Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

নিষ্কম্প আলোর রূপকথা যেন

এই গ্রন্থে কোন কবীরকে আমরা দেখতে পাচ্ছি? নিছক ‘ধর্মসেতু নির্মাণের’ কবীর নন।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৮
Share
Save

চৈতালীর কবীর

চৈতালী চট্টোপাধ্যায়

১২৫.০০

ধানসিড়ি

চৌকাঠ পার হলেই অদ্ভুত আঁধার এক। শকুন ও শিয়ালের খাদ্য হয়েছে ধর্ম। ধর্ম ব্যবসায়ীর কল আজ রাজনীতির বাতাসে নড়ে। অতিমারি, হিংসা, কর্মহীনতার অভিশাপ আরও নিরন্ন করছে যাপন ও মননকে। এমন সময়ে দাঁড়িয়ে সন্ত কবীর এক নিষ্কম্প আলোর রূপকথা যেন। চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের মগ্ন প্রয়াসে সেই আলোর ঋজুরেখা এসে পড়েছে বঙ্গীয় পাঠকের চোখে। এসে পড়েছে বলা ভুল। বরং, মায়ার প্রলেপ লাগিয়ে দিচ্ছে এই বালি-কাঁকর মেশানো কুবাতাসি সময়ে।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘পথ ও পাথেয়’ রচনায় লিখেছেন, “চৈতন্য নানক দাদু কবীর ভারতবর্ষের ভিন্ন প্রদেশে জাতির অনৈক্য শাস্ত্রের অনৈক্যকে ভক্তির পরম ঐক্যে এক করিবার অমৃত বর্ষণ করিয়াছিলেন। কেবল ভারতবর্ষের প্রাদেশিক ধর্মগুলির বিচ্ছেদক্ষত প্রেমের দ্বারা মিলাইয়া দিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তাহা নহে, তাঁহারাই ভারতে হিন্দু ও মুসলমান প্রকৃতির মাঝখানে ধর্মসেতু নির্মাণ করিয়াছিলেন।”

এই গ্রন্থে কোন কবীরকে আমরা দেখতে পাচ্ছি? নিছক ‘ধর্মসেতু নির্মাণের’ কবীর নন। বরং দেখছি ভক্তি আন্দোলনের পুরোধা, বর্ণাশ্রম-বিরোধী একটি মানুষকে। জাতপাত তথা ব্রাহ্মণ্যবাদের পতাকা ছিঁড়ে, সংস্কৃতের অহঙ্কারকে সরিয়ে দিয়ে মাতৃভাষায় স্নান করা এক ব্যক্তিকে। যিনি বারাণসীর গৌরব ছেড়ে স্বেচ্ছায় দলিতের লোকালয়ে শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন। আর, এই সব বিবিধ পরিচয়ের আলো-আঁধারি থেকে চৈতালী পরম যত্নে আবিষ্কার করেন এক বিশুদ্ধ কবিকে। যে কবির উচ্চারণ: “পাতা ব্রহ্মা,/ ফুল বিষ্ণু।/ ফলমূল হল মহাদেব।/ এদের এড়িয়ে গিয়ে/ তুমি কার পুজোয় বসেছ?...”।

কবিতার আলো-অন্ধকারময় ছায়াপথে নিজে দীর্ঘ দিন ধরে যাত্রারত চৈতালী। মুখবন্ধে জানান, কবীরকে আবিষ্কার করা কতটা দুরূহ ছিল। সন্ধ্যাভাষার মোড়ক ছিল, অধ্যাত্মবাদের আচ্ছন্নতাও হয়তো ছিল কিছু। সে সব তিনি খুলেছেন সন্তর্পণে, যত্নে, সম্মোহিত হয়ে। অওধি-ঘেঁষা দেশজ হিন্দিতে লেখা কবীরের সুফি, মরমিয়াবাদের মিশ্রণটিকে জলের মতো সহজ বাংলায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব চৈতালীর। যে কবীর শুকনো মেধাকে আক্রমণ করে কখনও স্বতঃশ্চল (“পণ্ডিতেরা বলো,/ আকাশ কোথায় পাতা আছে?”)। অথবা, সমর্পণে চঞ্চল (“বড়ো এলোমেলো হয়ে আছি।/ ভক্তি, ধর্ম, জপতপ,/ কিছু নেই—/ ঠিকঠাক করে দাও সব।”)। চৈতালীর কথায়, “কবীর অন্যদের থেকে আলাদা কোথায়, সেসব point of departure-এর জায়গাগুলোও আমার মনে দানা বাঁধেনি এখনও। সরাসরি ‘কবীরের লেখা অনুবাদ করেছি’ না-বলে যদি বলি এই লকডাউনের স্বল্প সময়ে জুড়ে কবীরকে বোঝার চেষ্টা করে গেছি মাত্র, প্রেক্ষাপটে রয়েছে তাঁর লেখাগুলি।... আস্তে আস্তে কেমন সব সহজ হয়ে এল। আমার অবিশ্বাস নরম হয়ে এল, বিশ্বাসে বলব না, মুগ্ধতায়, কবিতায়।”

এর আগে কবীর সাঁইয়ের দোঁহার বঙ্গানুবাদ পেয়েছি ব্রতীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছে, ২০১৪ সালে। ব্রতীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “বারংবার মনে হয়েছে, কবীর যদি আমায় আমার মাতৃভাষায় উপদেশ দিতেন, তাঁর ভাষা ও ভাব হত লালনের মতো।” লালনের সহজিয়া সমর্পণের এক উজ্জ্বল পূর্বসূরি ছিলেন কবীর। প্রশ্ন জাগে, যে রামের কথা বার বার আরাধ্য হিসাবে ফিরে আসছে কবীরের পদে, সেই রাম কি নিছকই দশরথপুত্র? না কি সর্বব্যাপ্ত ঈশ্বর? তেমনই সাধু অর্থটিও সন্ন্যাসীর নামান্তর নয়।

বইটি পড়ার শেষে জেগে থাকে এক চিরকালীন হাহাকার “বাপধন!/ জীবন অমূল্য।/ তুমি একফুঁয়ে/ উড়িয়ে দিলে/ বীজ বুনলে না!”

book review

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।