যাঁদের দামাল জীবন জন্ম দিয়েছে নানাবিধ মিথের, কেমন ছিল তাঁদের ঘর-গেরস্তালি, পাঠক তা জানতে চান। স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, বিভিন্ন উপলক্ষে বারে বারেই তাঁর কাছে অনুরোধ এসেছে সুনীলকে নিয়ে লেখার, তাঁদের দু’জনের জীবনের কথা লেখার। সুনীলের অর্ধেক জীবন বইটিতে তাঁর আর স্বাতীর যৌথযাপনের যে ছবি পাওয়া গিয়েছিল, স্বাতীর ক্ষীণায়তন বইটিতে তার প্রতিবিম্ব পাওয়া যায় কি না, পাঠক মিলিয়ে নিতে পারবেন। তাঁদের বিয়ে নিয়ে যে স্বাতীর বাড়িতে আপত্তি ছিল, জানিয়েছিলেন সুনীলই। এখানে স্বাতীর লেখায় পাওয়া যায় একটা মজার গল্প— সুনীলের ইচ্ছা ছিল শুধু রেজিস্ট্রি বিয়ে করার, কিন্তু দুই বাড়ির দাবিতে তাঁকে অনুষ্ঠানে সম্মতি দিতে হল, “তবে বিয়ের রাত্রে সারাক্ষণ তাঁর মুখ ছিল গম্ভীর। মুখে হাসি নেই।”
সুনীল এবং কয়েকজন
স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়
৩০০.০০
বিচিত্রা
বিয়ের পর এক বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার এক বাসস্টপে অপেক্ষা করছেন দু’জন, উল্টো দিকে দেখা গেল ইন্দ্রনাথ ও বেলাল দাঁড়িয়ে আছেন। “সুনীলকে দেখে উৎসাহে এগিয়ে আসছিলেন ওঁরা। আমাকে দেখে নিবে গেলেন। সুনীলকে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে অন্য দিকে চলে গেলেন। সুনীল দেখি অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে আছে।” তা হলে কি স্বাতী বিচ্ছিন্ন ছিলেন সুনীলের বন্ধুবান্ধব, আড্ডার জগৎ থেকে? না। তাঁদের বাড়িতে সময়-অসময়ের আড্ডা তো বটেই, শান্তিনিকেতনে সাগরময় ঘোষের বাড়ি থেকে কলকাতার ক্লাবে আড্ডা, তাঁদের যৌথযাপনের টুকরো টুকরো খোঁজ রয়েছে স্বাতীর লেখায়। আবার, ছেলের দিকে নজর দেওয়ার মতো সময় বাবার হয় না বলে অনেক ভ্রমণ আর অনুষ্ঠান থেকে সরেও এসেছেন তিনি। সব মিলিয়ে, তাঁর লেখায় ধরা পড়ল সুনীলের কিছু অচেনা ছবি।
ছয়ে রিপুু
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
৮০.০০
গুরুচণ্ডা৯
এক মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ মোবাইলে আসা মেসেজে জানতে পারলেন, খুন হয়ে গিয়েছেন তিনি নিজেই। কী ভাবে প্রমাণ করবেন যে, তিনি বেঁচে আছেন? না, ‘মরিয়া প্রমাণ করিল যে সে মরে নাই’, এমন কোনও নিষ্পত্তির দিকে এগোয় না গল্প। প্রমাণ হল কি না, জানা যায় না তা-ও। সেই সূত্রেই পাঠকের মনে পড়বে, গল্পগুলো শুরু হওয়ার আগে বইয়ের মুখবন্ধে লেখক জানিয়ে রেখেছেন, “ফ্রানৎ্স কাফকা ‘বিচার’-এর প্রথম পরিচ্ছেদ লিখে কতিপয় বন্ধুকে পড়ে শোনানোর পর নাকি শ্রোতারা সবাই সমস্বরে হেসে উঠেছিলেন। স্বয়ং লেখকও।” গল্পগুলো যে বাঁক নেয় বা নেয় না, পাঠক তা বোঝার সূত্র হিসাবে এই উদ্ধৃতিকে বিবেচনা করতে পারেন, অথবা না-ও পারেন। ছয় রিপু এবং বাংলা সাহিত্যের ছ’টি জনপ্রিয় আঙ্গিককে ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক ভঙ্গিতে গল্পগুলি লিখেছেন সৈকত। তাঁর গল্প আখ্যানধর্মী নয়, কোথাও পৌঁছনোর দায় স্বীকার করেননি লেখক। মুখবন্ধে জানিয়েছেন, তাঁর গল্পগুলি আদ্যন্ত রাজনৈতিক। পাঠ অতিক্রান্ত হওয়ার পর সেই রাজনীতির স্বাদ ধরা পড়তে থাকে।
টুকরো স্মৃতি... ছেঁড়া শোক...
বিষাণ বসু
৩৫০.০০
মৌহারি
বাবার মৃত্যুর পর ‘মনখারাপ, অজস্র স্মৃতি ভিড় করে আসা, সবসময় একটা শূন্যতার বোধ’ থেকে উত্তরণের উপায় হিসাবে এই লেখা লিখতে আরম্ভ করেছিলেন তিনি, জানিয়েছেন লেখক। কিন্তু, এ বই শুধু ব্যক্তিগত মনখারাপের নয়, স্মৃতিচারণেরও নয়। সেই আখ্যানের সমান্তরাল ভাবে চলেছে আরও দুটো ধারা— একটি দীর্ঘমেয়াদি, একটি তাৎক্ষণিকের— একটি ধারা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য বাবার ক্রমে দলের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যাওয়া ও দলের চরিত্র পাল্টে যাওয়া; অন্য ধারাটি পুঁজিবাদী স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রোগী ও পরিজনের অসহায়তা। বিষাণ নিজে পেশায় চিকিৎসক, কিন্তু বাবার অসুস্থতার মুহূর্তে তিনি দাঁড়াতে বাধ্য হন বিপরীত প্রান্তে। প্রশ্ন করেন, কর্পোরেট হাসপাতালের ভিনভাষী নার্সের পক্ষে কি সম্ভব, রোগীর অস্ফুট উক্তি বুঝে তাঁর সেবার ব্যবস্থা করা? অথবা, এই ছোট পরিবারের যুগে কি রোগীর বাড়ির এক জনের পক্ষে সর্ব ক্ষণ হাসপাতালে উপস্থিত থাকা সম্ভব? ভেবে দেখলে, এই প্রশ্নগুলোও রাজনীতিরই— ‘চিকিৎসা পরিষেবা’র চেহারা কী রকম হবে, আসল প্রশ্ন সেখানে। গভীর ব্যক্তিগত শোকের মুহূর্তের লেখাও কী ভাবে ছুঁয়ে যেতে পারে বৃহত্তর প্রশ্নগুলিকে, এই বইটি তার উদাহরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy