(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী,নন্দিনী চক্রবর্তী, কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব পদে নন্দিনী চক্রবর্তীর নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই আপত্তি এবং বিরোধিতা খানিকটা মশকরার সুরে উড়িয়ে দিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। মঙ্গলবার তিনি বললেন, ‘‘শীতকালে অনেকের স্কিনে (ত্বকে) সমস্যা হয়। শুভেন্দুরও সেই রকম হয়েছে। সারা ক্ষণ চিড়বিড় করছে! ওঁকে বলব, উনি বরং ভাল করে ভেসলিন মাখুন, ভাল সাবান মেখে রোজ স্নান করুন।’’
সেই ভেসলিন এবং সাবান কি তিনি বা তৃণমূল উপহার দেবে শুভেন্দুকে? জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, ‘‘না-না! যে তোলাবাজি করেছে, লুট করেছে, তাকে আবার এ সব উপহার দিতে হয় নাকি? ও নিজেই কিনতে পারবে।’’
প্রসঙ্গত, সোমবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাদিবসে শাসক শিবিরের নেতাদের বিবিধ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। কুণাল প্রবীণ নেতাদের উদ্দেশে নানাবিধ আক্রমণ শানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, কুণালের এ-ও অভিযোগ ছিল যে, কয়েক জন মন্ত্রী শুভেন্দু সম্পর্কে ‘গোল গোল’ কথা বলছেন। সরাসরি তাঁকে ‘চোর’ বলছেন না। শুভেন্দুকে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ তিনিই করেন। মঙ্গলবার হালকা চালে হলেও শুভেন্দুকে ‘লুটেরা’, ‘তোলাবাজ’ বলে আক্রমণ করলেন কুণাল।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব পদে নন্দিনীর নিয়োগ নিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের ১৩ জন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং ৫ জন প্রধানসচিবকে বাদ দিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর অবৈধ ভাবে স্বরাষ্ট্রসচিব নিয়োগ করেছে।’’ গত রবিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মুখ্যসচিবের (বিপি গোপালিক) নাম ঘোষণা করে নবান্ন। অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়। তাঁর জায়গায় স্বরাষ্ট্রসচিব পদ থেকে উন্নীত হয়ে মুখ্যসচিব হন গোপালিক। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনে কার্যত ‘চমক’ দিয়ে পর্যটন সচিব নন্দিনীকে করা হয় স্বরাষ্ট্রসচিব। সরকারি ঘোষণার পর সোমবার থেকে নবান্নে নিজের দফতরে এসে কাজও শুরু করেছেন নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব।
গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য প্রশাসনে নন্দিনীর উত্থান-পতনের পালা চলেছে। রাজ্যপালের প্রধান সচিব ছিলেন নন্দিনী। কিন্তু সিভি আনন্দ বোস তাঁকে ‘রিলিজ়’ দিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর নন্দিনীকে পর্যটন সচিব করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তাঁকে দেওয়া হয় পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারপার্সনের পদও। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয় পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালীনি নন্দিনীকে সরিয়ে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে। পরে বাবুলকেই দফতর থেকে সরিয়ে আবার ইন্দ্রনীলকে পর্যটনের দায়িত্ব দেন মমতা। যা নিয়ে আমলা মহলে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। বছরের শেষ দিন নন্দিনীর নিয়োগে ফের তাঁর ‘উত্থান’ দেখা গেল।