Sandeshkhali Incident

মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দখল চাষের জমি, বর্গা রেকর্ডও বদল! শাহজাহান-বাহিনীর ‘কীর্তি’ জানাচ্ছে বেড়মজুর

অভিযোগ, গত এক দশকে শাহজাহান শেখ এবং তাঁর ভাই সিরাজউদ্দিনের ‘সৌজন্যে’ ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে এলাকার জমির ‘চরিত্র’। একের পর এক ফসলের জমি গায়ের জোরে দখল করে বানানো হয়েছে মাছের ভেড়ি।

Advertisement
সারমিন বেগম
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫৮
TMC leader Shahjahan Sheikh allegedly occupied many lands of the farmers in Sandeshkhali and converted it to fishery

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

‘নোনা জলে সোনা ফলে’। ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি প্রায়শই এ কথা বলতেন সন্দেশখালির শাহজাহান শেখ। অভিযোগ গত এক দশকে ওই তৃণমূল নেতা এবং তাঁর ভাই সিরাজউদ্দিনের ‘সৌজন্যে’ ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে এলাকার জমির ‘চরিত্র’। একের পর এক ফসলের ক্ষেত্র গায়ের জোরে দখল করে বানানো হয়েছে মাছের ভেড়ি। পাশাপাশি, জোর করে রায়ত (কৃষি) জমি দখল করে অনুগতদের নামে লিখিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে শাহজাহান-সিরাজের বাহিনীর দাপটে চাষের জমি ছাড়তে বাধ্য হওয়া গ্রামবাসীদের অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করছেন।

Advertisement

এমনই এক জন ‘জমিহারা’ মহিলা, বেড়মজুর গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমি হালদার অভিযোগ জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। মৌসুমির অভিযোগ সিরাজউদ্দিনের (স্থানীয় ভাবে ‘সিরাজ ডাক্তার’ নামে তিনি পরিচিত) বাহিনী মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিঘা কৃষিজমি লিখিয়ে নিয়েছে তাঁর কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। শ্বশুরকে মেরেছে। আমার বাচ্চা দুটোর প্রাণের আশায় আমি কিছু বলিনি।’’

আড়াই লাখ টাকা দিয়ে কেনা ওই জমি স্বামী এবং দুই সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে সিরাজের বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হয়েছিল বলে দাবি মৌসুমির। দু’বছর আগে রেজিস্ট্রি অফিসেই সেই বলপূর্বক জমি হস্তান্তর পর্ব হয়েছিল বলে তাঁর অভিযোগ। মৌসুমি জানান, সে সময় সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ ‘বিচারের জন্য’ সিরাজের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। থানা চত্বরেও ‘সিরাজের লোকেদের’ হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে তাঁর অভিযোগ।

সিরাজকে না জানিয়ে জমি কেনা এবং ‘বিজেপি সমর্থক’ বলে সন্দেহের কারণেই তাঁরা সিরাজের রোষের শিকার হয়েছিলেন বলে মনে করেন মৌসুমি। তাঁর অভিযোগ, জমি দিতে রাজি না হওয়ায় সিরাজের বাহিনীর অমিত হালদার, বিনয় সর্দার, পঙ্কজ গায়েন, লিয়াকতেরা তাঁদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। লুটপাট চালিয়েছিল। তাঁর বৃদ্ধ শ্বশুর বলেন, ‘‘বিনয় ডাক্তার লাথি মেরে ভাতের হাঁড়ি উল্টে দেয়।’’ এমনকী, তাঁকে ধর্ষণ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে মৌসুমির দাবি।

স্থানীয়দের অভিযোগ শোনার জন্য সন্দেশখালির কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প চালু করেছে প্রশাসন। সেখানে যাঁরা অভিযোগ জমা দিয়েছেন, তাঁরা কোনও ‘রিসিভ কপি’ পাননি বলে দাবি মৌসুমির। বরং জমি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, ‘‘উপরওয়ালা ভরসা।’’ তাঁর আত্মীয় গোপাল হালদারকেও ‘ডাক্তার’ সিরাজের ‘চেম্বারে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাঁর আশঙ্কা, আবার হামলা চালাতে পারে শাহজাহান-সিরাজের বাহিনী। তাঁর কথায়, ‘‘শাহজাহান, সিরাজ গ্রেফতার না হলে শান্তি ফিরবে না।’’ হালদার পরিবারের আত্মীয় প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশ ক্যাম্প হওয়ায় আপাতত মার খাওয়ার ভয় হয়তো নেই। তবে জমি ফেরত পাওয়া যাবে না।’’

অভিযোগ, শাহজাহান-সিরাজ বাহিনীর আর এক ‘শিকার’ পেশায় ভাগচাষি যুধিষ্ঠির হালদার এবং তাঁর দু’ভাই। বাবার মৃত্যুর পরে টাকার অভাবে বর্গা রেকর্ডের নাম পরিবর্তন করতে না পারায় বেদখল হয়ে গিয়েছে তাঁদের কৃষিজমি। যদিও রাজ্যের জমি আইন অনুযায়ী ভাগচাষির রেকর্ডের জমি ‘হস্তান্তরযোগ্য নয়’। যুধিষ্টির বলেন, ‘‘ওই জমিতে এখন ভেড়ি হয়েছে আমরা ঢুকতেও পারি না। জমির অন্য অংশে রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। সব্জি লাগানোর পরে সিরাজের বাহিনী তা মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে।’’ বস্তুত, বেড়মজুরের বহু পরিবারই এ ভাবে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। পা বাড়িয়েছেন কাঠপোলের অস্থায়ী ক্যাম্পের উদ্দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement