Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Price Hike

খরচ কমাচ্ছেন মধ্যবিত্ত, কমছে বিক্রিবাটা! দেশের অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত

অক্টোবরে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি ফের ৬% পেরিয়ে ১৪ মাসে সর্বোচ্চ হয়েছে। আনাজের দাম আগুন। অথচ আয় বাড়েনি বেশির ভাগের।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না এলে উন্নতি অসম্ভব।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না এলে উন্নতি অসম্ভব। —প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:২৭
Share: Save:

বাজারের খরচ কাটছাঁট করতে অনামী সংস্থার সাবানের গুঁড়ো, বিস্কুট, চাউমিনের প্যাকেট, কম দামি টুথপেস্ট। মাসে চার দিনের বদলে এক দিন বাইরে খাওয়া। কম দামের খাবার অর্ডার। মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখায় দাঁড়ি— এ ভাবেই মধ্যবিত্তদের চড়া মূল্যবৃদ্ধি সামলানোর ছবি ধরা পড়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাঁরা। তাই তিন-চার মাস ধরে শহরের বিক্রিবাটায় ভাটার টান টের পাচ্ছে স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি। যারা মোড়কজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, মধ্যবিত্তেরা এ ভাবে শিল্পের চাহিদা কমালে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে না তো?

অক্টোবরে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি ফের ৬% পেরিয়ে ১৪ মাসে সর্বোচ্চ হয়েছে। আনাজের দাম আগুন। অথচ আয় বাড়েনি বেশির ভাগের। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, রোজের জীবনযাপন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার খরচ ঊর্ধ্বমুখী। ফলে খরচ না ছেঁটে উপায় কী? অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, অতিমারির পরে মূলত শহরাঞ্চলের চাহিদায় ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্থিক কর্মকাণ্ড। এখন ছবিটা উল্টো। গ্রাম এবং শহরতলিতে বিক্রিবাটা কিছুটা বাড়লেও, অবনতি হয়েছে মেট্রো শহরে। অথচ, ভোগ্যপণ্য ব্যবসার ৬০%-৬৫% এই অঞ্চল নির্ভর। অর্থ মন্ত্রক এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষে ৭.২% জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু চাহিদা না বাড়লে তা কী করে সম্ভব, উঠছে প্রশ্ন। বিশেষত গত এপ্রিল-জুনে যেহেতু বৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশে আটকেছে! সংশয় রয়েছে জুলাই-সেপ্টেম্বর নিয়েও!

সম্প্রতি সিটি ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলেছে, শহরে চাহিদা এখন দু’বছরের তলানিতে। কমেছে উড়ানের টিকিট বুকিং, জ্বালানি বিক্রি, মজুরি। নথিভুক্ত সংস্থাগুলিতে মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে বেতন বৃদ্ধির হার মাত্র ২%। গত ১০ বছরে যার গড় ছিল ৪.৪%। ফলে কমেছে পারিবারিক সঞ্চয়। সংস্থার ভারতীয় শাখার মুখ্য অর্থনীতিবিদ সমীরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কিছু সূচকের পতন সাময়িক। কিন্তু সামগ্রিক ইঙ্গিতভাল নয়।’’ হালে নমুরার সমীক্ষাতেও দাবি, এ বছর উৎসবের মরসুমে বিক্রি বেড়েছে ১৫%। গত বছর এর দ্বিগুণ ছিল। অনেকে মনে করাচ্ছেন ভোগ্যপণ্য বিক্রেতা নেসলে ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সুরেশ নারায়ণনের আক্ষেপ। তিনি বলেছেন, ‘‘আগে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ছিল। সেখানে ব্যবসা করতাম। কিন্তু সেই অংশটাই সম্ভবত সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।’’ ২০২০-র পরে গত এপ্রিল-জুনেই প্রথম বার বিক্রি কমেছে নেসলের। অথচ ২০২০-এ কোভিডকালের প্রভাব এখন উধাও।

ক’দিন আগে অর্থ মন্ত্রক মাসিক রিপোর্টে মেনেছে শহরে চাহিদা কমার কথা। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না এলে উন্নতি অসম্ভব। সরকার অবশ্য দামে লাগাম পরাতে ফের খোলা বাজারে পেঁয়াজ ছাড়ার আশ্বাস দিয়েছে। মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপির দাবি, জোগানে উন্নতি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি ফের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যে (৪%) নামানো সম্ভব। ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার ভারত ও আসিয়ান শাখার আর্থিক গবেষণা শাখার প্রধান রাহুল বাজোরিয়া বলছেন, ‘‘সরকারি খরচ বাড়লে বেসরকারি ক্ষেত্রেও বিক্রি বাড়তে বাধ্য। তাতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৮% হতে পারে।’’

তবে এত হিসাব একসঙ্গে মেলানো যাবে কি? সকলের চোখ সে দিকেই।

আশঙ্কা যেখানে

অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.২১%, খাদ্যপণ্যের ১০.৮৭%।

এক বছরে মূল্যবৃদ্ধির গড় ৫%, খাদ্যপণ্যের ৮%।

সিটি ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলেছে, শহরে চাহিদা দু’বছরের তলানিতে। উৎসবেও বাড়েনি।

আয় থমকে, বাড়ছে খরচ। মধ্যবিত্ত মানুষদের হতাশা ক্রমবর্ধমান।

চাহিদার ঝিমুনি কি এই অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধিকে ৭.২% ছুঁতে দেবে?

ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার অনুমান, বৃদ্ধি আটকাবে ৬.৮ শতাংশে।

অন্য বিষয়গুলি:

price Middle Class reserve bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy