সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। —ফাইল চিত্র।
রাজধানী ছেড়ে তাঁকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু এত সহজে কি হার মানবেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ? না কি ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা করবেন তিনি? সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে সেটাই এখন আমেরিকার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা তিনি এর আগেও করেছেন। ২০১৩ সালের কুখ্যাত ঘৌটা রাসায়নিক হামলা কিংবা ২০১৭ সালের খান শেখুন রাসায়নিক হামলায় শয়ে শয়ে মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
সিরিয়ায় আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রের ভান্ডার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমেরিকার ধারণা। যে যে জায়গায় এই অস্ত্রভান্ডার থাকতে পারে বলে সন্দেহ, সেগুলির দিকে কড়া নজর রেখেছেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার সকালে রাজধানী দামাস্কাসে ঢুকে পড়েছেন সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন আসাদ। তাঁকে বিমানে উঠতে দেখা গিয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন সিরিয়ান বাহিনীর শীর্ষকর্তারা। কিন্তু আসাদ কোথায় গিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁর গন্তব্য অজানা। এই পরিস্থিতিতে গোপন ডেরা থেকে তিনি রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করতে পারেন বলে আশঙ্কা আমেরিকান গোয়েন্দাদের। হাল না ছেড়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শেষ অবলম্বন হিসাবে তিনি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বলে তাঁদের আশঙ্কা।
সিরিয়ার দুই বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী গত কয়েক দিন ধরেই সক্রিয়। তারা একের পর এক শহর দখল করে রাজধানীর দিকে এগোচ্ছিল। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পিছু হটেছে সিরিয়ান সেনা। রবিবার সকালে দামাস্কাসে ঢুকে পড়ে বিদ্রোহী বাহিনী। রাজধানী এখন তাদেরই দখলে। দামাস্কাস থেকে বিদ্রোহীদের বার্তা, ‘এত দিনে সিরিয়া অত্যাচারমুক্ত হল’।
আমেরিকা অবশ্য প্রকাশ্যে সিরিয়া নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার বলেছেন, ‘‘সিরিয়ার পরিস্থিতি খুব ঘাঁটা। কিন্তু ওরা আমাদের বন্ধু নয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আমেরিকার কিছু করার নেই। এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। ওখানে যা হচ্ছে, হোক। আমরা এর মধ্যে নাক গলাব না।’’
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রথম থেকেই বিদ্রোহীদের মদত দিয়েছে আমেরিকা। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক বার নাগরিকদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালে ঘৌটার হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল বহু শিশু। ২০১৭ সালের হামলাতেও মৃত্যু হয় শতাধিক সিরিয়ান নাগরিকের। রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক দল সিরিয়ায় গিয়ে নাগরিকদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি।