প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সদর্থক বার্তা দিতে সে দেশের হুইস্কি থেকে দামি মোটরসাইকেল, গাড়িতে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছিল। এ বার ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির চাপে আরও কোথায় কোথায় ভারতের দিক থেকে শুল্ক কমানো সম্ভব, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার। এই ‘নরম মনোভাব’ দেখে কংগ্রেসের প্রশ্ন, কেন্দ্র কি শুল্ক ছেঁটে আমেরিকার সস্তার কৃষি পণ্যের জন্য ভারতের বাজার খুলে দিতে চাইছে? সেখান থেকে আমদানি বাড়লে দেশের ছোট-মাঝারি শিল্পকে কী ভাবে রক্ষা করবে তারা?
ভারত আমেরিকার পণ্যে চড়া শুল্ক চাপায় বলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকেই সরব ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ঘোষণা করেন, এপ্রিলের গোড়ায় ভারত, চিনের মতো দেশে পাল্টা চড়া শুল্ক চাপানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি নতুন করে তাঁর হুমকির পরে কেন্দ্র আরও ‘নরম’ হতে চাইছে। সূত্রের খবর, বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনে উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রকের আমলারা আছেন। আরও কোথায় শুল্ক ছাঁটা যায়,
তা খতিয়ে দেখে ১৫ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে কমিটিকে। কারণ, ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা শুল্ক বসাতে চান ট্রাম্প। তাতে কোন ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়বে, তা-ও দেখবে কমিটি।
এই বাজেটে ২০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছিল। মোদীর সফরে আমেরিকা থেকে আরও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, তেল, গ্যাস কেনার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র। নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও। চুক্তিতে শুল্ক কমিয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধির রাস্তা তৈরি হবে। কিন্তু তার পরেও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি বন্ধ হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, কোন কোন পণ্যে ৫০%-৭০% ও ৭০ শতাংশের বেশি শুল্ক রয়েছে, কোথায় কমানো সম্ভব, তা খতিয়ে দেখবে কমিটি। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমেরিকার ২৮টি পণ্যে চড়া শুল্ক ছিল। সব ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ঊর্ধ্বসীমার মধ্যেই ভারত শুল্ক বসায়। গড় হার ১৭%। সময়ের সঙ্গে তা কমছে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়ে ভারতের ইঙ্গিত, আমরা আরও পণ্যে শুল্ক কমাতে চাই। কিন্তু তা সব ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে।’’
গোল্ডম্যান স্যাক্সের রিপোর্ট বলছে, আমেরিকা চড়া শুল্ক বসালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ০.১-০.৩ শতাংশ বিন্দু কমতে পারে। সিটি রিসার্চের মতে, রফতানিতে বছরে ৭০০ কোটি ডলার লোকসান হতে পারে। কেন্দ্রকে কংগ্রেসের প্রশ্ন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কতটা প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতিতে? কৃষক, ছোট-মাঝারি শিল্পকে কী ভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে? কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, পাল্টা চড়া শুল্কের হুমকি যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে, তা নরেন্দ্র মোদীর তাঁর বন্ধু ট্রাম্পকে মনে করানো উচিত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)