বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় কিংবা অন্য কোনও প্রতিবেশী দেশে স্থানান্তর করা হোক। সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউনূস। বৈঠকে দু’দেশের সুসম্পর্ককে অটুট রাখার দিকে জোর দিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। একই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান। বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘বাসস’ জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকা বা অন্য কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সরানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ইউনূসের সঙ্গে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও। সোমবার দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে রাষ্ট্রীয় প্রধান উপদেষ্টার দফতরে ওই বৈঠকে যোগ দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বাসস অনুসারে, ইউনূস তাঁদের বলেন, “ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।” পাশাপাশি, ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বলে মনে করছেন তিনি। সেই কারণে তিনি চাইছেন, ভিসা অফিস ঢাকায় কিংবা অন্য কোনও প্রতিবেশী দেশে স্থানান্তর করা হোক। এতে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে বলে মনে করছেন সে দেশের তদারকি সরকারের প্রধান।
বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ ওই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র বুলগেরিয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, বুলগেরিয়া ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা এবং ভিয়েতনামের হ্যানয়ে তাদের দূতাবাস থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য আবেদনের সুযোগ দেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি দেশগুলিকেও সেই পদক্ষেপ করার প্রস্তাব দেন তিনি। দু’দিন আগেই ঢাকায় বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকে তৌহিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলে ইয়ানকভ। রবিবারের ওই বৈঠকেই বুলগেরিয়ার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
বাংলাদেশে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থাকলেও সেগুলিতে ভিসা সেন্টারের সুবিধা নেই। এর জন্য নির্ভর করতে হয় দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের ভিসাকেন্দ্র থেকে। একাধিক দেশকে ভিসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এগুলি। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থাই চলছে। দু’দেশের সম্পর্ক মসৃণ হওয়ার কারণে এ নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যাও হয়নি। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় উত্তাল পরিস্থিতিতে সাময়িক ভাবে ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখে ভারত। যদিও হাসিনা পতনের এক সপ্তাহ পরেই ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস থেকে আবার ভিসার জন্য আবেদন নেওয়া শুরু হয়ে যায়। তবে সীমিত ভাবে ভিসা আবেদন সংক্রান্ত কাজ শুরু হয়। তার পর থেকে কোনও সময়েই বাংলাদেশির জন্য ভারতের ভিসা পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়নি।