Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Book

Book Review: কী ভাবে ক্রমশ জড়িয়ে ফেলছে ভ্রান্তির দুনিয়া

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৫
Share: Save:

পোস্ট-ট্রুথ কিংবা সত্য-উত্তর সংবাদ দুনিয়ার বাস্তব নিয়ে অনেক জানাশোনা হয়েছে আমাদের, কিন্তু এখনও অনেক কিছু জানা বাকি। আমাদের জানা বাকি ‘ক্লিকবেট’-এর মতো শব্দ, যার অর্থ হল অতিসংক্ষিপ্ত চিত্রবার্তা, যা সহজেই ভুল বোঝাতে পারে। কিংবা জানা ভাল, কী ভাবে ‘লেমস্ট্রিম মিডিয়া’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। ‘মেনস্ট্রিম মিডিয়া’ বা এমএসএম, এই তাচ্ছিল্যবাচক নিন্দাসূচক শব্দটি গত শতাব্দীতে তৈরি করেছিলেন বামভাবাপন্ন মানুষ। এখন তার আদলে দক্ষিণপন্থীরা তৈরি করেছেন ‘লেমস্ট্রিম মিডিয়া’ বা এলএসএম, যার অর্থ— বিগ মিডিয়া, অর্থাৎ তাঁদের মতে যে মিডিয়া কেবলই নিরপেক্ষ সত্য বলার ছলে মিথ্যে কথার বেসাতি করে থাকে!

নিউজ়: অ্যান্ড হাউ টু ইউজ় ইট
অ্যালান রাসব্রিজার
৫৫০.০০
ক্যাননগেট

বিশেষ করে সাংবাদিক এবং সংবাদ-মনস্কদের পক্ষে এই শব্দের সঙ্গে পরিচয় জরুরি। আলাদা করে বলা দরকার, যাঁরা ইংরেজি ভাষায় লেখালিখি বা ভাবনাচিন্তা করেন না, তাঁদের কথা। এই সব শব্দ এখন বিশ্বজোড়া আলোচনার মধ্যে ঢুকেছে, সুতরাং পারিভাষিক অনুবাদের জন্যও প্রয়োজন এদের সঙ্গে যথাযথ ভাবে পরিচিত হওয়া। এখানেই বইটির গুরুত্ব। অভিধানের মতো ‘এ’ থেকে ‘জ়েড’ তালিকায় সাজানো বইটি। ফেক নিউজ়-জর্জরিত দুনিয়ায় নিজেকে যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, তবে বিরাট শব্দসঙ্কটে পড়ার কথা। অ্যালান রাসব্রিজার ঠিকই বলেছেন, শব্দজালিকার বিশাল অরণ্যে যদি কিছুটা পথ খুঁজে পান পাঠক, তা হলে তাঁর অনেকখানি ক্ষমতায়ন সম্ভব। সংবাদের প্রতি পৃথিবী ক্রমশ ভরসা হারিয়ে ফেলছে। তা বাঁচিয়ে রাখতে হলে, কী ভাবে সংবাদ ও সাংবাদিক আক্রান্ত হন, কী ভাবেই বা মিথ্যাবাচনে পারদর্শী হন, এ সব নিয়ে আরও আলোচনা জরুরিতর হয়ে পড়ছে।

সিংহশিশু
শিশিরকুমার দাশ
সঙ্কলন ও সম্পাদনা: সার্থক দাস
২০০.০০
যাপনচিত্র

বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ প্রসিদ্ধ মন্তব্য: ‘তাঁহার অজেয় পৌরুষ, তাঁহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব’। ‘পৌরুষ’? পুরুষতন্ত্রবাদের নিগড়ে যিনি এমন প্রবল আঘাত হেনেছিলেন, তাঁর পৌরুষের প্রশংসা? বোঝা যায়, পৌরুষ এখানে ক্ষমতা নয়, পৌরুষ মানে সাহস, শক্তি, দৃঢ়তা। আবার এ-ও ঠিক, যে বিদ্যাসাগর মেয়েদের মুক্ত ব্যক্তিজীবন ফিরিয়ে দিতে লড়াই করছিলেন, তিনিও কিন্তু শকুন্তলারই আদলে ভেবেছিলেন মেয়েদের: ‘রোষবশা ও প্রতিকূলচারিণী হইবে না’, কেননা ‘বিপরীতকারিণীরা কুলের কণ্টকস্বরূপ’। বিদ্যাসাগরকে ফিরে পড়তে গেলে, তাঁর তথাকথিত ‘সীমাবদ্ধতা’ নিয়ে ভাবতে গেলে শিশিরকুমার দাশ মনে রাখতে বলবেন, “আধুনিক চিন্তাবিদরা বলছেন discourse, তা এক-একটা শিলা নয়, তার মধ্যে আছে নানা স্তর, নানা ফাঁক-ফোকর।”

আয়সাগর ব্যয়সাগর বিদ্যাসাগর
শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়
১৮০.০০
অক্ষরবৃত্ত

বিদ্যাসাগর নিয়ে শিশির দাশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেছেন, যেগুলির সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু ‘নারীপ্রশ্ন’ নামে তাঁর যে অপ্রকাশিত লেখা রয়ে গিয়েছিল, তা পাওয়া গেল এই বইটিতে। বিদ্যাসাগর-চর্চায় এ অতি মূল্যবান সংযোজন। ‘বিদ্যাসাগর: সংস্কৃত ও ইংরেজি’, ‘বিদ্যাসাগর ও ধর্মহীন জীবন’, ‘বিদ্যাসাগর অ্যান্ড বেঙ্গলি প্রোজ়’ এবং ‘বাংলায় যতিচিহ্ন’— শিশির দাশের এই সব অসাধারণ প্রবন্ধ ফিরে পড়ার সুযোগ এই বইয়ে। তবে এত সমৃদ্ধ বইটিতে এত বানান ভুল না থাকলেই ভাল হত।

এমন বিষয় যে, বইয়ের জন্য ভাবাটাই কৃতিত্ব। স্বল্পালোচিত দৃষ্টিকোণ থেকে বিদ্যাসাগরের জীবন ও কর্মকাণ্ড নতুন ভাবে দেখা গেল। বইয়ের নামটি সার্থক— দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান, যাঁকে তাঁর বাবা অর্থাভাবে হিন্দু কলেজে ভর্তি করতে পারেননি— পাণ্ডিত্যের জোরে ‘আয়সাগর’ হয়ে উঠেছিলেন। যখন সোনার ভরিই ছিল ১৬ টাকা, তখন ৫০০ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে দিতে পেরেছিলেন অকাতরে। ‘ব্যয়সাগর’-এর খরচের তালিকাও বিস্ময়কর। কত রকম কাজ, কত দানধ্যানের অবাক-করা তথ্য এই বইয়ে পাওয়া গেল। স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, ছাত্রদের অধ্যয়ন সহায়তা, বিধবাবিবাহ সংক্রান্ত কাজ, বন্যায় দুর্ভিক্ষে মহামারিতে ত্রাণের কাজ, সর্বোপরি ‘যখনই বিপদে পড়িবে’ বিদ্যাসাগর-শরণের দায়: সব মিলিয়ে আশ্চর্য মহাপ্রাণ জীবনের খাজাঞ্চিখাতার সন্ধান। সব পাঠকেরই কাজে লাগতে পারে বজ্রাদপি কঠোর সংস্কারক কিন্তু কুসুমকোমল মানুষটির কথা, যাঁকে লেখা যেত (এবং লিখলেই ফল পাওয়া যেত): “যদি অনুগ্রহ করিয়া পাঁচশত টাকা ধার দেন, তাহা হইলে এ যাত্রা পরিত্রাণ পাই, নচেৎ আমাকে আত্মহত্যা করিতে হয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

Book review book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy