Bashar Al-Asad

লন্ডনে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পাঠ! ‘সংস্কারক’ বাশারই ক্রমে হয়ে ওঠেন ‘স্বৈরাচারী’

বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ় আল আসাদ— দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এসে তাঁরই একের পর এক সিদ্ধান্ত বাতিল করেন পুত্র বাশার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০৯
Who is Bashar al-Assad, the leader whose family ruled Syria more than 50 years

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শুরুটা হয়েছিল সংস্কারবাদী হিসাবে। শেষটা কর্তৃত্ববাদী। প্রেসি়ডেন্ট পদে বসে সিরিয়ার একাধিক সমস্যার সমাধান করেছিলেন। এমনকি বাবার বেশ কিছু সিদ্ধান্তও বদলে ফেলেন। এ সব দেখে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারবারিরা বাশার আল আসাদকে ‘সংস্কারবাদী’ নেতার তকমা দিয়েছিলেন। যদিও এক যুগের মধ্যে তিনিই ধরা দেন কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসাবে। স্বৈরাচারী তকমাও জোটে।

Advertisement

বাবা হাফিজ় আল আসাদ টানা ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র বাশারের অবশ্য রাজনীতির আঙিনায় আসার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। ১৯৯২ সালে ডাক্তারি পড়তে লন্ডন যান। মন দিয়ে ফেলেন রক সঙ্গীতে। মনে ধরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। তবে বাশার আল আসাদের জীবন তখন এক মোক্ষম মোড়ের সন্ধিক্ষণে। দামাস্কাসে গাড়ি দুর্ঘটনায় দাদার মৃত্যু তরুণ বাসারকে লন্ডন থেকে নিয়ে এসে ফেলে সিরিয়ায়। বাবার উত্তরসূরি হিসাবে তৈরি হতে শুরু করেন। যোগ দেন সেনায়। হাফিজ় আল আসাদের মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আসীন হন ‘হট সিট’-এ।

বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ় আল আসাদ— দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। ২০০০ সালে হাফিজ়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তিনি। বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এসে তাঁরই একের পর এক সিদ্ধান্ত বাতিল করেন পুত্র বাশার। মসনদে বসেই হাঁটেন সংস্কারের পথে। প্রশাসনিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেন বাশার। দীর্ঘ দিনের শাসনকালে বিভিন্ন সরকারি পদ এবং প্রতিষ্ঠানে নিজের পছন্দের লোকদের বসিয়েছিলেন হাফিজ়। ক্ষমতায় এসেই সেই সব পদে পরিবর্তন করেন তাঁর পুত্র বাশার। শুধু তা-ই নয়, দেশের অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে করেছিলেন আর্থিক সংস্কারও। হাফিজ়ের বহাল করা বেশ কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করেছিলেন বাশার। শাসনকালের প্রথম দশক সিরিয়া দেখেছিল সুশাসককে।

পরের দশকে তিনিই রং বদলে হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী। দেশের বিরোধী শক্তি দমনে কঠোর থেকে কঠোরতম নীতি নিতে থাকেন বাশার। সরকারবিরোধী আওয়াজ তোলা মানুষদের নির্বিচারে ‘খুন’ হতে হয় তাঁর শাসনকালে। ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় চলছে গৃহযুদ্ধ। দেশের দক্ষিণ প্রান্তের অন্যতম শহর দারায় সে সময় প্রথম বিক্ষোভের আগুন দেখা যায়। পরে সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দমন-পীড়ন আরও তীব্রতর হয়। সে সময়ে বিরোধী সমর্থকেরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। প্রথমে আত্মরক্ষার স্বার্থে, পরে নিরাপত্তাবাহিনীর হাত থেকে ক্ষমতা দখল করতে।

সিরিয়ায় গুলিবিদ্ধ বাশার আল আসাদের পোস্টার।

সিরিয়ায় গুলিবিদ্ধ বাশার আল আসাদের পোস্টার। —ফাইল চিত্র।

বাশারের দমন-পীড়ন নীতি খুব একটা কাজ দেয়নি। সিরিয়ায় বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীর অভ্যুত্থান হয়। বহু এলাকা সরকারের হাত থেকে চলে যেতে থাকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৩ বছর ধরে চলা সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ ঘরছাড়া হন। চার পাশে শুরু হয় হাহাকার। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক সমস্যা— মাথাচাড়া দিতে থাকে বাশারের শাসনকালে। তবে সে সব নিয়ে তেমন ভাবেননি বাশার। পাল্টা নিজের কর্তৃত্ব আরও কায়েম করার পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি।

গত কয়েক মাসে বাশারের সিংহাসন টলমল হতে শুরু করে। বিদ্রোহী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর আগ্রাসনের মুখে কোণঠাসা হতে থাকে বাশারের সরকার। সিরিয়ার একের পর এক শহর বেদখল হতে থাকে।

১৯৭০ সাল থেকে সিরিয়ায় ক্ষমতায় আছে আসাদ পরিবার। ১৯৪৬ সালে হাফিজ়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু। ‘আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টি’র সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ১৯৬৬ সালে এই দল যখন সিরিয়ার ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন হাফিজ়। সত্তর সালে তিনি তাঁর রাজনৈতিক গুরু সালাহ আল জাদিদকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরাতে বিক্ষোভ শুরু করেন। সে বছরই বিক্ষোভের মুখে সরতে বাধ্য হন সালাহ। ক্ষমতায় বসেন হাফিজ়। বাবার পর দেশের দায়িত্ব নেন ছেলে। ভাগ্যের ফেরে সেই সরকারই পতনের মুখে। নিখোঁজ বাশার আল আসাদ।

Advertisement
আরও পড়ুন