আটকানো যাচ্ছে না টাকার দামের পতন। সোমবার আরও তলিয়ে গিয়ে রেকর্ড নীচে নামল ভারতীয় মুদ্রা। ৫৮ পয়সা বেড়ে ডলার এই প্রথম পৌঁছল ৮১.৬৭ টাকায়। গত চারটি লেনদেনে ডলার উঠেছে মোট ১৯৩ পয়সা। আমেরিকা ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোর পরেই বৃহস্পতি ও শুক্রবার যথাক্রমে তা ৮০ এবং ৮১ টাকা ছাড়ায়। এখন ৮২ টাকা হওয়া সময়ের অপেক্ষা, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
এ নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ফের আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। কী ভাবে তা মূল্যবৃদ্ধিকে আরও চড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলবে, সোমবার তা টুইটে ভিডিয়ো দিয়ে ব্যাখ্যা করেন কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাটে। নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দফায় শপথ নেওয়ার দিনে ৫৮.৬২ টাকার ডলারের দামের সঙ্গে টানেন তুলনাও। কটাক্ষ করেন টাকার উত্থান নিয়েই পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে তৎকালীন বিরোধী নেতা এবং গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদীর করা সমালোচনাকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, দেশবাসীর আর্থিক দুর্বলতাকেই তুলে ধরছে টাকার দর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চোখ বুজে আছেন।
টাকার পতনে আশঙ্কা
• বিশ্ব বাজারে তেলের দর কমলেও, টাকা তলানিতে নামায় তার সুবিধা নিতে পারবে না ভারত।
• তেল-সহ সমস্ত পণ্যের আমদানি খরচই বাড়বে। ফলে আরও চড়তে পারে মূল্যবৃদ্ধি।
• রফতানির থেকে আমদানি মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় চওড়া হবে বাণিজ্য ঘাটতি।
• টাকাকে বাঁচাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে বাজারে ডলার ছাড়তে হওয়ায় কমছে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার।
• মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে বর্ধিত সুদে ঋণের চাহিদা ধাক্কা খাবে তার খরচ বাড়ায়।
• সংস্থার লগ্নির আগ্রহ কমবে।
• লগ্নি না বাড়লে তৈরি হবে না কাজ। যা চাহিদাকে বাড়তে দেবে না।
• বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি তুলে নিলে পড়বে সূচক। ধাক্কা খাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলছেন, চড়া ডলারের জেরে ভারতের আমদানির খরচ বাড়ায় ওষুধ, ভোজ্যতেল, গাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশের মতো বহু পণ্যের দাম বাড়বে। আমদানিকৃত কাঁচামালে তৈরি জিনিসও আরও দামি হবে। আখেরে সমস্যায় পড়বেন সাধারণ রোজগেরে মানুষই। তাঁর আশঙ্কা এর ফলে বাজারে চাহিদা কমতে পারে, যা বিরূপ প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে।
মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দীর আক্ষেপ, ‘‘বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল সস্তা হলেও দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম হয়তো কমানো হবে না ডলারকে দেখিয়েই। সব মিলিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটা বৃদ্ধির আশঙ্কা।’’ পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের মতে, টাকার দাম পড়ায় বিদেশে পড়াশোনা এবং ভ্রমণের খরচও বাড়ছে। অর্থনীতির ক্ষতি করে চাহিদা কমবে এ ক্ষেত্রেও। একাংশের দাবি, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পও আমদানির খরচ বাড়ায় বিপদে পড়বে।