‘টাঙ্গিয়া’ বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে ডুয়ার্সের বিভিন্ন বনবস্তিতে। তরাই-ডুয়ার্সের বনাঞ্চলে মেচ-রাভা-গারো বনবাসীরা পরম্পরাগত ভাবে ‘ঝুমচাষ’ করতেন। এই প্রথায় পরিবর্তন আসে ১৮৬৪ সালের পর, ইঙ্গ-ভুটান যুদ্ধজয়ের পরে ব্রিটিশ শাসক পুরনো বন আইন সংশোধন করে, বাণিজ্যিক বন পরিচালনার নয়া কানুন চালু করে। ডুয়ার্সে সূচনা হয় বাণিজ্যিক টাঙ্গিয়া প্রথায় বন ব্যবস্থাপনা। এই বিলিতি প্রথায় বন শ্রমিকদের কলোনি তৈরি করে দেওয়া হত। জনজাতিদের কোনও সাবেক রীতি-রেওয়াজকে বনবিভাগ বৈধতা দিত না। এমনকি বনে বৃক্ষরোপণ, বা গাছের ফাঁকে নিজেদের পছন্দমতো খাদ্যশস্য ফলানোর অধিকারও বনশ্রমিকদের ছিল না। স্বাধীনতাহীনতার গ্লানি ও বাণিজ্যিক বনায়নে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা ডুয়ার্সের বনবাসীদের টাঙ্গিয়া-বিরোধী আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়। এই বইটিতে ধরা রয়েছে সেই ইতিহাসই: ডুয়ার্সের কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের নায়ক লালশুকরা ওরাওঁ, বনবাসী-বিদ্রোহের রমেশ রায়, লেপচাদের কিংবদন্তি সোনাম শেরিং বা চারুচন্দ্র সান্যালের কথা, উত্তরবঙ্গের জনজাতিদের নিজস্ব ইতিহাস, সাংস্কৃতিক উপাখ্যান, তাঁদের সংগ্রামের কথা— যার খোঁজ মান্য ইতিহাসে কমই মেলে। লেখকের আক্ষেপ, পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আন্দোলন বা তার ইতিহাসচর্চা এখন অনেকটাই কম। ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর ভূমিকা বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
অচেনা তরাই অজানা ডুয়ার্স: গল্পকথায় পাহাড়তলির নিজ আখ্যান
কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্য
২৯৯.০০
ইন্ডিয়ানা
যে কোনও প্রামাণ্য উপন্যাসের দায়ই হল দেশ ও সমাজের তথ্যগত বিবরণ দেওয়া, তথ্যের যে ভিত্তি ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে পরিপ্রেক্ষিতের পরিবর্তন ধরাই পড়তে পারে না। অপরাজিতা দাশগুপ্তের এই বই কোনও উপন্যাস নয় নিশ্চয়ই, তবুও তাঁর স্মৃতির টুকরো আখ্যানগুলি পড়তে পড়তে মনে হয় যেন কোনও উপন্যাসের ছেঁড়া ছেঁড়া অধ্যায় পড়ছি। কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের জটিলতা বা নিয়ত পরিবর্তনশীলতা ছেয়ে আছে সেখানে, আবার দশকের পর দশকব্যাপী সময়ের যে বিস্তার তারও তথ্যনির্মাণ বোনা আছে। কবিতার আবেগঘনতা দিয়ে এমন এক গদ্য নির্মাণ করেন লেখক যে তাঁর ডকুমেন্টেশন শিল্পসদৃশ শিষ্ট চেহারা পায়। তাঁর ফেলে আসা জীবনের কাছে-দূরের প্রায় বিস্মৃত হয়ে হারাতে থাকা মুহূর্তগুলি যে খাপছাড়া স্মৃতিকথনের ভঙ্গিতে ভর করে এগোয়, সেখানে ক্রমাগত জড়ো হতে থাকে পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ, বিদেশ, কেমব্রিজ, কলকাতার শহরতলি, মফস্সল, প্রেসিডেন্সি। কখনও বা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং থেকে এই শহরের নবনীতা দেব সেন, বাংলা ভাষায় প্রাণিত শিখ ট্যাক্সিচালককে নিয়ে লেখকের মুগ্ধ বিস্ময়। কখনও আবার মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের আলো-আঁধারি, সম্পর্কের মাধুর্যের মধ্যে ক্লিন্নতা, চিরবসন্তের পাশাপাশি কর্কশ শীতের বসবাস: ‘পিতামহ’, ‘আমার বড়োপিসি’, ‘সামান্য জীবন’, ‘দুই বোনের গল্প’... চারটি লেখাই চমৎকার, তবে তৃতীয়টি অনবদ্য, ফিরে ফিরে পড়বার মতো।
এই যে পথের এই দেখা
অপরাজিতা দাশগুপ্ত
১৫০.০০
থীমা
নামে ‘নিউ হিস্ট্রি’ থাকলেও কতটা ‘নিউ’ হতে পারে ভারতের ইতিহাস, এই সংশয় নিয়ে পাঠক এ বই খুলবেন। এবং আবিষ্কার করবেন, দুই মলাটে ভারত ভূখণ্ডের সাড়ে চারশো কোটি বছরের কাহিনি। পাহাড়, মাটি, নদীর উৎপত্তি থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদীর দেশ। মাঝে ভারতীয় সভ্যতার একের পর এক পর্ব, যুগ, বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। হরপ্পা ও বৈদিক সভ্যতা, মহাবীর-বুদ্ধ, মৌর্য-গুপ্ত সাম্রাজ্য, সুলতানি ইতিহাস, মোগল যুগ, দক্ষিণ পশ্চিম পূর্ব ভারতের নানা রাজত্ব, ব্রিটিশ ভারত, স্বাধীনতা সংগ্রাম, গান্ধী নেহরু সুভাষ জিন্না রবীন্দ্রনাথ ইকবাল— সকলেই নিজ নিজ গুরুত্বে উদ্ভাসিত ৪৫০ পৃষ্ঠার এই সহজপাঠ্য বইতে। সবটা নিশ্চয় একই গভীরতায় বলা যায় না, সেটা লক্ষ্যও ছিল না। এ বই সেই ‘বুদ্ধিমান সাধারণ পাঠক’-এর জন্য লেখা, যিনি অতীতকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সঙ্গে মেলাতে চান, এক জন ইতিহাসমনস্ক নাগরিক হতে চান। তাই অশোকের প্রত্নলিপির সঙ্গে সহজেই থাকে কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাটের ছবি ও কথা, জেমস প্রিন্সেপ-এর অবদান মনে রেখে। বেদ-উপনিষদ প্রসঙ্গে আসে ডিএনএ অ্যানালিসিসের আলোচনা। আক্ষরিক অর্থে ‘নিউ হিস্ট্রি’ বইটি মনে করিয়ে দেয়— রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়ের কথায়— ইতিহাস শুধু সারস্বত চর্চার নয়, সাধারণ পাঠকেরও চর্চার বিষয়। বিশেষ প্রাপ্তি: স্বল্প-দেখা বা না-দেখা ছবির সম্ভার, সঙ্গে তথ্য-ভরা ক্যাপশন।
আ নিউ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া: ফ্রম ইটস অরিজিনস টু দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি
রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়, শোবিতা পাঞ্জা, টোবি সিনক্লেয়ার
৯৯৯.০০
আলেফ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy