E-Paper

আর্থিক সঙ্কটে পান চাষি, দায় নিয়ে চাপানউতোর

বর্তমান অবস্থায় ১০,০০০টি বাংলা পান পাতার গড় দাম বাজারে ৮০০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু তা পেতে চাষিদেরকে দিতে হচ্ছে আরও ৫০০০টি (মোট ১৫,০০০টি) পাতা।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ০৫:০১
An image of Betel Farmers

আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদার বাজার দরের থেকে কম দামে পান পাতা বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। প্রতীকী চিত্র।

আমজনতার মুখশুদ্ধির পানের পাতা জোগান তাঁরা। তাতে ঘাটতি না থাকলেও, সেই পান পাতার ঠিক দাম না পাওয়ায় রাজ্যের বহু পান চাষি আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত বলে অভিযোগ তাঁদের দুই সংগঠনের। দাবি, বিশেষত সমস্যা তীব্র হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। রাজ্যে এমনিতে ১৮টি জেলায় পান পাতা চাষ হলেও, ওই দুই অঞ্চলই তার প্রায় অর্ধেকের সূত্র। তবে এই সমস্যার দায় কার, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। চাষিদের দাবি, তাঁদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদার বাজার দরের থেকে কম দামে পান পাতা বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। অভিযোগ উড়িয়ে ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের আবার পাল্টা দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে বাড়তি পাতা জুগিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য আদতেদায়ী চাষিরাই।

এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট তিন পক্ষকে নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালনমন্ত্রী গোলাম রব্বানি এবং সুন্দবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। বেচারামবাবু বলেন, ‘‘সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলে মাস দু’য়েকের মধ্যে এই সমস্যার সমাধানসূত্র বেরোবে বলে আশা করছি আমরা।’’

পশ্চিমবঙ্গ পান চাষি সমন্বয় সমিতির যুগ্ম সমন্বয়কারী বিবেক রায় এবং পান চাষি সুরক্ষা সংগঠনের সভাপতি প্রসেনজিৎ মাইতির দাবি, প্রথামাফিক ৫০টি করে পান পাতা নিয়ে প্রতিটি বান্ডিল (গুছি) তৈরি করে বিক্রি করার কথা। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের চাপে চাষিরা গুছিতে ১৫০-২৫০টি পাতা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। উপরন্তু সব পাতার মোট দামের থেকে ১০%-১৫% কম দামও মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। ফলে গুরুতর আর্থিক সঙ্কটে পড়ছেন চাষিদের বড় অংশ।

বিবেকের দাবি, বর্তমান অবস্থায় ১০,০০০টি বাংলা পান পাতার গড় দাম বাজারে ৮০০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু তা পেতে চাষিদেরকে দিতে হচ্ছে আরও ৫০০০টি (মোট ১৫,০০০টি) পাতা। অর্থাৎ, প্রায় অর্ধেক আয় হচ্ছে। আবার ১০,০০০ মিঠা পাতা দিয়ে ৬০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও, সেই অর্থ হাতে পাওয়ার জন্য তাঁদের দিতে হচ্ছে পাঁচ-ছয় গুণ পাতা! সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির ইঙ্গিত স্পষ্ট।

পানের পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের সংগঠন বিটল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন দিন্দার অবশ্য পাল্টা দাবি, “পাতা দ্রুত বিক্রি করার জন্য এবং কিছু বেশি দাম পেতে এক গুছিতে যত পান থাকার কথা তার থেকে বেশি পাতা দেওয়ার প্রথা দীর্ঘ দিন ধরে চালু করেছেন চাষিরাই। সমস্যাও বেশি ওই দুই জেলায়। আমরাও চাই, গুছিতে পাতার সংখ্যার একই নিয়ম সারা রাজ্য জুড়ে চালু করা হোক।’’

সকলের জন্য এক নিয়মের প্রয়োজনীয়তা মেনেছেন বিবেকবাবুও। তবে তাঁর পাল্টা দাবি, বিক্রি না হওয়া উদ্বৃত্ত পাতা ফেরানোর খরচের বোঝা বাড়ে। সেই সঙ্গে পাতা পচে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তখন পাইকারি ব্যবসায়ীদের চাপে কম দামে পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হন বহু চাষি। যে কারণে তাঁদের দাবি, সকলের জন্য সার্বিক নিয়ম তৈরির পাশাপাশি পান পাতার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চালু করুক রাজ্য। সেই সঙ্গে পানকে কৃষি পণ্যের মর্যাদা দেওয়া এবং এটিকে শস্য বিমার আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন চাষিরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Betel Nuts Farmers financial crisis Betel Farming

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy