Mamata Banerjee on Suvendu Adhikari

গদ্দাররা বাড়িতে ছিল, আমি এসেছিলাম! নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ তুলে নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ মমতার

মমতা সাধারণত শুভেন্দুর নাম নেন না। তিনি বিরোধী দলনেতাকে সাধারণত ‘গদ্দার’ বলেই সম্বোধন করে থাকেন। অতএব খেজুরির বক্তব্যে মমতা যে ‘গদ্দার’ বলতে শুভেন্দুকেই বুঝিয়েছেন, তা সহজেই অনুমেয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:২২
Mamata Banerjee Attacks Suvendu Adhikari

নাম না করেই শুভেন্দুকে আক্রমণ করেন মমতা। প্রতীকী ছবি।

এককালের গণ আন্দোলনের সঙ্গী শুভেন্দু অধিকারী এখন তাঁর প্রতিপক্ষ। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার তাঁর সেই প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠের অদূরে দাঁড়িয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এলেন। তবে কিছুটা ‘গান্ধীগিরি’ করে।

বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে চার দিনের জেলা সফরে সোমবার গিয়ে পৌঁছেছেন মমতা। নন্দীগ্রামের পাশে খেজুরিতে তাঁর প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে মমতা বললেন, ‘‘নন্দীগ্রামে যখন সূর্যোদয় হয়েছিল, তখন গদ্দাররা মাঠে ছিল না। আমি প্রথম ছুটে এসেছিলাম! যারা আমাদের থেকে সব নিয়ে এখন বড় বড় কথা বলছে, তাদের উদ্দেশে একটাই কথা বলব। ঈশ্বর-আল্লা তেরো নাম, সব কো সুমতি দে ভগবান।’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর এই প্রথম পূর্ব মেদিনীপুরে নন্দীগ্রামের এত কাছাকাছি এলেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামে বিধানসভা ভোটে শুভেন্দুর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। সোমবার খেজুরির যেখানে তাঁর সভার আয়োজন হয়েছিল, সেখান থেকে মাত্রই ৫ কিলোমিটার দূরত্বে নন্দীগ্রাম। সোমবার খেজুরির সভা থেকে মমতা বলেছেন, ‘‘আমি অনেক দিন বাদে, নির্বাচনের পর সম্ভবত এই প্রথম এখানে আবার এলাম।’’ খেজুরিকেই কেন সভা করার জন্য বেছে নিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘খেজুরিতে অনেকবার এসেছি। নন্দীগ্রাম, কাঁথি পূর্ব মেদিনীপুরের আরও অনেক জায়গার রাস্তা এই খেজুরিতে এসে মিলেছে।’’

খেজুরির সঙ্গে তাঁর পুরনো সম্পর্কের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। স্মৃতি হাতড়ে মমতা বলেছেন, ‘‘আমার এখন বলতে লজ্জা লাগে। যখন নন্দীগ্রামে সূর্যোদয় হয়েছিল, সূর্যোদয়ের নামে কাউকে ঘর থেকে বার হতে দেওয়া হয়নি ১০ দিন। ১৪ মার্চ যখন গুলিতে মারা গিয়েছিল, খেজুরি দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হত না। যারা বড় বড় কথা বলে, সেই সময় সেই গদ্দারেরা মাঠে ছিল না। বাড়িতে বসেছিল। লুকিয়েছিল। আমি সে দিন আপনাদের জন্য ২৬ দিন অনশন করছিলাম। ১৪ মার্চের পর আমি ছুটে এসেছিলাম।’’ মমতা সাধারণত শুভেন্দুর নাম নেন না। তিনি বিরোধী দলনেতাকে সাধারণত ‘গদ্দার’ বলেই সম্বোধন করে থাকেন। অতএব খেজুরির বক্তব্যে মমতা যে ‘গদ্দার’ বলতে শুভেন্দুকেই বুঝিয়েছেন, তা সহজেই অনুমেয়।

এর পর আবার নাম না করেই শুভেন্দুকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘যারা আমাদের থেকে খেয়ে, সব নিয়ে এখন বড় বড় কথা বলছে, তাদের নামে একটিও কথা বলব না! শুধু বলব, ভগবান, আমরা যেন সহ্য করতে পারি। আর ওদের সুমতি হোক।’’

তবে ‘সুমতি’ বলে গান্ধীগিরির পাশাপাশি শুভেন্দুদের কটাক্ষও করেছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘সব জবাব মানুষ দেবে। ওরা খেজুরি, নন্দীগ্রাম, তমলুকের ছেলেদের জেলে পাঠিয়েছে। কি? না নির্বাচনের আগে বাবুর গায়ে একটু আঁচড় লেগেছে। আর আমার যে পা-টা ভেঙে গিয়েছিল? এখনও ফুলে আছে। তা-ও মিছিল করেছি। আসলে আমি ছে়ড়ে যাওয়ার লোক নই। যাবও না। যত দিন বাঁচব আমার আন্দোলন, সংগ্রামী জীবন রুখতে পারবে না।’’

সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরে মমতার সভার আগে রবিবার শুভেন্দু রাস্তা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেছিলেন, ‘‘ওঁকে গ্রামের রাস্তাগুলো দেখিয়ে নিয়ে আসবেন।’’ খেজুরির সভা থেকে রাস্তা নিয়েও বলেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি রাস্তা করছি আর ওরা ভাঙছে। বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাস্তা ভাঙছে। কী করব? ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা করার পরিকল্পনা করেছি। সেটা পুরোটাই রাজ্যের টাকায় হচ্ছে। কেন্দ্র একটা টাকাও দেয়নি। এ সব নিয়ে আপনাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement