সেবি চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচের বিতর্কিত ও ঘটনাবহুল কর্মমেয়াদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। সোমবার বাজার নিয়ন্ত্রকের নতুন কর্ণধারের পদে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক দফতর জানিয়েছে, ওই পদে নিয়োগ হবে পাঁচ বছর অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে যেটি আগে সেই পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে এই জায়গাটি নিয়ে। চলতি মাসে মাধবী ৬০ বছর পূর্ণ করেছেন এবং অবসরের দিন সেবির শীর্ষ পদে তাঁর তিন বছর শেষ হচ্ছে। অথচ অতীতে প্রাথমিক ভাবে চেয়ারপার্সনদের তিন বছরের জন্য নিয়োগ করে তার পরে দু’বছর মেয়াদ বৃদ্ধি ছিল দস্তুর। এমনকি, ইউ কে সিন্হাকে সরাসরি পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়। তার পরে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ কাণ্ডে অভিযুক্ত মাধবীর কাজের সময় বাড়ানো হল না। কিন্তু এই পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের দাবি, তাদের ধারাবাহিক চাপের কারণেই মাধবীর কাজের মেয়াদ বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে পারল না মোদী সরকার। তাঁর আশা, নতুন চেয়ারপার্সন আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন।
২০২২ সালের ২ মার্চ সেবির হাল ধরেছিলেন মাধবী। প্রথম মহিলা হিসেবে সেই পদে বসে তৈরি করেছিলেন নজির। শেয়ার লেনদেনের হিসাব চুকিয়ে লগ্নিকারীকে বুঝিয়ে দেওয়ার (সেটলমেন্ট) গতি বৃদ্ধি, মিউচুয়াল ফান্ডের জনপ্রিয়তা বাড়ানো-সহ বিভিন্ন কাজের কৃতিত্ব তাঁকে দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু তাঁর কাজের শেষ এক বছর ছিল বিতর্কে ভরা। আমেরিকার শর্ট সেলার হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে নাম থাকা তো বটেই, কয়েক মাস আগে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল সেবির কর্মীদের মধ্যেই। কাজের পরিবেশের অবনতির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কর্মীরা। মাধবী এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচের বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁরা এমন বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থায় পুঁজি ঢেলেছিলেন যার সঙ্গে যোগসাজস ছিল শিল্পপতি গৌতম আদানির দাদা বিনোদের। যাঁর মাধ্যমে ঘুরপথে আদানি গোষ্ঠীর নথিভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ারে লগ্নি করে শেয়ারের দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়ানোর অভিযোগ ওঠে রিপোর্টে। বুচ দম্পতি অবশ্য বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি ব্যবসা গোটানোর কথা ঘোষণা করেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।
বিতর্ক
আদানিদের শেয়ার দর বাড়াতে যে বিদেশি পুঁজি ব্যবহার হয়েছিল, তাতে অংশীদারি ছিল মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচের।
আইআইএফএল-এর নথি অনুযায়ী, বেতন থেকে অর্থ ঢালেন দু’জনে।
মাধবী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)