Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Share Market

বাজারে লগ্নিকারীর ভিড়, জ্বালানি ঢালল আরবিআই

শীর্ষ ব্যাঙ্কের দেওয়া তহবিল চলতি অর্থবর্ষে সরকারের রাজকোষ ঘাটতি কমাবে। ফলে নামবে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ। অর্থাৎ সরকারি বন্ডের জোগান কমবে। যে কারণে চাঙ্গা হয়েছে বন্ড বা ঋণপত্রের বাজারও।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ০৮:০৭
Share: Save:

গত সপ্তাহটা ছিল নজিরে ঠাসা। মুম্বইয়ের শেয়ার বাজারে (বিএসই) নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট মূল্য বা মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন প্রথম বার ছাড়ায় ৫ লক্ষ কোটি ডলার। চলতি বছরে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে এই মূল্য ১১.৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। মোট শেয়ার মূল্যের নিরিখে বিশ্বে ভারতের অবস্থান এখন পঞ্চম। আগের চারটিতে রয়েছে আমেরিকা, চিন, জাপান এবং হংকং। গত বৃহস্পতিবার ১১৯৭ পয়েন্ট লাফিয়েছিল সেনসেক্স। ৭৫,৪১৮ অঙ্কে উঠে উচ্চতার নতুন নজির গড়ে। সব থেকে উঁচু শিখরে ওঠে নিফ্‌টি-ও। ৩৭০ পয়েন্ট এগিয়ে হয় ২২,৯৬৮। হঠাৎ বাজারের এমন তেড়েফুঁড়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল, গত অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নজিরবিহীন ডিভিডেন্ড দেওয়ার ঘোষণা।‌ যার অঙ্ক ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় (৮৭,৪১৬ কোটি টাকা) ডিভিডেন্ড এতটা বাড়ানোয় উৎফুল্ল হয়ে ওঠে শেয়ার বাজার।

আশা, শীর্ষ ব্যাঙ্কের দেওয়া তহবিল চলতি অর্থবর্ষে সরকারের রাজকোষ ঘাটতি কমাবে। ফলে নামবে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ। অর্থাৎ সরকারি বন্ডের জোগান কমবে। যে কারণে চাঙ্গা হয়েছে বন্ড বা ঋণপত্রের বাজারও। বন্ডের দাম বাড়তে থাকায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড নেমেছে ৬.৯৯ শতাংশে। এটি ৭ শতাংশের নীচে নামল প্রায় সাড়ে এগারো মাস পরে।

বিএসই-তে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট মূল্য বেড়ে পৌঁছেছে ৪১৯.৯৯ লক্ষ কোটি টাকায়। নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭.৩৫ কোটি। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২.৪০%। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৯৬.৭৫ লক্ষ, দেশের মধ্যে রাজ্য হিসেবে পঞ্চম। গত এক বছরে বাংলা থেকে লগ্নিকারী বেড়েছে ৩৭%।

মাঝারি থেকে বড় মেয়াদে শেয়ার বাজার আশাতিরিক্ত রিটার্ন দিতে থাকায় দ্রুত গতিতে লগ্নি বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডেও। গত মাসের শেষে সব ফান্ডের পরিচালনাধীন মোট সম্পদের পরিমনাণ ছিল ৫৭.২৬ লক্ষ কোটি টাকা। ১০ বছরে তা বেড়েছে ৬ গুণেরও বেশি। এই তহবিলের একটা বড় অংশ শেয়ার বাজারে প্রবাহিত হওয়ায় তা সূচককে তেজী থাকতে সাহায্য করছে। গত মাসের শেষে ফান্ডগুলির মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৮.১৫ কোটি।

ব্যাঙ্ক-ডাকঘর এখন ভাল সুদ দিচ্ছে। তবু বহু মানুষ শেয়ার এবং ফান্ডের দিকে ঝুঁকছেন কর দেওয়ার পরে বেশি আয়ের জন্যে। সুদ ৮% পেলেও ৩১.২% করের পরে প্রকৃত আয় দাঁড়ায় ৫.৫%। যা প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় কম। তা ছাড়া, দীর্ঘ মেয়াদে একলপ্তে অথবা কিস্তিতে (এসআইপি) লগ্নি করে বড় মাপের সম্পদ গড়ে তোলার জন্য শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের তুলনা নেই। এখানে দীর্ঘকালীন লাভের উপর সর্বাধিক কর দিতে হয় ১০.৪%।

শেয়ার বাজারকে বহু বাঙালি কোনও দিনই সুনজরে দেখেননি। অতীতে একে সর্বস্বান্ত হওয়ার ‘শ্রেষ্ঠ’ জায়গা বলা হত। ষাটের দশকের অনেক সিনেমায় তেমন বার্তা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। শেয়ার এবং ফান্ডে লগ্নি এখন অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত এবং তথ্য ও বিশ্লেষণ নির্ভর। জেনে-বুঝে অথবা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো লগ্নি করলে লম্বা মেয়াদে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা কম। তা আরও কমে যায় এক জায়গায় লগ্নি না করে ঝুঁকিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিলে। সফল বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বলেন, শেয়ারে লগ্নিতে ঝুঁকি আছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে বিনিয়োগ না করার ঝুঁকি অনেক বেশি, যা আসলে বড় লাভের সম্ভাবনা হারানোর। সমাজের একটি অংশ শেয়ারে লগ্নি না করে তথাকথিত চিট ফান্ডে পুঁজি ঢেলে প্রায় পুরোটাই খুইয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্ম অবশ্য এখন শেয়ার সম্পর্কে অনেক বেশি আগ্রহী। প্রযুক্তি নির্ভর বাজারে তাঁদের অবাধ গতিবিধি। শেয়ার এবং ফান্ড সম্পর্কে তথ্য এবং বিশ্লেষণ পাওয়া সহজ হওয়া যার অন্যতম কারণ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

BSE RBI Reserve bank of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy