ফাইল চিত্র।
অনেক পাড়াতেই এখন একই সঙ্গে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ও এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক এ বার ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তা হলে কি আর একই পাড়ায় ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক দু-দু’খানি শাখা রাখবে? উদ্বৃত্ত কর্মীদের কী হবে? তাঁদের কি স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য করা হবে?
মোদী সরকার দশটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মিশিয়ে চারটি ব্যাঙ্ক তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ব্যাঙ্কের হাজার হাজার কর্মীদের মধ্যে এই দুশ্চিন্তা এখন চরমে। যদিও সংযুক্তিকরণের কথা ঘোষণা করে অর্থসচিব রাজীব কুমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এর ফলে কোনও কর্মীর চাকরি যাবে না। কিন্তু তাতেও উদ্বেগ কাটেনি কর্মীদের। কারণ, ২০১৭-র ১ এপ্রিলে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে পাঁচটি সহযোগী ব্যাঙ্ক ও মহিলা ব্যাঙ্ক মিশিয়ে দেওয়ার সময়েও অর্থ মন্ত্রক এবং স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের আশ্বাস ছিল, কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে না। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্কে ১০,৫৮৪ জন কর্মী কমিয়ে ফেলা হয়। তার পরেও কর্মী কমানোর প্রক্রিয়া চলছে। গত দু’বছরে মোট শাখার সংখ্যাও ২৪ হাজার থেকে ২২ হাজারের ঘরে নেমে এসেছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এমনিতেই গাড়ি শিল্পে মন্দার জেরে দশ লক্ষ কর্মীর চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিতে ঝিমুনির জেরে আরও অনেক ক্ষেত্রেই রুটিরুজি নিয়ে দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে। এর মধ্যে ব্যাঙ্কের কর্মীদের মধ্যেও চাকরি যাওয়ার আতঙ্ক ছড়ালে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সেই কারণে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া দ্রুত লয়েই সেরে ফেলা হবে। কিন্তু তার পরে ব্যাঙ্কের শাখাগুলি মিশিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা হবে না।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘যেখানে একেবারে পাশাপাশি বা একই বাড়িতে দু’টি শাখা রয়েছে, আপাতত সেগুলিই মিশিয়ে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রেও যে শাখা অন্য শাখার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার লাইসেন্স ছাড়া হবে না। বরং তা অন্য কোথাও শাখা খোলার কাজে লাগানো হবে।’’ মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, এর আগে বরোদা ব্যাঙ্কের সঙ্গে দেনা ও বিজয়া ব্যাঙ্ক মেশানো হয়েছে। তখন ৯০০ শাখা কমানোর সিদ্ধান্ত হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র এক ডজন শাখা কমানো হয়েছে।
তবে, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের পাশাপাশি শাখার সংখ্যা না-কমালে ব্যবসায়িক লাভ হবে না বলেই জানাচ্ছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। ফলে আজ না হয় কাল একটি শাখার সঙ্গে আর একটি মিশিয়ে দেওয়া হবেই। ব্যাঙ্কের অফিসার থেকে কর্মীদের প্রশ্ন, তখন কিছু কর্মীকে বদলি করা হবে, বাকিদের কী হবে? সর্বভারতীয় ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক সৌম্য দত্ত বলেন, ‘‘পরে যখন এক ব্যাঙ্কের সঙ্গে অন্য ব্যাঙ্কের শাখা মিশিয়ে দেওয়া হবে, তখন উদ্বৃত্ত কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য করা হবে। সরকার হয়তো স্বেচ্ছাবসরকে চাকরি যাওয়া বলবে না। কিন্তু আসলে সেটা চাকরি যাওয়াই। উপরতলাতেও সমস্যা হবে। বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছোট, দুর্বল ব্যাঙ্কের অফিসাররা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে যাবেন।’’ একটি শাখা বন্ধ হলে তার ঠিকা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মীদেরও কাজে টান পড়বে বলে তাঁর দাবি।
ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ইতিমধ্যেই চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে সংযুক্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্মীরা চাকরি হারাবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি আজ কলকাতায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক স্পষ্ট করে দিয়েছে, সংযুক্তিকরণের জন্য এক জনেরও চাকরি যাবে না। বরং দেশের অর্থনীতির উন্নতি হবে। মমতার কাজই হল কেন্দ্রের বিরোধিতা করা।’’ স্মৃতির দাবি, মমতার অবস্থান নিয়ে কেন্দ্র চিন্তিত নয়। এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি যাতে চালু করা যায়, তা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy