুমার টাক পরিচালিত ও প্রযোজিত এই ছবি কি মুসলমান সমাজকে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের খনি হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল?

‘প্রহার’ ছবিতে প্রতিবাদী সংখ্যালঘু যুবক সত্ হয়েও যেন ‘আশ্রিত’। রক্ষাকর্তা নায়ক কিন্তু হিন্দু। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আরও পড়ুন: সিস্টার নেই, তাপসকে ওরা বেঁধে রেখেছিল বেডের সঙ্গে

১৯৯১-এর ছবি ‘প্রহার’। পরিচালক নানা পটেকর। মুখ্য ভূমিকাতেও তিনি স্বয়ং। ছবির কাহিনিতে এক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী যুবক যুদ্ধে আহত হয়ে অবসর নেয় এবং প্রতিবন্ধী অবস্থায় মুম্বইয়ে ফিরে এসে একটি দোকান খোলে। তোলাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায় এবং খুন হয়। তার খোঁজেই এসে পড়েন তার সামরিক জীবনের প্রশিক্ষক মেজর প্রতাপ চৌহান রূপী নানা। এর পরের কাহিনি দুর্নীতিতে ভরা সমাজে এক কম্যান্ডো অফিসারের একার লড়াই। পুলিশ থেকে ভিলেন—যাবতীয় করাপশনকে তিনি একা হাতেই দমন করেন ‘প্রহার’ করে। এই ছবিতে এমন উক্তিও ছিল যে, প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের জীবনে অন্তত একটি বছরের সামরিক অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। সামরিক গণতন্ত্রের জয়গান গাওয়ার পাশাপাশি এই ছবি কি এই বার্তাও দেয়নি যে, সংখ্যালঘুর অভিভাবকত্ব করতে হলে সংখ্যাগুরুকেই এগিয়ে আসতে হয়। সংখ্যালঘু এখানে ‘পৃষ্ঠপোষিত’, ‘আশ্রিত’। সে সৎ হলেও ‘প্রতিবন্ধী’। আক্রান্ত হলে তার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। আর অন্য দিকে এ ছবি যে জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরেছিল, তার চরিত্র ছিল আগ্রাসী সামরিক। হিন্দুত্ব হয়তো সাবলাইম। কিন্তু এই আগ্রাসী মিলিটারিয়ানার পিছনে তা ছিলই। তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে যাবে না।

মিলেনিয়াম পর্বে এসে বলিউডের হিন্দুত্ববাদ ক্রমে বদলায়। কাশ্মীর-কেন্দ্রিক বেশ কিছু ছবিতে হিন্দুত্ব ও মূলধারার জাতীয়তাবাদকে একাকার করে দেখানো হতে থাকে। ১৯৯৯-এর ছবি ‘সরফরোস’-এ ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত ভারতীয় পুলিশের এক মুসলমান কর্মীর মুখ দিয়ে এ কথাও বলানো হয়—পাকিস্তানে যত মুসলমান রয়েছে, তার চাইতে কয়েকগুণ বেশি রয়েছে ভারতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেই মুসলমান চরিত্রটি ছিল নেহাতই পার্শ্ব। ছবির লাগাম ধরেছিল ‘রাঠৌর পদবিধারী হিন্দু পুলিশ অফিসার।

যোধা আকবর। এই ধরনের তথাকথিত ইতিহাস আশ্রিত ছবি ছবিগুলি দিয়ে হিন্দুত্ববাদ আগ্রাসী হল বলিউডে। ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের পর্দায় হিন্দুত্ব এ ভাবেই তার আগেকার ‘মৃদু’ চরিত্র পরিহার করছিল নিঃশব্দে। ছবির মুখ্য বিষয় হিসেবে উঠে আসছিল ইসলামি সন্ত্রাসবাদ, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদ, কারগিল, লাইন অফ কন্ট্রোল-এ সেনার আত্মবলিদান ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য এই সব ছবির কেন্দ্রে থাকছিল হিন্দু নায়ক আর পার্শ্বচরিত্রে এক বা দুই সৎ, জাতীয়তাবাদী মুসলমান। ‘খারাপ’ ও সন্ত্রাসী মুসলমানের বিরুদ্ধে তারা লড়াই করছে। কিন্তু কেন্দ্রে থাকছে সেই ‘হিন্দু’ নায়ক।

গত এক দশকের মধ্যে এই আখ্যান কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কিছু বিষয়। তথাকথিত ইতিহাসাশ্রিত কিছু ছবি উঁকি দিতে শুরু করে বলিউডে। যেখানে হিন্দুত্ব তার পূর্বতন ‘মৃদু’ চরিত্র পরিহার করে এক আগ্রাসী চেহারায় উদ্ভূত হয়। ২০০৮-এ মুক্তি পায় আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত ‘যোধা আকবর’। পরিপূর্ণ কল্প-ইতিহাস নির্ভর এই ছবিতে আকবর এক ‘মৃদু মুসলমান’। অবশ্য আকবরের এই চেহারাটা সেকুলার ভারতেরই বানানো। ইসলামি শাসনে আকবরকে দত্যিকুলের পেল্লাদ হিসেবে দেখানোর প্রচেষ্টাটা ইংরেজ ভারততত্ত্ববিদদের। পরে তা পাঠ্য পুস্তকে সংক্রমিত হয়। এই ছবি আকবরের সেই আর্কিটাইপ ধরেই এগোয়। হিন্দু যোধাবাইয়ের কোমল স্পর্শে মুঘল অন্তঃপুরে বইতে থাকে সহিষ্ণুতার হাওয়া। এদিকে আবার মুঘল অন্তঃপুরটি হাঙর-টাঙর অধ্যূষিত ডিপ ব্লু সি। ক্রমাগত ষড়যন্ত্র চলে সেখানে। ভালমানুষ আকবরকে সামলে রাখে হিন্দি কুলোদ্ভব যোধার বুদ্ধি আর হৃদয়বেত্তা। যোধা মুসলমান অন্তঃপুরেও হিন্দু। আকবর তার স্পর্শেই উদার। শেষ পর্যন্ত যাবতীয় ষড়যন্ত্র-টন্ত্র পার হয়ে বেঁচে থাকে হিন্দু যোধা আর সেমি-হিন্দু আকবরের প্রেম। মুঘল জমানার একটা ‘হিন্দুত্বকরণ’ চুপিসারে ঘটে যায়। এখানে ‘আগ্রাসন’টা খুবই সূক্ষ্ণ। কিন্তু তা ভাল করে দেখলে নজর এড়ায় না।

পদ্মাবত যে নয়া হিন্দুত্ববাদকেই তোল্লাই দিচ্ছে, তা বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লেগেছিল গেরুয়া শিবিরের। ছবি: সংগৃহীত

বলিউড ও মারাঠা ন্যাশনালিজমের গাঁঠছড়া মিলেনিয়াম পর্বে বেশ জাঁকাল হয়ে বসে। সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ২০১৫-এর ছবি ‘বাজিরাও মস্তানি’ এমনই এক প্রেম-কাহিনি। বাজিরাওয়ের হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণার উপরে বলিউডের সিলমোহর ছিল এই ছবি। প্রেম-কাহিনির আবডালে মারাঠা হিন্দু জাতীয়তা স্পষ্ট ভাবেই মাথা তুলেছিল এখানে, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। যেমন যাবে না ভন্সালীর ২১০৮-র ছবি ‘পদ্মাবত’। রাজপুত ব্যালাডের উপরে আধারিত কর্নেল টডের ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিজ অফ রাজস্থান’ নাকি ষোড়শ শতকের সুফি কবি মালিক মুহম্মদ জ্যায়সির কাব্যের উপরে আধারিত ছিল সেই ছবি? জ্যায়সির ‘পদ্মাবৎ’ আদ্যন্ত এক রূপকাশ্রয়ী আখ্যান-কাব্য, যার অন্তঃস্থলে খেলা করছে সুফি মরমিয়া সাধনধারার সংকেত। সেখান থেকে যখন শুধুমাত্র আখ্যানটিকে তার ফেসভ্যালুতে তুলে আনা হয়, তখন তার পরিণিতি কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এই ছবিতে আলাউদ্দিন খলজি এক ঘোরতর লম্পট। কিন্তু পদ্মাবতীকে দেখে তার মনে প্রকৃত প্রেমের সঞ্চার হয়। কিন্তু সেই প্রেম পরিণতি পেতে পারে না। পদ্মাবতী বিবাহিতা, স্বধর্মে অবিচল। খেল খতম হয় পদ্মাবতীর স্বামী রতন সিংহের সঙ্গে আলাউদ্দিনের দ্বন্দ্বযুদ্ধে। যেখানে রতনকে পিছন থেকে হত্যা করে মালিক কাফুর। খলজি ‘মন্দের ভাল’ হয়ে থেকে যান। মালিক কাফুর (অবশ্যই মুসলমান এবং ‘প্রান্তিক’ যৌনতার প্রতিনিধি) যাবতীয় ভিলেনির দায় ঘাড়ে নেন। ‘হিন্দুত্ব’-র চেহারা বেশ আগ্রাসী এই ছবিতে। তবে বিন্যাস জটিল হওয়ায় শুটিং পর্বে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের কোপে পড়েন ভংশালী ও তাঁর টিম। আদতে যে এই ছবি ভারতীয় উপমহাদেশে উত্থিত নয়া হিন্দুত্ববাদকেই তোল্লাই দিচ্ছে, তা বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লেগেছিল গেরুয়া-ওয়ালাদের।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

২০১৯-এ তোলা হয়েছে বালাসাহেব ঠাকরের মতো গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী নেতার বায়োপিক। শিবসেনা-র প্রতিষ্ঠাতার জীবনকাহিনিকে মহিমান্বিত করে তুলে ধরার পিছনে কী কাজ করেছে, তা বিশদে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বলিউড গত কয়েক বছরে এই সব ছবির পাশাপাশি খুব নিরীহ ভাবেই তুলে গিয়েছে ‘তনু ওয়েডস মনু’ বা ‘বধাই হো’-র মতো সুনির্মিত বুদ্ধিদীপ্ত কমেডি। কিন্তু, দেখার ব্যাপার এটাই যে এই সব ছবিও আবর্তিত হয়েছে উত্তর ভারতীয় হিন্দু মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করেই। দেশের সংখ্যালঘু কাউন্টারপার্টটির অস্তিত্বই এই সব ছবিতে নেই। ‘বরেলি কে বরফি’ বা সাম্প্রতিকতম ‘বালা’ কথা বলেছে বিবিধ সামাজিক সমস্যা নিয়ে। কিন্তু সর্বত্রই ছবির মুখ হিন্দু নায়ক-নায়িকা ও তাদের পরিবার। হিন্দুত্বের এক একবগ্‌গা উত্তর ভারতীয় ভার্সনই এখানে লভ্য। অন্য কোনও প্রদেশ বা সংস্কৃতি যে এ দেশে বিরাজ করে, তা এই ছবিগুলি থেকে টেরও পাওয়া যায় না। বলউডি হিন্দুত্ব এখানে অকথিত হয়েও বাঙ্ময়।

সমাজ-মনস্তত্ত্বের গবেষক সুধীর কাকর তাঁর ‘ইন্টিমেট রিলেশনস’ গ্রন্থের ‘লাভার্স ইন দ্য ডার্ক’ নামের এক প্রবন্ধে বলিউডি ছবিকে তিনটি ‘জাত’-এ ভাগ করেছিলেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও শূদ্র ছবি। কাকরের ভাষ্য অনুযায়ী— ‘ব্রাহ্মণ’ ছবি হল পৌরাণিক কাহিনির উপর আধারিত, ‘ক্ষত্রিয়’ ছবি ঐতিহাসিক কাহিনি আশ্রিত আর ‘শূদ্র’ ছবি নেহাতই অ্যাকশন মুভি। কাকরের এই হিসেব তাঁর কৈশোর-যৌবনে দেখা ছবির উপরে ভিত্তি করে রচিত। ১৯৬০-এর দশকের সেই হিসেব আজ আর চলে না। পৌরাণিক ছবি আর বলিউড তোলে না। কিন্তু নব্য পুরাণের জন্ম দেয় ‘পদ্মাবত’ বা ‘বাজিরাও মস্তানি’ তুলে। ব্রাহ্মণ্য হিন্দুত্ববাদ এখানে হালকা ইতিহাসে জারিত। ফলে একটা ক্ষাত্রতেজও এখানে লভ্য। তদুপরি, অ্যাকশন এই সব ছবির অন্যতম উপাদান। ফলে, কাকর-বর্ণীত ‘শূদ্র’ চরিত্রও এখানে দৃশ্যমান। এ ভাবেই বর্তমান শাসকের আদর্শ ‘হিন্দুত্ব’ রিপ্রোডিউস করে বলিউড। ধর্মীয় সংখ্যালঘু এখানে মার্জিনের বাইরে। আর মার্জিনের ভিতরে ঢুকলেও সে হয় ভিলেন, নয় ‘প্রায় হিন্দু’ অথবা গুরুত্বহীন। স্ক্রিন জুড়ে খেলা করতে থাকে বিবিধ শেডের হিন্দুত্ব। দর্শকের সামনে কোনও অল্টারনেটিভই নেই। থাকার সম্ভাবনাও নেই অদূর ভবিষ্যতে।

নব্য পুরাণের জন্ম দেয় ‘পদ্মাবতবা বাজিরাও মস্তানিতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুত্ববাদ হালকা ইতিহাসে জারিত। এ ভাবেই বর্তমান শাসকের আদর্শ ‘হিন্দুত্ব’ রিপ্রোডিউস করে বলিউড। ধর্মীয় সংখ্যালঘু এখানে মার্জিনের বাইরে। আর মার্জিনের ভিতরে ঢুকলেও সে হয় ভিলেন, নয় ‘প্রায় হিন্দু’ অথবা গুরুত্বহীন। স্ক্রিন জুড়ে খেলা করতে থাকে বিবিধ শেডের হিন্দুত্ব। দর্শকের সামনে কোনও অল্টারনেটিভই নেই। থাকার সম্ভাবনাও নেই অদূর ভবিষ্যতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy