Advertisement
E-Paper

review: ভারতীয় হিসেবে নিজেদের চিনব কোন পরিচয়ে

লেখক যে হেতু সমকালীন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, ফলে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালের কথা বারে বারেই ফিরে এসেছে এই বইয়ে।

অমিতাভ গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৮:৪৫
Share
Save

দ্য ব্যাটল অব বিলঙ্গিং: অন ন্যাশনালিজ়ম, পেট্রিয়টিজ়ম, অ্যান্ড হোয়াট ইট মিন্‌স টু বি ইন্ডিয়ান
শশী তারুর
৭৯৯.০০

আলেফ, রূপা

জাতীয়তাবাদ কী ও কয় প্রকার, এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে বিভিন্ন গোত্রের জাতীয়তাবাদের কথা আলোচনা করে শশী তারুর শেষ অবধি সেগুলোকে দুটো শ্রেণিতে ভেঙেছেন— এক, এথনোন্যাশনালিজ়ম বা জন্মসূত্রে অর্জিত পরিচিতির ভিত্তিতে নির্ধারিত জাতীয়তাবাদ, যার মধ্যে ধর্ম-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদও রয়েছে; এবং দুই, সিভিক ন্যাশনালিজ়ম, যেখানে ধর্ম-জাতি-ভাষা-বর্ণ দ্বারা জাতীয়তাবাদ সংজ্ঞায়িত হয় না, হয় গণতান্ত্রিক দেশের স্বাধীন নাগরিকের স্বেচ্ছা ও সক্রিয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে। বলা বাহুল্য যে, এই বিভাজন তারুরের নিজস্ব নয়— বিশেষত ভারতীয় জাতীয়তাবাদ নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা বহুলাংশে এই বিভাজনকে ধরেই হয়েছে, এবং এই বিভাজন দিয়ে আসলে ভারতকে বোঝা যায় কি না, সেই সংশয়ও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কিন্তু, আপাতত সেই তর্কে ঢোকার প্রয়োজন নেই।

বইটিকে মোটামুটি তিন ভাগে ভেঙে পড়া যায়— প্রথম পর্বে তারুর দেখিয়েছেন, কী ভাবে গড়ে উঠেছে জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন (প্রতিস্পর্ধী) তত্ত্ব, এবং কী ভাবে জাতীয়তাবাদের ধারণা রাজনীতির বাস্তব জমিতে ডালপালা মেলেছে। দ্বিতীয় পর্বের আলোচ্য, বর্তমানের ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণায় কী ধরনের বিপদ লুকিয়ে আছে। তৃতীয় পর্বটিতে তারুর আলোচনা করেছেন এক উত্তরণের পথ— সংখ্যাগুরুবাদী জাতীয়তাবাদের গ্রাস থেকে ভারতকে কী ভাবে উদ্ধার করা যায়।

তারুর জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটাকে ধরেছেন অনেক বড় ক্যানভাসে— এতটাই বড় যে, মনে হয় দুই মলাটের মধ্যে একাধিক বই ঢুকে পড়েছে। তাতে একটা মস্ত লাভ আছে। জাতীয়তাবাদের চলতি তর্কগুলোকে মোটামুটি এক ঝলকে দেখে নিতে পারেন আগ্রহী পাঠক। কিন্তু, ক্ষতিও কি নেই? এক সঙ্গে অনেক কিছু আলোচনা করতে গেলে কোনও প্রশ্নেরই খুব গভীরে ঢোকা হয়ে ওঠে না। তারুরও সেই ফাঁদ এড়াতে পারেননি পুরোপুরি। তিনি সিভিক ন্যাশনালিজ়ম-এর পক্ষে যুক্তি সাজিয়েছেন, এবং দেখিয়েছেন, স্বাধীন দেশের যাত্রা যে অভিমুখে শুরু হয়েছিল, ভারত কী ভাবে ক্রমেই সে পথ থেকে সরে এল।

রাজনীতিকে বাদ দিয়ে জাতীয়তাবাদের আলোচনা হয় না। এবং, লেখক যে হেতু সমকালীন রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, ফলে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালের কথা বারে বারেই ফিরে এসেছে এই বইয়ে। সেখানেই মুশকিল হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর পার্শ্বচররা খুব রকম প্রকট ও প্রতিপত্তিশালী, তাতে সন্দেহ নেই— কিন্তু তাঁদের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদকে দেখতে গেলে আলোচনাটা আটকে থাকে তুলনামূলক ভাবে একটা নিচু স্তরে। একটি অধ্যায়ে যেমন গাঁধীর হিন্দুধর্ম নিয়ে আলোচনা করেছেন তারুর। কিন্তু, সেখানে বারে বারেই উঁকি দিয়ে যান নরেন্দ্র মোদী। সে প্রসঙ্গে তারুর যে কথাগুলো বলেন, সেগুলো কি তাঁর পাঠকের একান্তই জানা নয়? সেই পাঠককে তিনি নিজেই চিহ্নিত করে দিয়েছেন বইয়ের একটি অধ্যায়ে— উদারবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গ্রহণশীল, এক কথায় নেহরু-যুগের ভারতের প্রতিনিধি এই বইয়ের পাঠক। সেই পাঠক তো জানতে চাইবেন, যাঁর রাজনৈতিক বক্তব্যে আগাগোড়া হিন্দুধর্মের উল্লেখ ছিল, সেই গাঁধী কী ভাবে এড়িয়ে চললেন হিন্দুত্বের পথ, আজীবন? তারুর এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই প্রসঙ্গান্তরে চলে গেলেন।

বইটির তৃতীয় পর্বে, তারুর যেখানে উত্তরণের পথ খুঁজেছেন, সেখানে বরং অনেক জোরালো ভাবে খোঁজা যেত নরেন্দ্র মোদীদের হিন্দুত্বকে ঠেকানোর পথ। তারুর বলেছেন, জাতীয়তাবাদ নিয়ে যুদ্ধ নিরন্তর— সে যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ জয়ী হবে, তার পূর্বাভাস করা অসম্ভব। কিন্তু, সে যুদ্ধ কী ভাবে লড়তে হবে, সেই রাস্তা খোঁজা তো অসম্ভব নয়। এক বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কথা উদ্ধার করে তারুর জানিয়েছেন, সমাধানটি নিতান্ত ‘মেটাফিজ়িক্যাল’ হলে চলবে না, তাকে হতেই হবে রাজনৈতিক। সত্যিই, বাস্তব রাজনীতির ময়দানে যে লড়াই লড়তে হচ্ছে, শুধু দার্শনিক স্তরে সে লড়াই জেতা যায় কি? কিন্তু, তারুর শেষ পর্যন্ত সেই রাজনৈতিক অস্ত্রটির খোঁজ করলেন না। গণতন্ত্র, সংবিধানের অক্ষর ও মূল সুরের প্রতি আনুগত্যের মতো কিছু কথা বলে ছেড়ে দিলেন। এই কথাগুলো যে ভুল, তা নয়— কিন্তু, আবারও, তারুরের পাঠক এই কথাগুলো বিলক্ষণ জানেন। প্রত্যাশা ছিল নতুন পথের সন্ধানের।

এহেন কিছু খামতি সত্ত্বেও তারুরের বইটি জরুরি। শুধু এই কারণেই নয় যে, বইটি ভারতের রাজনীতির এক সন্ধিক্ষণের ধারাবিবরণী; এই কারণেও যে, বইটি এক জন সক্রিয় রাজনীতিকের লেখা— ফলে, তত্ত্বের গজদন্তমিনারের পরিবর্তে এই আলোচনা বাস্তবের জমিতে পৌঁছবে, সেই সম্ভাবনা বেশি। যিনি প্রকৃত অর্থে নেতা, এই সেতু নির্মাণ তাঁর কর্তব্য তো বটেই। আরও একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন— তারুর চেষ্টা করেছেন, জাতীয়তাবাদের এই তর্কে যেন তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিরপেক্ষতাকে ঢেকে না দেয়। বহু ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন তিনি। তবে, সব ক্ষেত্রে পারেননি, সেটাও সত্যি। এ কথাও স্বীকার করার যে, বিজেপির কল্যাণে ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দুত্ব যে ভঙ্গিতে মান্যতা অর্জন করেছে, এবং যে ভাবে বহু বার কংগ্রেস পা দিয়েছে সেই হিন্দুত্বের চোরাবালিতে, তার থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনও পথের কথা তারুর শেষ পর্যন্ত বললেন না। বরং, খানিক হলেও অস্বীকার করলেন এই বাস্তব প্রবণতাকে। তারুরের পাঠককে এই চ্যুতি পীড়া দেবে।

book review abp book review

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।