Flood Situation in Bengal

ডিভিসি অপরিকল্পিত ভাবে জল ছাড়ছে, হিসাব দিয়ে মোদীকে চার পাতার চিঠি মমতার, অভিযোগ বহু

মোদীকে লেখা চিঠিতে মমতা জানিয়েছেন, দক্ষিণবঙ্গে বর্তমানে ১০০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা বন্যাকবলিত। ৫০ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত। ২০০৯ সালের পর এমন বন্যা আর কখনও হয়নি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩
(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

অপরিকল্পিত ভাবে জল ছাড়ছে ডিভিসি। যে কাজ করার কথা, তাতে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য কাজে মনোনিবেশ করছে তারা। যার ফলে ভুগতে হচ্ছে বাংলাকে। ২০০৯ সালের পর থেকে এমন বন্যা দক্ষিণবঙ্গে হয়নি। পরিস্থিতি বিশদে ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চার পাতার সেই চিঠিতে ডিভিসির বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনে ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

Advertisement

মমতা চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘ডিভিসি পরিচালিত মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে অপরিকল্পিত ভাবে পাঁচ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম এবং বাঁকুড়ার মানুষ বিপর্যস্ত। এত জল ডিভিসি আগে কখনও ছাড়েনি। নিম্ন দামোদর এবং সংলগ্ন এলাকা বন্যায় ভেসে গিয়েছে। ২০০৯ সালের পর এমন বন্যা আর কখনও হয়নি।’’

মমতা আরও জানিয়েছেন, দক্ষিণবঙ্গে বর্তমানে ১০০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা বন্যাকবলিত। ৫০ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত। চাষের জমি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি নিজে বন্যাকবলিত এলাকাগুলি ঘুরে দেখে এসেছি। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা ‘ম্যান মেড’ বন্যা। ডিভিসি আরও পরিকল্পিত ভাবে বাঁধ এবং জলাধারগুলি নিয়ন্ত্রণ করলে এই বন্যা আটকানো যেত। ক্ষয়ক্ষতিও কমানো যেত।’’

গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ডিভিসি কতটা জল ছেড়েছে, তার হিসাব প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মমতা। তিনি জানান, রাজ্যের বিভিন্ন নদীর জলস্তরের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে ডিভিসিকে। কিন্তু জল ছাড়া কমেনি। তিনি বলেন, ‘‘ডিভিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি নিজে ফোনে কথা বলেছিলাম। তার পরেও ১৭ তারিখ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে।’’ রাজ্যের হিসাব অনুযায়ী, ১৬ তারিখ রাতে ৯০ হাজার কিউসেক থেকে পরবর্তী ৯ ঘণ্টার মধ্যে আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে। তিন দিনে জল ছাড়া হয়েছে মোট ৮.৩১ লক্ষ কিউসেক। এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, জল ছাড়া নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডিভিসি আলোচনা করেনি। দুই জলাধার জলপূর্ণ হয়ে যাওয়ার অনেক আগেই জল ছাড়া শুরু হয়েছে।

মমতা জানিয়েছেন, আরও বেশি বন্যার জল ধরে রাখার জন্য মাইথন, পাঞ্চেতের মতো জলাধারগুলির সংস্কার প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘গত ১০ বছর ধরে ডিভিসিকে বলে আসছি, জলাধারের সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু ডিভিসি বা কেন্দ্রীয় সরকার সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি। নীতি আয়োগের বৈঠকেও আমি এ বিষয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। আমাদের সাংসদ এবং মন্ত্রীরাও বিষয়টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সামনে বার বার তুলে ধরেছেন। তার পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এই দুই জলাধারের ধারণক্ষমতা ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে দিন দিন। বিষয়টিকে আর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।’’

মমতার বক্তব্য, দামোদরের তীরে বন্যা ঠেকানো ডিভিসির প্রধান কাজ। তা না করে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছে। এতে বাংলার ক্ষতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্যেও আমরা বহু দিন ধরে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র তা-ও কোনও পদক্ষেপ করেনি। ঘাটাল এই বন্যায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’’ এর পরেই হুঁশিয়ারির সুরে মমতা লিখেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে বাধ্য হব। বছরের পর বছর এই বঞ্চনা আমরা মানতে পারব না। আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে এ বিষয়ে পদক্ষেপের নির্দেশ দিন। এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিন। বন্যা মোকাবিলার জন্য কেন্দ্র মানুষের স্বার্থে বাংলার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করুক।’’

উল্লেখ্য, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বুধবার সেই জেলাগুলি পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন মমতা। হুগলি হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে রাত্রিবাস করার পর পূর্ব মেদিনীপুরে যান বৃহস্পতিবার। প্রথম থেকেই এই পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেছেন ডিভিসিকে। অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে জল ছাড়ছে ডিভিসি। বাংলার বিপদের কথা ভাবা হচ্ছে না। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও তিনি বার বার কথা বলেছেন বলে জানান। এ বার প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি দিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement