Suvendu Adhikari

শুভেন্দুর অঙ্গে নয়া কৌশল লেখা লড়াইয়ের জার্সি, যে কথা আগেই জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন

আগে তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার কথা বলছেন শুভেন্দু। এর পরের আর্জি বিজেপিকে ভোট দিন। শুভেন্দু যে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো নীতি নিতে চাইছেন তা আগেই জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:৩০
BJP leader Suvendu Adhilari wears No Vote To Mamata T-shirt

মঞ্চে উঠেই গায়ে সাদা জার্সি চড়ালেন শুভেন্দু। বুকে লেখা ‘নো ভোট টু মমতা’। জার্সির পিছনে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

হবে কি হবে না জল্পনাশেষে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা কৃষক সমাবেশ হল। শেষবেলায় আদালতের নির্দেশ পেয়ে শুধু সভা করাই নয়, নতুন রূপও দেখালেন শুভেন্দু। মঞ্চে উঠেই গায়ে চড়ালেন সাদা জার্সি। বুকে লেখা ‘নো ভোট টু মমতা’। জার্সির পিছনে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র।

সাগরদিঘিতে তৃণমূলকে হারিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী জেতার পর থেকেই এই স্লোগান তোলার কথা বলতে শুরু করেন শুভেন্দু। সহজ লক্ষ্য— শাসক তৃণমূলের ভোট কমিয়ে দেওয়া। যদিও তৃণমূলের একাংশ বলছেন, শুভেন্দুর আসল লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট যাতে তৃণমূলের থেকে অন্য শিবিরে চলে যায়। শাসকের ভোট কমানোর যে লক্ষ্য শুভেন্দু নিয়েছেন, তা আগেও দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের সলতে পাকানোর সময় সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ২০০৯ সালে এমন নীতিই নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার সেই পথে হেঁটেই যে শুভেন্দু মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছেন তা আগেই বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বলা হয়েছিল, ১৪ বছর আগে মমতার দেখানো রাস্তাতেই তৃণমূল তথা মমতার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে প্রচারে ‘কৌশলগত’ বদল আনছেন শুভেন্দু।

Advertisement

বিজেপির জন্য ভোট চাওয়ার আগে তৃণমূলকে সরানোর বার্তা দেওয়ার নীতি যে শুভেন্দু নিতে চলেছেন, তা আগেই ঘনিষ্ঠদের কাছে জানিয়েছিলেন। তাঁর এক অনুগামী আগেই বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দু’দা এখন সভায় গিয়ে আগে বলছেন, তৃণমূলকে ভোট দেবেন না। আগে ওদের সরাতে হবে। আগে মমতাকে হটাতে হবে। তার পরে বলছেন, বিজেপিকে ভোট দিন।’’

২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে থেকেই মমতার মূল স্লোগান ছিল ‘লাল হটাও, দেশ বাঁচাও’। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, আগে সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তার পরে যা হবে দেখা যাবে। শুভেন্দু তখন তৃণমূলে। সেই নজির থেকেই তিনি এখন ‘নো ভোট টু মমতা’ নীতি গ্রহণ করেছেন কি না, তা অবশ্য শুভেন্দু কারও কাছে খোলসা করেননি।

সেই সময় কংগ্রেস তো বটেই, এসইউসিআই বা পিডিএসের মতো বামপন্থী দলের সমর্থনও নিয়েছিলেন মমতা। তাতে ফলও পেয়েছিলেন হাতেনাতে। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ফল চমকে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। যা ২০১১ সালে সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করার পথ অনেকটাই তৈরি করে দিয়েছিল। যদিও ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-সহ অন্য সঙ্গীদের জোট ভেঙে যায়। তখন থেকেই তৃণমূল রাজ্যে ‘একলা চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী। বস্তুত, সেই নীতিতে একের পর এক বিধানসভা ভোটে সাফল্যও পেয়েছেন মমতা।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু সম্প্রতি ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগান প্রকাশ্যেই তুলতে শুরু করেছেন। প্রথমে বিধানসভার বাইরে এবং পরে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সাংবাদিক বৈঠকে। তাঁর দাবি, সিপিএম-কংগ্রেসও আগে ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগান তুলুক। তার পরে মানুষ ঠিক করে নেবেন কাকে ভোট দেবেন।

প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর এই স্লোগানকে অনেকে ‘জোট গড়ার বার্তা’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি জোটের কথা বলিনি। আমার বক্তব্য, সিপিএম বা কংগ্রেস মানুষকে এটা বলুক যে, তৃণমূলকে ভোট নয়। এটা নিশ্চিত হওয়ার পরে মানুষ ঠিক করবেন তাঁরা কাকে ভোট দেবেন।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই শুভেন্দুর আশা, তৃণমূলকে ভোট না দিলে রাজ্যের মানুষ ‘বিকল্প’ হিসাবে এখন প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকেই বেছে নেবেন।

তবে সিপিএম বা কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত শুভেন্দুর ডাকে সাড়া দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। বিজেপির প্রথম সারির কোনও নেতার মুখেও এই স্লোগান এখনও পর্যন্ত শোনা যায়নি। তবে সেই স্লোগান নিয়ে এই প্রথম দলীয় মঞ্চে দেখা গেল শুভেন্দুকে। মঞ্চে সারাক্ষণই ওই জার্সি পরে ছিলেন শুভেন্দু। সঙ্গে গলায় গামছা। সেই বেশেই কৃষকসভায় বক্তৃতা করেন। সেই বক্তব্যেও বারবার ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগান তোলেন। বলেন, ‘‘বারবার এই স্লোগান তুলতে থাকুন। বলতে থাকুন! দেখবেন, তাতেই তৃণমূল হারছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement