E-Paper

আসলে ভাষাকেই বুঝতে চাওয়া 

বর্ণসংযুক্তির প্রসঙ্গে লেখক দেখিয়েছেন, লিপিগত ভাবে সর্বাধিক চারটি বর্ণবিশিষ্ট যুক্তব্যঞ্জন বাংলায় পাওয়া যায়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সমীর কর্মকার

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫২
Share
Save

বোধশব্দ থেকে প্রকাশিত নীলাদ্রিশেখর দাশের বাংলা যুক্তব্যঞ্জনবর্ণ: আভিধানিক বিশ্লেষণ শীর্ষক বইটি বাংলায় গবেষণাধর্মী ভাষাচর্চার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। কথ্য ও লিখিত বাংলায় ৪৪৩টি যুক্তব্যঞ্জনের ব্যুৎপত্তি, গঠন, উচ্চারণ ও ব্যবহারের অনুপুঙ্খ আলোচনা রয়েছে বইটিতে। ভাষা নিয়ে উৎসাহী সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গবেষক, ছাত্রছাত্রী, সকলেরই বৌদ্ধিক ক্ষুন্নিবৃত্তির কাজে বইটি সহায়ক হবে বলে মনে হয়।

যুক্তাক্ষরের বিষয়টিকে লেখক ধ্বনিগত এবং লিপিগত, এই দুই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করেছেন। লিপিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তব্যঞ্জনগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছেন: ক্ব বা দ্ব-এর মতো বর্ণগুলিকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ যুক্তব্যঞ্জন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। প্য বা ষ্ণ-এর মতো বর্ণগুলিকে আংশিক স্বচ্ছ, এবং ক্ষ, হ্ম, ঙ্গ ইত্যাদিকে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ যুক্তব্যঞ্জন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ধ্বনিগত দিক থেকেও কি অনুরূপ একটি শ্রেণিবিন্যাসের প্রস্তাবনা হাজির করা যেত না? এ রকম একটা প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক ভাবেই যে কোনও চিন্তাশীল পাঠকের মনে উঁকিঝুঁকি দেবে। যুক্তব্যঞ্জনের ধ্বনিগত ও লিপিগত উপস্থাপনের মধ্যে যে এক ধরনের অসামঞ্জস্য আমরা লক্ষ করি তা বহুবিধ প্রশ্নের জন্ম দেয়— যার মধ্যে অন্যতম একটি প্রশ্ন হল: লিখিতরূপ কি কথ্যরূপের অনুসারী হবে? ‘অক্ষ’ লিখব? নাকি, ‘অক্খ’? উল্টো প্রশ্নটাও হয়তো বা প্রাসঙ্গিক এখানে: উচ্চারণ কি লেখাকে অনুসরণ করবে? কথ্যরূপের প্রাধান্য স্বীকার করলে যেমন শব্দের ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনা রয়েছে, ঠিক তেমনই লিখিতরূপের প্রাধান্য একটি ভাষার সমসাময়িক প্রবণতাকে অবদমিত করার ক্ষমতা রাখে।

বাংলা যুক্তব্যঞ্জনবর্ণ: আভিধানিক বিশ্লেষণ

নীলাদ্রিশেখর দাশ

৬৮০.০০

বোধশব্দ

বর্ণসংযুক্তির প্রসঙ্গে লেখক দেখিয়েছেন, লিপিগত ভাবে সর্বাধিক চারটি বর্ণবিশিষ্ট যুক্তব্যঞ্জন বাংলায় পাওয়া যায়। যুক্তব্যঞ্জনগুলির প্রসঙ্গে বর্ণসংযুক্তির আলোচনায় ক্রমানুসারে ব্যবহৃত বর্ণগুলি বাংলা ধ্বনি এবং লিপিতত্ত্বের কোন কোন সূত্রকে নির্দেশ করে সে সংক্রান্ত বিশদ আলোচনার একটা অবকাশ রয়ে গেছে— যা ভবিষ্যৎ গবেষণার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এই সংক্রান্ত একটা দিশা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক, আধুনিক ভাষাতত্ত্বের ফোনোট্যাক্টিক্স, সিকোয়েন্স রিডানডেন্সি রুল, মর্ফিম স্ট্রাকচার রুল-এর মতো বিষয়গুলি উত্থাপন করে। শব্দে যুক্তব্যঞ্জনের বিন্যাস আলোচনায় এমন কিছু উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যা হয় স্বল্পপরিচিত নয়তো অপরিচিত। যেমন, ‘ক্ষ্রৌং’, ‘মর্ন্তপ’। লক্ষণীয়, ‘ফ্যাল্না’, ‘চাম্চা’র মতো শব্দগুলির লিখিত রূপে অক্ষর হিসেবে যুক্তব্যঞ্জনের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গেলেও, এদের সংশ্লিষ্ট কথ্যরূপগুলিতে যুক্তব্যঞ্জনবর্ণগুলি বাংলায় দল বা সিলেবল গঠনের নিয়মানুযায়ী অনুপস্থিত।

যুক্তবর্ণের আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক ভাষাকে ব্যাপক অর্থে বুঝতে চেয়েছেন। কথ্যরূপের পাশাপাশি যেমন লিখিতরূপের দিকে আলোকপাত করেছেন, ঠিক তেমনই সমসাময়িক উপাত্তের সঙ্গে আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে ঐতিহাসিক উপাত্তও। বাংলার নিজস্ব যুক্তব্যঞ্জনের আলোচনায় সংস্কৃত থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এবং বিদেশি শব্দ থেকে ঋণীকৃত যুক্তব্যঞ্জনেরও স্থান সঙ্কুলান হয়েছে। যুক্তব্যঞ্জনগুলির পরিসংখ্যানগত অবস্থা নিঃসন্দেহে একটা বাড়তি পাওনা। আলোচনার বিভিন্ন অভিমুখগুলি একত্রে বাংলার যুক্তব্যঞ্জনের আভিধানিক বিশ্লেষণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নজরে

গ্রামের মূল সড়কের পাশে জুনিয়র স্কুল। তার পিছনে খেলতে গিয়ে এক দিন রানার ফিরতে দেরি দেখে বাড়ির লোক উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজাখুঁজি করতে করতে পচাকে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বন্ধুর খবর জানে কি না। পচা জবাব দিয়েছিল, “রানা দুনিয়ার ইশ্‌কুলে হারিয়ে গেছে।” সে ‘জুনিয়র’ বলতে পারত না, বহু বার শুধরে দিলেও ওই ‘দুনিয়ার’ই বলত।

এক্সপ্রেসওয়ের পাশে রকমারি দোকান দিয়ে ঘেরা অঞ্চলটার ভিতরে বাজার বসে। যখন শুরু হয়েছিল, বিরাট কিছু তাড়া থাকত না কারও, অনেকেই আসতেন একটু বেলা করে, আড্ডা-গুলতানির ফাঁকে কেনাকাটা, তারই মধ্যে হোমিয়োপ্যাথ মহম্মদ আলীর কাছে রোগীর ভিড়। এই হল আলসে বাজার। তার পরে জীবনের গতি বেড়েছে, নামটা পাল্টায়নি।

আর রবার গাছতলা? বাজারেই, ভগবানদার চপের দোকানের সামনে বিশাল গাছের নীচে গোল বেদিতে সংসদীয় রাজনীতির ব্যবহার, শ্রমিক শ্রেণির বাস্তব নেতৃত্বের সমস্যা, গণসংস্কৃতির চেহারা, দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটি, পার্টি ইউনিটি, লিবারেশন, চিন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, লাওস, পেরু, মহাদেব মুখার্জি...

দুনিয়ার ইশ্‌কুল, আলসে বাজার, রবার গাছতলা

অভিজিৎ সেনগুপ্ত

২০০.০০

প্রতিক্ষণ

মোট চোদ্দোটি লেখা। গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের কাঁচরাপাড়ার কিছু দৈনন্দিন ছবি, সবই আঁকা স্বল্প পরিসরে, নির্মেদ নির্মোহ গদ্যে। পাল্টে যেতে থাকা সমাজজীবনের পাশাপাশি তার সঙ্গে নিবিড় ভাবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক পালাবদলের খবরও মেলে ছোট্ট বইটির পাতায় পাতায়, সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা মানুষেরা উঁকি দিয়ে যান। তাঁদের অনেকে এক সময় উন্নয়নে ভিড়ে যান, কেউ একা লড়ে যান শেষ অবধি, কেউ সত্তরের শহিদদের নিয়ে লেখা কবিতা পড়ে হাউহাউ কাঁদেন। আর, গোটা পাড়াটাকে কাঁথা বোনার সুতোয় সেলাই করতে করতে প্রবীণা মানুষটি শিশুদের বলে চলেন: “পাশ করবা... পাশ করবা... ভাল হবে।”

বড় যত্নে লেখাগুলি লিখেছেন অভিজিৎ সেনগুপ্ত। সঙ্গে পাতায় পাতায় নিজের হাতে আঁকা ছবি। জীবনের ছবি। যে জীবন অনেকখানিই গিয়েছে হারিয়ে, বাকিটুকুও বুঝি শেষ হয়ে এল। তবু, “আলসে বাজারের আলস্য নিয়ে আজও কিছু বন্ধু বাজারের ভিতর তরজায় মাতে। গল্প ফুরায় না... ছায়া সরে-সরে যায়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

book review Bengali Language

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।