‘তোমার বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস...’। অনেকেই বলেন, দুনিয়া কাঁপানো প্রেম এই যুগে কেউ করে না। এখনকার প্রেম ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু সে সবকে ভ্রান্ত প্রমাণ করল বিবেক পাঙ্গেনি এবং তাঁর স্ত্রী শ্রীজানা সুবেদীর প্রেমকাহিনি।
একসঙ্গে বাঁচা-মরার যে স্বপ্ন বিবেক এবং শ্রীজানা দেখেছিলেন, তা পূরণ হল না। মারণরোগ কেড়ে নিয়েছে বিবেককে। তাঁদের কথা মনে করে সমাজমাধ্যমেও মনখারাপের ঢেউ।
১৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয়েছে বিবেকের। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। একা হয়ে পড়লেন স্ত্রী শ্রীজানা।
বিবেক ছিলেন নেপালের জনপ্রিয় নেটপ্রভাবী। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা অগণিত। সমাজমাধ্যমে অনেকের কাছেই জনপ্রিয় জুটি হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী শ্রীজানা।
শ্রীজানার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি পোস্ট অনুযায়ী, প্রায় ১০ বছর আগে বিবেকের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দু’জনে একই স্কুলে পড়তেন। বিবেক ছিলেন উঁচু ক্লাসে।
ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গভীর হয় বিবেক এবং শ্রীজানার। বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। ছ’বছর প্রেম করার পর বিয়ে করেন তাঁরা। এর পর দু’জনেই আমেরিকায় চলে যান। সেখানে নতুন জীবন শুরু করেন।
জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন বিবেক। ২০২২ সালে তাঁর মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। লড়াই শুরু হয় দম্পতির।
স্বামীর ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকে তাঁর পাশে শক্ত খুঁটির মতো দাঁড়িয়েছিলেন শ্রীজানা। এক বারের জন্যও বিবেককে কাছছাড়া করেননি তিনি।
শ্রীজানা জানিয়েছেন, হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয় বিবেকের। কিছু দিন পর ঠিক মতো হাঁটাচলাও করতে পারছিলেন না তিনি। এমআরআই করে দেখা যায় বিবেকের মস্তিষ্কের ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে।
বিবেকের মাথায় বেশ কয়েকটি বড় অস্ত্রোপচারের পর হাল ছাড়েন চিকিৎসকেরা। তাঁরা শ্রীজানাকে জানিয়ে দেন, স্বামীর আয়ু বড়জোর আর ছ’মাস। তবে অসুস্থ জেনেও স্ত্রীকে একটাই কথা বলতেন বিবেক— ‘আমার কিছু হবে না দেখে নিও।’
এর পর কেমোথেরাপি শুরু হয় বিবেকের। তাঁর মাথার চুল পড়ে যায়। মুখ এবং শরীরের বাকি অংশ ফুলতে শুরু করে। শুরু হয় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই।
অন্য লড়াই লড়ছিলেন শ্রীজানাও। স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখে কষ্টে বুক ভাঙলেও তা প্রকাশ করেননি তিনি। প্রাণপণে স্বামীর সেবা শুরু করেন। এমনকি, নিজের চুলও কেটে দেন। সেই সব ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে।
বিবেক ও শ্রীজানার পাশে দাঁড়ান তাঁদের অগণিত ভক্ত। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ বহু দেশের মানুষ তাঁদের জন্য প্রার্থনা শুরু করেন।
তবে এত চিকিৎসা, এত প্রার্থনা, এত ভালবাসা— কিছুই কাজে দিল না। শত চেষ্টা করেও বিবেককে বাঁচানো যায়নি। ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
এর পরেই শোকে ভেঙে পড়েছেন নেটাগরিকদের একাংশ। তাঁদের নিয়ে লেখালিখিও হচ্ছে বিস্তর। বহু সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন বিবেক এবং শ্রীজানার প্রেমকাহিনি।
বিবেক এবং শ্রীজানা শুধুমাত্র অনুগামীদের সঙ্গে সংযুক্ত হননি, লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে এবং সাহসিকতার সঙ্গে জীবনে আসা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেও অনুপ্রাণিত করেছেন।
সব ছবি: সংগৃহীত।