—প্রতীকী ছবি।
সেনসেক্স ৭৫ হাজারের শৃঙ্গ জয়ের পরে টানা চার দিনে নেমেছে মোট ২৫৪৯ পয়েন্ট। গত শুক্রবার এই সূচক ৫৯৯ উঠলেও, পতন-পর্ব শেষ হয়েছে বলা যাবে না। আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ নানা কারণে অস্থির শেয়ার বাজার। তাই শুধু লাভ ঘরে তোলার তাগিদে তা পড়েছে, এমন ভাবাটা ঠিক হবে না।
বাজার নামার একটি বড় কারণ হল ইরান-ইজ়রায়েলের সংঘর্ষ। ইজ়রায়েলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। ইতিমধ্যেই প্রতি আক্রমণে ইরানকে পাল্টা জবাব দিয়েছে ইজ়রায়েল। শেষমেশ এই সংঘর্ষ যদি বড় যুদ্ধের আকার নেয়, তবে তা বড় বিপদ ডেকে আনবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য।
চার দিন আগে ইজ়রায়েল যখন ইরানকে প্রত্যাঘাত করল, সে দিন আতঙ্কে অশোধিত তেলের দাম এক লাফে বেড়েছিল তিন ডলার। ধস নেমেছিল গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজারে। ইরান এই আঘাতকে কিছুটা হাল্কা করে দেখায় তেলের দাম ফের নেমে আসে ব্যারেল পিছু ৮৭ ডলারে। সেনসেক্স ওঠে প্রায় ৬০০ পয়েন্ট। তবে এই ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা এখনই মিটে যাওয়ার নয়। অশান্তির উত্তাপ না কমার লক্ষণ প্রকট করে আরও এক বার ইজ়রায়েলে হামলার হুঙ্কার দিয়েছে ইরান সরকার। কাজেই এই অস্থিরতা ভোগাবে শেয়ার বাজারকে।
অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকা এবং ভারতে সুদ কমতে পারে, এই আশায় ভর করে ভাল রকম উঠছিল সূচক। আশা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে বসেছে আমেরিকায় ফের মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ায়। ভারতেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখনও মাথাব্যথার কারণ। আশঙ্কা, দেশের বড় অংশ জুড়ে যে অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ চলছে, তাতে আগামী দিনে খাদ্যপণ্যের দাম আরও চড়তে পারে। কারণ, গম-সহ বিভিন্ন পণ্যের জোগান এরই মধ্যে অনেকটা কমেছে। সরকারের খাদ্য ভান্ডারে তার মজুত কমে গিয়েছে প্রায় ৩৭%। তার উপর আমেরিকা সুদ কমাতে শুরু না করলে ভারত সেই পথে হাঁটবে কি না, সে ব্যাপারেও সংশয় রয়েছে। অর্থাৎ সুদ কমার প্রত্যাশা আপাতত ছাড়তে হবে। সুদ কমছে না ধরে নিয়ে গত কয়েক দিনের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি বন্ড ইল্ড বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৭.২৩ শতাংশে। সুদ কমবে এই আশায় ১২ মার্চ তা নেমেছিল ৭.০২ শতাংশে। ইল্ড বৃদ্ধির অর্থ, বাজারে বন্ডের দাম কমে যাওয়া। সব মিলিয়ে ধরে নেওয়া যায় চড়া সুদের জমানা আরও বেশ কিছু দিন চলবে।
তার উপরে এখনও পর্যন্ত সংস্থাগুলির যে আর্থিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা মোটের উপর ভাল বলা যাবে না কোনও ভাবেই। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস ভাল ফল প্রকাশ করলেও, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তেমন ভাল কোনও ইঙ্গিত দেয়নি দেশের আর এক অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। উইপ্রোর লাভ কমেছে ৭.৮%। মুনাফা নামমাত্র বেড়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের। হিন্দুস্তান জিঙ্কের একত্রিত লাভ কমেছে ২১%। অর্থাৎ এই সমস্ত আর্থিক ফল বাজারকে শক্তি জোগায়নি।
সেনসেক্সের সঙ্গে সোনার প্রতিযোগিতা বরাবর। গত সপ্তাহে পাকা সোনার দাম (১০ গ্রাম) পেছনে ফেলেছে শেয়ার সূচককে। শুক্রবার সেনসেক্স থেমেছে প্রায় ৭৩,০৮৮ অঙ্কে। সে দিন কলকাতায় খুচরো সোনা বিকিয়েছে ১০ গ্রামে ৭৪,৫০০ টাকায়। সোনার বাট ছিল ৭৪,১৫০ টাকা। দু’টিই শনিবার আরও বেড়ে হয় যথাক্রমে ৭৪,৭৫০ এবং ৭৪,৪০০ টাকা। সোনার দর এমন আকাশছোঁয়ার কারণ বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা। যা দেখা দিলেই মানুষ অন্য সব ছেড়ে ‘সুরক্ষার স্বর্গ’ সোনার দিকে ঝোঁকেন। চাহিদা বাড়ায় চড়তে থাকা দাম।
কোভিডের প্রভাব এবং তার পরে চড়া মূল্যবৃদ্ধি ধাক্কা ছিলই। এখন মানুষকে ভাবাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষের পরিস্থিতি। সোনার দাম অনেকখানি চড়ে যাওয়ায় তা অনেকেরই আর নাগালের মধ্যে নেই। ফলে তাঁদের একাংশের মধ্যে রুপো কেনার প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে তার চাহিদাও বেড়েছে। দাম হয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। এক কেজি খুচরো রুপো এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৩,৯০০ টাকা। রুপোর বাট ১০০ টাকা কম, অর্থাৎ ৮৩,৮০০ টাকা। মাঝে মধ্যে অনিশ্চয়তার কারণে মানুষকে তহবিলের ১০% থেকে ১৫% সোনায় বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডগুলিও হালে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এই সব ফান্ডের তহবিল শেয়ার ছাড়াও বন্ড, সোনা, রুপো এবং অন্যান্য পণ্যে লগ্নি করা হয়। বাজারে এই ধরনের ফান্ড মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড নামে পরিচিত।
স্বস্তি নেই ডলারের দামেও। ভারতের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে বলে দাবি করা হলেও ডলারের নিরিখে টাকার দাম কমেই চলেছে। অর্থাৎ ক্রমাগত দামি হচ্ছে আমেরিকার মুদ্রা। গত শুক্রবার এক ডলার ছিল ৮৩.৪৭ টাকা। বিদেশি বাণিজ্যে ঘাটতি ডলারের দাম বাড়ার একটি কারণ। দেশের জাতীয় উৎপাদন বাড়লেও, রফতানি তেমন চড়ছে না। অন্য দিকে অশোধিত তেল, সার ইত্যাদি আমদানি করতে চড়া দামের বিদেশি মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে। নতুন সরকারকে যে সব সমস্যা ভাবাবে, তার মধ্যে অন্যতম এটি।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy