আরও তলিয়ে গেল টাকার দাম। সোমবার ডলারকে এই প্রথম ৮৭ টাকা পার করিয়ে তা নামল নজিরবিহীন তলানিতে। এক ডলার এই প্রথম হয়েছে ৮৭.১৭ টাকা। আগের দিনের থেকে ৫৫ পয়সা বেশি। এক সময় অবশ্য ৬৭ পয়সা উঠে গিয়েছিল। টাকার দামে এই ধস আশঙ্কা বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের। প্রশ্ন উঠছে, আর কতটা দুর্বল হবে ভারতীয় মুদ্রা? নতুন বছরের গোড়াতেই ৮৬-র পরে ৮৭-র মাইলফলকও পেরিয়ে গেল ডলার। কতটা দ্রুত নামবে পরের ধাপ?
কেন্দ্র অবশ্য এর পরেও টাকার পতন নিয়ে আশঙ্কা উড়িয়েছে। এ দিন অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডের আশ্বাস, চিন্তার কিছু নেই। মুদ্রার অস্থিরতা সামলাচ্ছে আরবিআই। শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি লগ্নি বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই বিনিময় মূল্য চাপের মুখে পড়ছে জানালেও তাঁর দাবি, টাকার অবাধ লেনদেন হয়। এ ক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণ বা স্থায়ী দাম প্রযোজ্য নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলার চাঙ্গা হওয়ায় টাকা বহু দিন ধরেই জমি হারাচ্ছে। দেশে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির ক্রমাগত শেয়ার বিক্রিও অন্যতম কারণ। তবে এ দিনের ধস মূলত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক-নীতির ফল। তিনি কানাডা এবং মেক্সিকোর পণ্যে ২৫% এবং চিনের ক্ষেত্রে ১০% আমদানি শুল্ক বসাতেই ফের বাণিজ্য যুদ্ধের উদ্বেগ কাঁপুনি ধরায় সারা বিশ্বে। যে কারণে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারও নেমেছে। এখানে সেনসেক্স প্রায় ৩১৯ পয়েন্ট পড়ে হয় ৭৭,১৮৬.৭৪।
পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের দাবি, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা ও ট্রাম্পের শুল্ক-সিদ্ধান্ত সব উন্নয়নশীল বাজারের মুদ্রাকেই দুর্বল করেছে। আইসিএআই-এর পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্তের বক্তব্য, ট্রাম্পের আগ্রাসী পদক্ষেপের পাশাপাশি ভারতের বাজেটও দায়ী। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে তা আকর্ষণ করতে পারেনি। ফলে তাদের শেয়ার বিক্রি চাহিদা বাড়িয়েছে ডলারের। অনির্বাণ এটাও বলেন, ‘‘আমেরিকা যত নিষেধাজ্ঞা চাপাবে, অন্যান্য দেশের মুদ্রার সাপেক্ষে তত শক্তিশালী হবে ডলার। টাকার পতনও জারি থাকবে। এটা আমদানিকারীদের পক্ষে দুশ্চিন্তার। ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে পারে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)