Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
book review

Review: ধর্ম, কবিতা, মেধা আর বামপন্থা

‘জীবনের জটিল ও গভীর বিষয়গুলি সম্পর্কে কৌতূহলী’ পাঠকের বন্ধু তিনি, যুক্তিগ্রাহ্য তর্কে উৎসাহী।

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৫৯
Share: Save:

কোরক সাহিত্য পত্রিকা (ভারতের ধর্মপরিচয়)
সম্পা: তাপস ভৌমিক
২০০.০০

জাতীয় সঙ্গীতের না-গাওয়া একটি স্তবকেই সম্ভবত ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্রটি সবচেয়ে চমৎকার ভাবে ধরা পড়ে। যদিও এই বৈচিত্র কেবল ধর্ম-সম্প্রদায়ে নয়। ভাষায়, পোশাকে, খাদ্যাভ্যাসেও। সেই সামগ্রিকতাকেই ছুঁতে চেয়েছে কোরক-এর এই সংখ্যা।

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, মিলন দত্ত, সুমিত বড়ুয়াদের প্রবন্ধে যেমন এক-একটি বিশেষ আচরিত ধর্ম আলোচিত হয়েছে, তেমনই পল্লব সেনগুপ্ত বা প্রসাদরঞ্জন রায়ের লেখনীতে উঠে এসেছে ভারতের ধর্মভাবনার ঐতিহ্য। চৈতন্য, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, গাঁধী— কোন মনীষী নেই তাতে! এই অখণ্ডতা পার করে ‘তৃতীয় পর্ব’-এ এক বিশেষের আলোচনাও চোখে পড়ে।

এই অংশে উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা সম্প্রদায় ও জনজাতির ধর্মাচরণ নিয়ে সঙ্কলিত দশটি প্রবন্ধ সংখ্যাটিকে পরিপূর্ণতা দান করেছে।

পরিচয় (প্রসঙ্গ: দলিত)
সম্পা: অভ্র ঘোষ
১৫০.০০

বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষিতে দলিতের সমস্যা জটিলতর হয়ে উঠছে। উল্টো দিকে এ কথাও ঠিক যে, বঙ্গসমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে— বিশেষত সাহিত্য— দলিত সমস্যার প্রতিফলন নিয়ে যত আলোচনা শোনা যাচ্ছে, এমন আগে কখনও হয়নি। এই সংখ্যার মোট সাতটি প্রবন্ধে দলিত রাজনীতি ও দলিত সাহিত্যের বহুবিধ জটিলতার প্রসঙ্গগুলি উত্থাপিত হয়েছে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের পাশাপাশি এ বার আর একটি জ্বলন্ত বিষয় নিয়েও দু‌’টি মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে— দিল্লির কৃষক আন্দোলন। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সত্য গুহকে নিয়ে সজ্জিত ‘স্মরণ’ বিভাগটি।

কবিতীর্থ (জন্মশতবর্ষে
শিবনারায়ণ রায়)
সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য
৪০০.০০

মননবিমুখ পাঠকের আশ্রয় আর যে-ই হন, শিবনারায়ণ রায় নন অন্তত। ‘জীবনের জটিল ও গভীর বিষয়গুলি সম্পর্কে কৌতূহলী’ পাঠকের বন্ধু তিনি, যুক্তিগ্রাহ্য তর্কে উৎসাহী। তাঁর ‘মানসিক সামীপ্যের যোগ্য’ হতে না পারার সম্পাদকীয় আক্ষেপ বহুলাংশে মিটিয়েছে এই পত্রিকা, মুক্ত এই চিন্তকের জন্মশতবর্ষ স্মরণ ও উদ্‌যাপন সংখ্যার সুপ্রয়াসে। আছে কবিতীর্থ পত্রিকাতেই নব্বইয়ের দশকে লেখা তাঁর সাহিত্যকথা-আত্মকথা, এ ছাড়াও দীর্ঘ প্রবন্ধ ‘ধর্ম, নাস্তিক্য ও মানবতন্ত্র’, কবিতার খসড়া, অনুবাদ-কবিতা। দীর্ঘ দু’টি সাক্ষাৎকারে ধরা দেন ভান-ভণিতাহীন স্পষ্টবক্তা মানুষটি। আলোচনা-পুনরালোচনা-স্মৃতিকথায় অতীত ও বর্তমান প্রজন্মের শিবনারায়ণ-মূল্যায়ন, শেষাংশে তাঁকে লেখা একগুচ্ছ চিঠি, বার্ট্রান্ড রাসেল থেকে তসলিমা নাসরিন। মুদ্রিত ছবি ও শেষের তথ্যপঞ্জি, দুই-ই অমূল্য।

অনুপ্রাস (বাংলা ভাষার ইহকাল-পরকাল)
সম্পা: শিবশংকর পাল, সুমন ভট্টাচার্য
৫০০.০০

আত্মপ্রকাশেই একটি পত্রিকা কোনও নির্বিঘ্ন নিরাপদ বিষয়কে আঁকড়ে না ধরে, চেষ্টা করছে ‘ভুবনায়ন-পরবর্তী বাংলাভাষার ছাঁচটাকে’ ধরার, এবং সেই নিয়েই লিখে ও লিখিয়ে নিচ্ছে একগুচ্ছ ভাবনা উস্কে দেওয়া লেখা, সেই আরম্ভকে হেলাফেলা করা যায় না। দুই সম্পাদকের ভাবনার অভিমুখ ধরে এই পত্রিকায় সম্পাদকীয়ও দু’টি, চরিত্রেও আলাদা। তিনটি পর্বে প্রবন্ধগুলির বিন্যাসও সুভাবিত— চিন্তা ও সমাজ-পরিসরে, সাহিত্য ও শিল্প ক্ষেত্রে ভাষা আর শেষটি— ভাষা, বিভাষা ও উপভাষা। আছে রাজনীতি, বাউলগান, হাংরি আন্দোলন, উত্তর-আধুনিক বাংলা কবিতা, ছবি, সোশ্যাল মিডিয়ার বাংলা ভাষার হালহদিস, বাদ যায়নি আঞ্চলিক ভাষা, ভাষা-প্রযুক্তি, ভাষা সাম্প্রদায়িকতাও।

বনানী (কবি বিনোদ বেরা সংখ্যা)
সম্পা: অধীরকৃষ্ণ মণ্ডল
৪০০.০০

চলতি অর্থে কবি-নিসর্গ সম্পর্ক যেমন, বিনোদ বেরার সঙ্গে প্রকৃতির যোগাযোগটা ঠিক তেমন ছিল না। তাঁকে ঘর করতে হয়েছে নদী-ভাঙনের সঙ্গে, বন্যার মধ্যে কোমরজলে দাঁড়িয়ে নিজের বইপত্র আর কবিতার পাণ্ডুলিপি বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন। জল নামলে আবার ভেঙে যাওয়া ঘর সাজিয়েছেন, চাষের কাজ করেছেন, বীজ ছড়িয়েছেন, ফসল তুলেছেন। কবিতা তবু থামেনি— “অজস্র উচ্ছল প্রাণ উপচানো সুখে/ ফুটে উঠি সাদা ও সুগন্ধী ফুল প্রগাঢ় আমোদে—/ এসব শিল্পের খাদ্য।” ইতিপূর্বে বনানী কবি বিনোদ বেরাকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করেছে ১৯৯৫ সালে। এই বার সাক্ষাৎকার, পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, প্রবন্ধ ইত্যাদি নিয়ে আরও বড় রূপ পেয়েছে সংখ্যাটি। প্রচুর লেখা, নথি ও ছবিতে একে বিনোদ বেরার এক সম্পূর্ণ পরিচিতি বলাই যায়।

কোরাস (মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিশেষ সংখ্যা)
সম্পা: রাজদীপ সেন চৌধুরী
১৮০.০০

স্বতঃস্ফূর্ত মুখের ভাষায় কোনও আবরণ পরানোর চেষ্টা কবি করেননি, তাঁর কবিতা তাই জনতার, তিনি সংগ্রামের অংশীদার। তবে শুধু ভাষায় নয়, বিষয়েও ছকভাঙা কবি মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রামের কথা লিখতে গিয়ে নিসর্গ পার হয়ে চলে আসে স্থানীয় অর্থনীতি। প্রতিশ্রুত বিকাশ সেখানে হয়নি, যন্ত্রণাবিদ্ধ ছবি আঁকেন কবি।

অন্তরীপ (একাই ১০০)
১৬০.০০

সঙ্কলনের লেখকরা এই ঋজু ও বেগবান কাব্যভঙ্গি ও শিকড়ছোঁয়া বিষয়ের কথাটি বলেছেন।

প্রচ্ছদেই বাছাই ক’টি লেখার বিষয়-ইঙ্গিত তুলে দিয়েছেন ‘সম্পাদকমণ্ডলী’: ‘পত্রদ্বন্দ্ব: সেনবাবু আর রায়বাবু’, ‘অচলপত্রের সচল শ্লেষ’, ‘সত্যজিৎ সৃষ্ট শ্লেষ-সংলাপ কি বুমেরাং হয়ে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে চায়?’ ইত্যাদি। সাক্ষাৎকার থেকে স্মৃতিকথা, সত্যজিৎ-সৃষ্টির বিশ্লেষণী নিবন্ধ, আছে সবই, কিন্তু মহান শিল্পীর জন্মশতবর্ষ বলেই সভক্তি গদগদ হতে হবে, এ প্রবণতা থেকে মুক্ত তারা।

বঙ্গদর্শন
সম্পা: সঙ্গীতা ত্রিপাঠী মিত্র
৪০০.০০

সত্যজিতের সঙ্গীত থেকে অলঙ্করণ ও অক্ষরশিল্প, নায়ক, গণশত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী ছবি নিয়ে অন্যতর আলোচনা নজর কাড়ে।

কলাভবনের ‘নন্দন’ মিউজ়িয়াম নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতে গিয়ে সুশোভন অধিকারী জানিয়েছেন, “ভাবতে অবাক লাগে, কলাভবন মিউজিয়ামে রক্ষিত কিছু উল্লেখযোগ্য শিল্পকলা সংগ্রহ করেছেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং।” এ ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন সংগ্রহশালার সযত্ন বিবরণ ও ইতিহাসে সাজানো বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের মুখপত্র বঙ্গদর্শন-এর সাম্প্রতিক সংখ্যাটি, লিখেছেন বিশিষ্ট গবেষকরা।

কারুকথা: এইসময়
সম্পা: সুদর্শন সেনশর্মা
৩০০.০০

এ ছাড়াও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সত্যজিৎ চৌধুরী ও মৃণাল সেনের প্রয়াণলেখ অভীক মজুমদার, রতনকুমার নন্দী প্রমুখের কলমে।

শতবর্ষে আলোচিত হয়েছেন বিমল কর, সত্যজিৎ রায় ও সন্তোষকুমার সেনশর্মা। স্মরণ অংশে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, সুধীর চক্রবর্তী, সত্য গুহ ও বিষ্ণু দাশ নিয়ে অনেকগুলি প্রবন্ধ সঙ্কলিত হয়েছে। আছে নীরদ মজুমদার বিষয়ক একটি ক্রোড়পত্র এবং অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তকে নিয়ে একটি বিভাগ।

অনুষ্টুপ (গ্রীষ্ম-বর্ষা ও প্রাক্‌-শারদীয় যুগ্ম সংখ্যা ২০২১)
সম্পা: অনিল আচার্য
৪৫০.০০

ন্যায়-অন্যায়ের বোধ তৈরিতে ধর্মচিন্তার অবদান কতটা, তা নিয়ে মার্ক্সবাদীরা তেমন মাথা ঘামাননি। সে চিন্তা করলে পশ্চিমি নীতিতত্ত্বের পাশাপাশি, ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনের ধারাগুলি থেকে আহরিত মূল্যবোধের নিরিখে ভারতের সমাজকে চিনতে সুবিধেই হত, লিখছেন সুদীপ্ত কবিরাজ। অনুষ্টুপ-এর প্রাক্‌পূজা সংখ্যায় বার হল মার্ক্সবাদ নিয়ে তাঁর অনবদ্য সিরিজ়ের চতুর্থ পর্ব, ‘মার্কসবাদ ও স্বর্গের সন্ধান’। রাজ্যের নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দুঃসময়ের সাহিত্য নিয়ে অনিতা অগ্নিহোত্রী, কৃষক আন্দোলনের অর্থনীতি-রাজনীতি নিয়ে অশোক সরকার। রসনা ও বাগিন্দ্রিয় নিয়ে প্রাচীন ও আধুনিক দর্শনের কিছু সূত্র ধরিয়ে দিয়ে অরিন্দম চক্রবর্তী লিখেছেন জিহ্বার দর্শন, ‘জিভে প্রেম’। লেখক-চিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবীরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাপস দাস।

অন্য বিষয়গুলি:

book review abp book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy