Mamata Banerjee & Jyotipriyo Mallick

‘প্রভাবশালী’ হলে জামিনে সমস্যা, তাঁর পরিবারের অনুরোধেই জ্যোতিপ্রিয়কে মন্ত্রিত্ব থেকে সরান মমতা

১৬ ফেব্রুয়ারি রাজভবন থেকে জানানো হয়, রাজ্যপাল আনন্দ বোস জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে-থাকা বন দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে। আর শিল্প পুনর্গঠন দফতর পাচ্ছেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

Advertisement
অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:২৪
Mamata Banerjee removed Jyotipriya Mallick from the ministry on the request of the family

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

তাঁর পরিবারের অনুরোধেই জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিককে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আচমকা রাজভবন থেকে জানানো হয়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জ্যোতিপ্রিয়ের হাতে-থাকা বন দফতরের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে। জ্যোতিপ্রিয়ের শিল্প পুনর্গঠন দফতরের দায়িত্ব পাচ্ছেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

Advertisement

কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার এত মাস পরে কেন আচমকা বালুকে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা?

রেশন দুর্নীতির তদন্তে ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর গ্রেফতার হন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়। দুর্গাপুজোর আবহে তাঁর বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশির পর রাতে মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকেরা। ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী। মাঝে অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও সুস্থ হয়ে ফের জেলে ফিরে গিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই আদালতে কয়েক বার তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।

গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে জ্যোতিপ্রিয় জেলবন্দি থাকার সময় বার বার প্রশ্ন উঠেছে, কেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁকে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন না? কেনই বা এখন সরালেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রীর পরিবারের অনুরোধে মুখ্যমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্প্রতি জ্যোতিপ্রিয়ের দাদা, পেশায় চিকিৎসক দেবপ্রিয় মল্লিক সাক্ষাৎ করেন দলের এক প্রবীণ নেতার সঙ্গে। দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক হয় দুজনের। সেই বৈঠকেই মল্লিক পরিবারের অবস্থানের কথা ওই প্রবীণ নেতাকে জানান দেবপ্রিয়। মল্লিক পরিবারের তরফে জানানো হয়, জ্যোতিপ্রিয়ের জামিন করাতে চান তাঁরা। কিন্তু তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিত্বে রেখে দেওয়ায় আদালতে জ্যোতিপ্রিয়কে বার বার ‘প্রভাবশালী’ বলে তুলে ধরে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করছে ইডি। ফলে জামিনের আবেদন করেও ফল মিলছে না। তাই তাঁকে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরানো হোক। শাসক শিবিরের প্রবীণ নেতার সঙ্গে দেবপ্রিয়ের বৈঠকে ঠিক হয়, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই আবেদন জানানো হবে মল্লিক পরিবারের তরফে।

সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান জ্যোতিপ্রিয়ের দাদা দেবপ্রিয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে পাঠান। কালীঘাটের বাসভবনে গিয়ে মল্লিক পরিবারের অনুরোধের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান বালুর দাদা। মমতা আশ্বাস দেন, তাঁদের আবেদন ভেবে দেখবেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন দ্রুত জ্যোতিপ্রিয়কে দফতরের দায়িত্ব থেকে সরানোর সুপারিশ রাজভবনে পাঠাতে। তাঁর নির্দেশ মতো ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপারিশের ফাইল যায় রাজভবনে। ১৬ তারিখ নবান্নের সুপারিশে সিলমোহর দেন রাজ্যপাল।

জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতারের পর বার বার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, বিজেপি ‘ষড়যন্ত্র’ করেই বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। তাঁর এমন বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল, কেন তিনি গ্রেফতারের পরেও জ্যোতিপ্রিয়কে মন্ত্রিত্বে রেখে দিয়েছেন। অথচ ২০২২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থকে সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়কে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে না-সরানোয় তাঁর ‘প্রভাবশালী’ তকমা থেকে গিয়েছিল। যা তাঁর জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছিল বলে মন্ত্রীর পরিবারের লোকেরা মনে করছিলেন। মূলত তাঁদের আবেদনেই জ্যোতিপ্রিয়কে অব্যাহতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশিই ওই সিদ্ধান্তে জনমানসেও ‘বার্তা’ দেওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement