প্রতীকী ছবি।
এক দশক আগে নাট্যজন, অনুবাদক, গবেষক, কবি, ভাষাবিজ্ঞানী শিশিরকুমার দাশের (১৯৩৬-২০০৩) চিঠিপত্রের এক ভান্ডারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে সবচেয়ে বেশি চিঠি ছিল শঙ্খ ঘোষের লেখা। ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ থেকে ১০ অগস্ট ১৯৮০ অবধি শিশিরকুমারকে লেখা শঙ্খ ঘোষের পঁচিশটি চিঠি সঙ্কলিত হয়েছে এই বইয়ে। আর শঙ্খ ঘোষকে লেখা শিশিরকুমারের কয়েকটি পত্র তো পূর্বেই সঙ্কলিত হয়েছে পুরোনো চিঠির ঝাঁপি বইটিতে।
শঙ্খবাবুর অনুরোধে অ্যারিস্টটলের পোয়েটিকস-এর বঙ্গানুবাদ করেছিলেন শিশিরকুমার। ২২ জুলাই ১৯৭৪-এর চিঠিতে আছে এ সংক্রান্ত শঙ্খ-আহ্বান: “একটা কাজের কথা অনেক দিন ধরে তোমাকে লিখব ভাবছি। অ্যারিস্টটলের পোয়েটিকস-এর একটি ভালো অনুবাদ কি দরকার নয় বাংলায়? এবং এর জন্য কি এমন একজন লোকের দরকার নয় যে সাহিত্য বোঝে; বাংলা জানে, গ্রীক জানে? এবং সেরকম লোক তোমাকে ছাড়া আর পাওয়া যাচ্ছে কোথায়?”
কোনও চিঠিতে কবি ও তাঁর পরিবারের যাপনচিত্র ফুটে উঠেছে, কোথাও আবার প্রকৃতির অনুষঙ্গ এসেছে। ১৯৭৪ সালের ২৯ মার্চ তারিখের চিঠিতে শঙ্খবাবু লিখেছেন, “কলকাতায় বর্ষা নেমে গেছে। চৈত্রকে চৈত্র বলে চেনা যায় না আর, একেবারে আষাঢ়ের চেহারা ধরেছে আকাশ।”
শঙ্খ ঘোষ: অগ্রন্থিত পত্রাবলি
সঙ্কলন ও সম্পা: ভূঁইয়া ইকবাল
৪০০.০০
বাংলাদেশি টাকাজার্নিম্যান বুকস, ঢাকা
আর এই পত্রগুচ্ছে পাঠক রসিক শঙ্খ-চিত্তের বহুধা প্রকাশ পেয়ে আমোদিত হবেন নিঃসন্দেহে। ১৯৭৪ সালেরই ৪ নভেম্বর শিশিরকুমারকে লেখা চিঠিতে ‘শঙ্খদা’ স্বাক্ষর করে নিজের নাম নিয়ে হাস্যপরিহাসে করেছেন কবি: “সম্প্রতি একটি পত্রিকায় সাব্যস্ত হয়েছে যে, শঙ্খ আমার ছদ্মনাম; আসল ব্যাপার অন্য কিছু; ফলে এখন চিঠির শেষে কী যে লিখি এই নিয়ে খুব ভাবনা!” শিশিরকুমার দাশের ‘প্রফেসর’ পদপ্রাপ্তির সংবাদে ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে শঙ্খ ঘোষ লিখলেন, “ইতিমধ্যে কি তোমার পায়াভারী হয়েছে? দিন কয়েক আগে যাদবপুরে একজন বললেন যে, শিশির এখন প্রফেসর।”
১৯৭৮-এ শান্তিনিকেতন থেকে শঙ্খ ঘোষ লিখছেন: “ওপরের ঠিকানা দেখে বুঝতে পারছ, শান্তিনিকেতনে আমি এসে গেছি। কিন্তু এসে একটু বিপন্নই লাগছে। শান্তিনিকেতনে বাস্তবিকই খুব শান্তির প্রভাব, কেউ কাউকে কিছুমাত্র বিরক্ত করে না। সন্ধে ছ-টা থেকে নিঃঝুম হয়ে যায় পল্লি। আয়ওয়ায়, দিল্লিতে, ঢাকায় রাত তিনটের আগে ঘুমোতে পেরেছি কম দিনই। তেমন কোনো সুখ-স্মৃতিও বহন করতে পারব বলে মনে হয় না— এখানে আটটার সময়ে ঘুমিয়ে পড়লে বাধা দেবার কেউ নেই।”
আছে দুঃখ, মৃত্যুও। ১৯৭৯’র ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখের চিঠিতে কবি লিখেছেন, “চারদিকে একটা মৃত্যুর দাপটের মধ্যে আছি। শান্তিনিকেতন থেকে ফিরেই গেলাম দীপেনের শ্মশানে, এক মাস না পেরোতেই কমলবাবু।” আর ১০ অগস্ট ১৯৮০-তে লেখা এই বইয়ের শেষ চিঠির শেষাংশেও আছে মহানায়ক উত্তমকুমারের প্রয়াণোত্তর শোকার্ত কলকাতার কথা: “কলকাতা এখনো উত্তমকুমারের শোক সামলে উঠতে পারেনি।”
অগ্রন্থিত পঁচিশটি চিঠি লেখক ও প্রাপক, উভয়ের সম্বন্ধে গবেষণাতেই সহায়ক হবে। তার চেয়েও বড় কথা, এই বই পাঠকের কাছে আদৃত হবে এক বিরল হৃদয়পুস্তক-রূপে, যেখানে বন্ধুগৃহের চায়ের জন্য কাতরতা স্মৃতির পেয়ালা পূর্ণ করে অমলিন অক্ষরে: “সুস্মিতা কি চা তৈরি করতে গিয়ে এক কাপ বেশি করে ফেলছে, ভুলে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy