পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসমের মতো পাট উৎপাদক রাজ্যগুলিতে এখনই বীজ বোনার সময়। যা চলে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু লকডাউনের জেরে দেশে পণ্য পরিবহণ যে ভাবে থমকে গিয়েছে, তাতে বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বীজ বণ্টনও এখন কার্যত বন্ধ। সূত্রের খবর, আগামী কয়েক সপ্তাহ এই পরিস্থিতি চললে এ বছরও দেশে পাট চাষ ব্যাপক ভাবে মার খাবে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পাট নিগমের আর্জি, চাষিদের কাছে যাতে নির্বিঘ্নে বীজ পৌঁছতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক রাজ্যগুলি।
সারা দেশে যা পাট উৎপাদন হয়, তার ৭০% জোগান দেয় পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে বছরে প্রায় ৩৫০০ টন বীজ লাগে। পাট উৎপাদক অন্যান্য রাজ্যকে ধরলে প্রত্যেক মরসুমে দেশে বীজ লাগে প্রায় ৬০০০ টন। পশ্চিমবঙ্গে পাট নিগম সরকারি ভাবে পরীক্ষিত বীজ বণ্টন করে প্রায় ৫০০ টন। আরও ১০০ টন বীজ পায় অন্যান্য রাজ্য। কেন্দ্রের ‘জুট আই-কেয়ার’ প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত চাষিরা রয়েছেন, তাঁরাই সাধারণত এই বীজ পান। এ ছাড়াও কেন্দ্রের জাতীয় বীজ নিগমের প্রায় ১০০০ টন বীজ পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি হয়। সরকারি এই ব্যবস্থার বাইরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ৯০% পাট চাষিকেই বেসরকারি সংস্থার বীজের জোগানের উপরে নির্ভর করতে হয়।
কিন্তু পাট শিল্প মহল সূত্রের খবর, পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সেই বীজ বাজারে পৌঁছচ্ছে না। বহু জায়গায় সরকারি বীজও গুদামঘরে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বণ্টন করা যাচ্ছে না। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ। বীজ সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে পাট নিগম।
দেশে গত মরসুমে বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় পাট উৎপাদন অনেকটাই মার খেয়েছে।
চাহিদা
• দেশে চাষের মরসুমে পাটের বীজ লাগে
৬০০০ টন।
• শুধু পশ্চিমবঙ্গেই
৩৫০০ টন।
• দেশে সরকারি ভাবে পরীক্ষিত ৬০০ টন
বীজ বণ্টন হয়।
• বিক্রি হয় জাতীয়
বীজ নিগমের সরবরাহ করা বীজও।
• বেসরকারি সংস্থার থেকে বাকিটা কিনতে হয়।
সমস্যা
• লকডাউনের জন্য দেশে পরিবহণ বন্ধ।
• সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে বীজ বণ্টনও করা যাচ্ছে না।
• ফলে পাট চাষ ধাক্কা
খাবে বলে আশঙ্কা।
• চাষিদের কাছে নির্বিঘ্নে বীজ পৌঁছে দিতে রাজ্যগুলির কাছে আর্জি
এ রাজ্যে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলাগুলিতে বৃষ্টির জলের অভাবে পাট পচাতে পারেননি বহু চাষি। ফলে কাঁচা পাটের জোগানে ঘাটতি দেখা দেয়। আর এ বছর করোনার প্রভাবে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় বীজের আকাল তৈরি হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সময়ে ভাল বীজ পাওয়া না-গেলে চাষের ক্ষতি হবে। পরে কৃষি বাজারগুলিতে চাপ বাড়তে থাকলে, নিম্নমানের বীজ বাজারে ছেয়ে যাবে। ফলন মার খাবে। আবার নিম্নমানের বীজের ফলে পাটের মান খারাপ হলে বাজারে দামও পাওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষি থেকে শুরু করে পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষই। পাট পর্ষদের এক কর্তার বক্তব্য, পাটের বীজ জরুরি পণ্য আইনের আওতার মধ্যে পড়ে। তাই রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে বীজ বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রশাসন যেন সাহায্য করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy