লোকসভা ভোটের প্রচারে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোট মিটেছে প্রায় ছ’মাস হল। বিধানসভা ভোটের বাকি এখনও প্রায় দু’বছর। কিন্তু রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা এলাকায় এখন থেকেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিচ্ছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করে বিধানসভা ধরে ধরে জনসংযোগ বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হলেন শাসকদলের বিধায়কেরা। যা দেখে শুনে চ্যালেঞ্জ এবং কটাক্ষ ছুড়ে দিল বিজেপি।
হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয়ী প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ৮০ হাজার ভোটে হারিয়ে প্রথম বার সাংসদ হয়েছেন অভিনেত্রী রচনা। কিন্তু বিধানসভা ধরে ধরে ভোট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থী রচনা পিছিয়ে ছিলেন চুঁচুড়া, বলাগড় এবং সপ্তগ্রাম বিধানসভায়। শুধু চুঁচুড়া বিধানসভা এলাকাতেই বিজেপির কাছে প্রায় সাড়ে আট হাজার ভোটে হেরেছে তৃণমূল। কিন্তু ভুল কোথায়? এত সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন ভোটাররা মুখ ফেরালেন? সেই সব কারণ অনুসন্ধানে এ বার সরাসরি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবেন বিধায়কেরা। শুনবেন, মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, কোনও পঞ্চায়েত বা পুরসভার জনপ্রতিনিধি ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন কি না, তিনি এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন কি না, তারও খোঁজ নেওয়া হবে। বিজেপির ‘লিড’ পাওয়া বুথগুলির ভোটাররা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা ঠিকঠাক পাচ্ছেন কি না, খতিয়ে দেখা হবে। তার পর বিধায়ক সরাসরি জানতে চাইবেন, কেন বিজেপিকে ভোট দিলেন ওই ভোটাররা। বলা হবে, শাসকদলের তরফে যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে, সেগুলির সংশোধনও শীঘ্রই হবে। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, ‘‘যে যে এলাকায় ভোটে পিছিয়ে পড়েছিলাম, সেখানে সেখানে জনসংযোগ করা হবে। মানুষের আস্থা ফিরে পেতে ওই এলাকাগুলোয় যাব। প্রতিটি মানুষের কাছেই যাব। আশা করছি, মানুষের আস্থা ফিরে পাব আবার।’’
অসিত জানান, গত লোকসভা ভোটে তাঁর বিধানসভা এলাকার কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতেই সাড়ে চার হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তাই ওই পঞ্চায়েত এলাকার দেবীপুর থেকে জনসংযোগ যাত্রা শুরু করবেন। তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘যে এলাকায় জনসমর্থন আমাদের বিরুদ্ধে, সেই সমর্থন ফেরানোই উদ্দেশ্য। ২০১৯ সালেও পিছিয়ে পড়েছিলাম আমরা। কিন্তু ২০২১ সালে সেটা ‘রিকভারি’ করেছি। একই ভাবে ২০২৪ সালে পিছিয়ে পড়া জায়গার জনসমর্থন ২০২৬ সালে ফিরিয়ে আনব।’’ আত্মবিশ্বাসের সুরে অসিত জানিয়েছেন, তিনি আবার প্রার্থী হোন বা না হোন, দল যাঁকেই প্রার্থী করবে, তাঁকে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে জেতাবেন। একই ভাবে হুগলির অন্য বিধানসভা এলাকাগুতিতেও জনসংযোগ যাত্রা করার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল।
শাসকদলের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পালের মন্তব্য, ‘‘তিন বারের বিধায়ক (অসিত) এখন বলছেন, জনসংযোগ করবেন! তা হলে এত দিন মানুষের কোনও খোঁজ রাখেননি উনি?’’ বিজেপি নেতার সংযোজন, ‘‘তৃণমূল সরকার দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে, সেটা সবাই জানেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য— সব দফতরেই চাকরিতে দুর্নীতি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ট্যাবের টাকাও চুরি করছে। আবার গরিব মানুষের রেশনও চুরি করে তৃণমূল। অবশ্য ভালই হবে, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সে সব শুনবেন বিধায়ক। তবে মানুষ ২০২৬ সালের লোকসভা ভোটে জবাব দেবে। তৃণমূল ব্যাপক ভাবে হারবে।’’