Advertisement
E-Paper

নদী পিছিয়েছে, কাছে এসেছে এনআরসি-র ভয়

বৃদ্ধা বলছেন, ‘‘ওখানেই ছিল আমাদের বাড়ি। কিন্তু আর ওখানে ফিরতে চাই না গো!’’ ৭০ বছরের বৃদ্ধার কপালে এখন এনআরসি’র কাঁপন। এই প্রান্তিক বয়সে আর পুরনো দেশে ফিরতে চান না তিনি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৫
Share
Save

পদ্মার শাখা নদীর পাড়ে ক্যামেরা তাক করতেই ছুটে এলেন বৃদ্ধা, হাত জোড় করে বললেন, ‘তোমাদের পায়ে ধরি বাবা, আমাদের ফটোক (ছবি) তুলো না।’ কেন? হাত তুলে দেখাচ্ছেন— পদ্মার পাড়ে আবছা বাবলা গাছটা। তার পর অস্পষ্ট এক গ্রাম, জেলা রাজশাহী, বাংলাদেশ।

বৃদ্ধা বলছেন, ‘‘ওখানেই ছিল আমাদের বাড়ি। কিন্তু আর ওখানে ফিরতে চাই না গো!’’ ৭০ বছরের বৃদ্ধার কপালে এখন এনআরসি’র কাঁপন। এই প্রান্তিক বয়সে আর পুরনো দেশে ফিরতে চান না তিনি।

গোটা রাজ্য জুড়ে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও সীমান্তের পদ্মাপারের গ্রামগুলিতে যেন সেই আতঙ্ক আশ্বিনের কাশ ফুলের মতোই ঘন। কারণ, সীমান্তের এই বাসিন্দাদের অনেকেই এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। বার কয়েক ভাঙনের ফলে পদ্মা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের যাবতীয় নথিপত্র, ফলে এনআরসি’র নামটা শুনলেই এখন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে অসহায় ভাঙনগ্রস্ত মানুষগুলোর।

দেশভাগের সময় ঠাকুর্দার হাত ধরে ভিটে ছেড়েছিলেন চর দুর্গাপুরের কালিপদ মণ্ডল। এ দেশে এসেও বারকয়েক ভিটে বদলাতে হয়েছে পদ্মার সৌজন্যে। কালিপদর কথায়, ‘‘একটা সময় ঠাকুর্দার হাত ধরে ভিটের মায়া ছেড়ে এ দেশে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম একটা হিল্লে হল কিন্তু পদ্মার ভাঙনে দু-দুবার ভিটে হারাতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু বছর কুড়ি থেকে পদ্মা সরে গিয়েছে বাংলাদেশের দিকে, অনেক দুরে। ফলে নিশ্চিন্তেই ছিলাম শেষ বয়সটা। ভেবেছিলাম মা দুর্গা মুখ তুলে চেয়েছেন।’’ দুর্গাপুজোর আগেই এনআরসির আতঙ্ক আবারও চেপে বসেছে ৭৮ বছরের কালিপদর ঘাড়ে। বারবারই বলছেন, ‘‘এ বার কি তা হলে আবার নাতির হাত ধরেই দ্যশটা ছাড়তে হবে! কেবল কালিপদ নয়, ডোমকলের সীমান্ত জুড়ে এখন একটাই আতঙ্ক এনআরসি। জলঙ্গির চর পরশপুর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, একটা সময় আমাদের কাছে আতঙ্ক ছিল পদ্মার ভাঙন, এখন পদ্মা সরে গিয়েছে অনেক দূরে ফলে কিছুটা হলেও ভাঙন নিয়ে নিশ্চিন্ত আমরা। কিন্তু হঠাৎ করেই এনআরসি আতঙ্ক যেন ঘাড়ে চেপে বসেছে। আবারও সেই ভাঙনের রাত গুলোর মতই চাপা আতঙ্কের। সীমান্তের বাসিন্দারা অনেকেই এ দেশে এসেছেন ৭১ সালের আগে, কিন্তু তার পরেও তাঁদের চোখেমুখে দেশ ছাড়ার ভয়।

চর রাজাপুরের বছর ষাটের শ্যামল প্রামাণিকের দাবি, ‘‘এক সময় শরণার্থী হয়ে জন্মভূমি ছাড়তে হয়েছিল। তার পর যেখানে ঠিকানা গাড়লাম, ক্রমে তাই হয়ে উঠেছিল মাতৃভূমির মতো। হয়তো ফের ফিরতে হবে অন্য কোথাও, কে জানে!’’

NRC India Bangladesh Refugee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।