প্রতীকী ছবি
পুজোর ক’টা দিন শেষরাতে ঘুম থেকে ওঠা বহুকালের অভ্যাস অশীতিপর চপলা সাহার। স্থলপদ্মের জন্য কতদূর হেঁটে চলে যেতেন! এ বারে পুজো আসার আগে কেবলই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে তাঁর। বিড়বিড় করছেন, “বর্ডার স্লিপটা ঠিক আছে তো?” মাঝেমধ্যেই চমকে উঠে ছেলের ঘুম ভাঙিয়ে সতর্ক করছেন— “বাবু, বর্ডার স্লিপটা এখন খুব সাবধানে রাখিস কিন্তু!”
ছিয়াশি বছরের চপলাদেবী শুনেছেন, ‘জয় বাংলার’ পরের বছর যাঁরা পাকিস্তান থেকে এ দেশে এসেছেন তাঁদের সবাইকে নাকি বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে! শোনা ইস্তক তাঁর ভিতরে থরথরানি কমছে না। পুজো অর্থহীন হয়ে গিয়েছে। শুধু তিনি নন, লালগোপাল পালের কথা ধরা যাক। আশি পেরোনো মানুষটি প্রথম যে দিন এনআরসি’র কথা জানলেন তার পর থেকে কেমন মনমরা হয়ে পড়েছেন। রাতে বিছানায় এ পাশ-ও পাশ। বুকে পেসমেকার। ছেলেরা চিন্তা করতে বারণ করেন। কিন্তু বৃদ্ধ-র একই কথা, “শেষ কালে কি ক্যাম্পে বন্দি হয়ে থাকতে হবে?”
চপলাদেবী এ দেশে আসেন ১৯৬৪ সাল। সেটা ছিল শ্রাবণ মাস। ফরিদপুর জেলার বালিয়াকান্দি থানার রামদিয়া স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে কালখালি স্টেশন। তার পর সেখান থেকে ঢাকা মেলে তখনকার পাকিস্তানের দর্শণা সীমান্ত। সেখানে তিন ঘণ্টা ধরে চেকিং। তিনি হিন্দুস্থানে পাকাপাকি ভাবে থাকতে চান জানার পর অফিসারেরা তাঁর হাতে এক টুকরো সরকারি শিলমোহর লাগানো কাগজ দেন। এ দেশে থাকার অনুমতি পত্র। সেই কাগজ সম্বল করে প্রথমে নৈহাটি তার পর চুঁচুড়ায় আশ্রয় নেন।
এর বছর খানেক পর নবদ্বীপে আসা। অনেক লড়াই করে ১৯৮৩ সালে তৈরি করেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। ওলাদেবী তলায় সেই বাড়িতে বসেই তিনি প্রশ্ন করেন, “ ১৯৭১ সালের দলিল থাকবে কী করে? তখন তো কোনও রকমে শাকপাতা খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। যাঁরা বলছেন এ দেশে থাকতে গেলে একাত্তর সালের আগের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে, দলিল দেখাতে হবে তাঁরা কি আটাত্তর বা দু’ হাজার সালের বন্যার কথা জানেন? কত গুরুত্বপূর্ণ কাগজ জলে নষ্ট হয়ে গেল। এত কিছুর পর এক টুকরো কাগজ আজ এত মূল্যবান হয়ে গেল!’’
তা হলে কী করবেন? স্থির চোখে বলেন, “সে বার পালিয়ে এসেছিলাম। এ বার আর পালাব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy