বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তাঁর ঝাড়গ্রাম সফরে যাওয়ার কথা। দুপুরে সেই সফরে রওনা হওয়ার আগে মমতা বুদ্ধদেবকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে যান। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষযাত্রায় সমস্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার। মমতা জানান, দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন রাজ্য সরকারের তরফে বিষয়টি তদারক করার জন্য।
বুদ্ধদেবের প্রয়াণের খবর প্রশাসনিক সূত্রে জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনই তিনি মন্ত্রিসভার দুই সহকর্মীকে বলেন দ্রুত বুদ্ধদেবের বাড়িতে পৌঁছে যেতে। আনন্দবাজার অনলাইনকে মমতা বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের তরফে থেকে ওঁর শেষযাত্রায় সমস্ত শ্রদ্ধা দিয়ে যাবতীয় সহযোগিতা করব। ওঁর দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেখানে যেখানে ওঁরা অন্তিমযাত্রায় ওঁকে নিয়ে যেতে চান, তার সুষ্ঠু দেখভালের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। যদি ওঁরা রবীন্দ্রসদন, নন্দনে বা বিধানসভায় ওঁকে নিয়ে যেতে চান, আমরা সমস্ত সহযোগিতা করব।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘আর যেখানে ওঁরা ওঁকে শায়িত রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি সেখানেই গিয়ে ওঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসব। শুনেছি, সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওঁর দেহ বাড়িতেই রাখা হবে। তাই সেখানেই আমি গিয়ে আমার শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসব।’’ মমতা তাঁর কথা মতো সময়ের আগেই সেখানে পৌঁছে যান।
রাজনৈতিক জীবনে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুযুধান ছিলেন বুদ্ধদেব-মমতা। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেই মমতা রাজ্যের শাসনক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু তার পর থেকে তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অটুট থেকেছে। রাজভবনে তাঁর শপথে বুদ্ধদেবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা। প্রাক্তন বর্তমানের সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। সৌজন্যের সেই ছবি পশ্চিমবঙ্গবাসীর মধ্যে অমলিন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে যে রাজনৈতিক তিক্ততা ছিল দু’জনের মধ্যে, শেষ কয়েক বছরে তার রেশ ছিল না একটুও। মমতা একাধিক বার বুদ্ধদেবের বাড়িতে গিয়েছেন তাঁকে দেখতে। বুদ্ধ-জায়া মীরা ভট্টাচার্যের সঙ্গে মমতার যোগাযোগ অটুট ছিল। বুদ্ধদেব একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেই সময়েও তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন মমতা। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে মীরাকে ফোন করে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গায়। রাজনীতি আর মানবিকতা আলাদা। রাজনীতি মানবিকতাকেই সবচেয়ে আগে সম্মান জানায়। খুব খারাপ লাগছে। ওঁর মুখটা মনে পড়ছে। ওঁর স্ত্রী খুব ভাল। যখনই ওঁর বাড়িতে গিয়েছি, ওঁর স্ত্রী যত্ন করে, সম্মান দিয়ে কথা বলতেন।’’