ব্যবসায়ীকে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার নামে দেড় কোটি টাকার ঘুষ, তমলুকে ধৃত সস্ত্রীক বিজেপি নেতা

এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক নবারুণ নায়েক এবং তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী নায়েক রায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:১৭
Nabarun

তমলুক থানায় ঢোকার আগে নবারুণ নায়েক (হলুদ রঙের পাঞ্জাবি) এবং তাঁর স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

ভিন্‌রাজ্যে কম্বল সরবরাহের বরাত পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কলকাতার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক নবারুণ নায়েক এবং তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী নায়েক রায়। মঙ্গলবার তমলুক থানার পুলিশ টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে। সংশ্লিষ্ট মামলায় আগে একাধিকবার নবারুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নবারুণ এক সময় বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসাবে দায়িত্বভার সামলেছেন। দুর্নীতির অভিযোগে বিজেপি নেতার গ্রেফতারির ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুরে রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, চলতি বছরের অগস্টে অসমের সরকারি তরফে কিছু কম্বল কেনার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। কোকরাঝাড়ে কম্বল সরবরাহের বরাতের খবর পান কলকাতার পঞ্চসায়রের এক ব্যবসায়ী। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা, এক বন্ধু মারফত সেই খবর পেয়ে কম্বল সরবরাহের বরাতের বিষয়টি দেখার জন্য তমলুকের বিজেপি নেতা নবারুণ নায়েক এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ, কম্বলের বরাত পাইয়ের দেওয়ার জন্য নবারুণ ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ‘কমিশন’ দাবি করেন। শুধু তাই নয়, পরে ওই ব্যবসায়ীর টাকায় নবারুণের স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠরা গুয়াহাটি হয়ে কোকরাঝাড় যান। তার পর দুই দফায় ৩৯ কোটি ৬০ লক্ষ এবং ৫০ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার কম্বল সরবরাহের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার সময় নবারুণ গোয়ায় ছিলেন। তাঁকে ওই ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ মোবাইলে পাঠানো হলে সেগুলো বৈধ বলে জানান বিজেপি নেতা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীকে জানানো হয়, কমিশনের টাকা হাতে পেলেই পাকাপাকি চুক্তি হবে। এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীর কলকাতার অফিস থেকে টেন্ডারের কমিশন বাবদ দু’দফায় এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নবারুণের বিরুদ্ধে।

অন্য দিকে, ওই ব্যবসায়ী কোকরাঝাড়ে গিয়ে জানতে পারেন তাঁকে দেওয়া ‘ওয়ার্ক অর্ডার’টি ভুয়ো। তার পরেই গত অক্টোবরের ১০ তারিখ তমলুক থানায় নবারুণ, নবারুণের স্ত্রী-সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে তমলুক থানার পুলিশ দফায় দফায় নবারুণ ও তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত নবারুণ দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, সেই সময় আমি ধর্নামঞ্চে হাজির ছিলাম। আর ঘটনাটি ঘটেছে বলা হচ্ছে গুয়াহাটিতে। অথচ সেখানে মামলা হল না। অসমের ঘটনায় তমলুকে মামলা হল। এখান থেকে পরিষ্কার যে আমার বদনাম করার জন্য এটা করা হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’

এই ঘটনায় বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছে তৃণমূল। রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি পার্থসারথি মাইতি বলেন, “পুলিশ ঘটনার অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করছে। একটা বড় অঙ্কের টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে জানতে পারছি। আইন তো আইনের পথে চলবে। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।” অন্য দিকে, বিজেপির তমলুক নগর মণ্ডলের সভাপতি সুকান্ত চৌধুরীর দাবি, “নবারুণ নায়েক বড় মাপের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা আইনি বিষয়। এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগাযোগ নেই। তবে তিনি যদি কোনও অপরাধ করে থাকেন, আইনের মাধ্যমেই তার বিচার হবে।’’ তবে সুকান্ত বলছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন পুরোটাই সাজানো ঘটনা। নবারুণ নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।

Advertisement
আরও পড়ুন