নরেন্দ্র মোদী এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। ফাইল চিত্র।
বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংসদ অচল করার অভিযোগ বারে বারেই শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে। এ বার তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন তার জবাব দিলেন। টুইটারে সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগ করলেন নানা তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে।
ডেরেক শুক্রবার টুইটারে লিখেছেন, ‘মোদী বলেন বিরোধীরা সংসদ অচল করে নিজেরাই নিজেদের গোলে বল ঢোকাচ্ছে। মোদী আপনার ডিফেন্স দুর্বল। দেখুন প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ড হিসেবে কেমন আমরা আপনাকে চার গোল দিলাম। আরও আসছে।’
এর পরেই অলিম্পিক্সের ভারতীয় দলকে অভিনন্দন জানিয়ে চারটি গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করেছেন ডেরেক। তাতে চলতি বাদল অধিবেশনে বিতর্ক ছাড়াই একের পর এক বিল পাশ থেকে শুরু করে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদ খালি রাখার মতো প্রসঙ্গ রয়েছে।
‘Opposition stalling #Parliament, scoring self goals’ says Modi.
— Derek O'Brien | ডেরেক ও'ব্রায়েন (@derekobrienmp) August 6, 2021
Mr. Modi, you have a weak line of defence. As an Oppn forward, see how easily we can SCORE FOUR GOALS against you👇More coming🏑
And talking about hockey, congratulations to all our Olympians from all of us. pic.twitter.com/KpUUbA3NlX
প্রথম পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বাদল অধিবেশনে মোট ২৫টি বিল পাশ করিয়েছে সরকারপক্ষ। এর মধ্যে লোকসভায় পাশ হয়েছে ১৩টি বিল। রাজ্যসভায় ১২টি। এর মধ্যে রাজ্যসভার অধিবেশন হয়েছে আট দিন। লোকসভার মাত্র ছ’দিন। মোদী সরকার বিতর্ক ছাড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ডেরেকের তথ্য, গড়ে বিল পিছু আলোচনা হয়েছে ১০ মিনিট। রাজ্যসভার ক্ষেত্রে ১৩ মিনিট এবং লোকসভায় আট মিনিট।
অন্য একটি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে সপ্তদশ লোকসভার কার্যকালের ৭৮২ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচন হয়নি। লোকসভার বিধি অনুযায়ী প্রধান বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকার পদ দেওয়া হয়। যদিও মোদীর সরকারের প্রথম পর্বে, ষোড়শ লোকসভায় এডিএমকে সাংসদ থাম্বিদুরাইকে ওই পদটি দেওয়া হয়েছিল। তা-ও লোকসভা গঠনের ৭১ দিন পরে। অন্যদিকে, মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ লোকসভা গঠনের আট দিনের মাথায় ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন হয়েছিল। বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী জোট এনডিএ-কে পদটি ছেড়ে দিয়েছিল শাসক জোট ইউপিএ।
বিতর্কিত বিলগুলি আলোচনার জন্য ইউপিএ জমানায় সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর হার ছিল অনেক বেশি। চতুর্দশ লোকসভায় ৬০ এবং পঞ্চদশ লোকসভায় ৭১ শতাংশ। কিন্তু মোদী জমানার গোড়ায় ষোড়শ লোকসভায় তা নেমে আসে ২৫ শতাংশে। বর্তমান লোকসভায় তা মাত্র ১১ শতাংশ। অর্থাৎ স্থায়ী কমিটিকে সংশোধন-পরিমার্জনের সুযোগ না দিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিল পাশ করাচ্ছে সরকার পক্ষ।
এমনকি সংসদকে পাশ কাটাতে বিলের বদলে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি প্রসঙ্গেও মোদী সরকারের ভূমিকা তুলে ধরেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা। সেই প্রবণতা যে ক্রমবর্ধমান তা বোঝাতে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, মোদীর পূর্বসূরীদের জমানায় গড়ে ১টি বিল পিছু ২টি অধ্যাদেশ জারি হত। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রথম পাঁচ বছরে সেই হার বেডে় ১০টি বিল পিছু ৩.৫টি অধ্যাদেশে পৌঁছে যায়। সপ্তদশ লোকসভায় সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৭টি।