Suvendu Adhikari

প্রচারে ‘কৌশলগত’ বদল, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে মমতার বিরুদ্ধে মমতার পথেই হাঁটছেন শুভেন্দু

বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, ‘লাল হটাও, দেশ বাঁচাও’। ১৪ বছর পর শুভেন্দু সেই অস্ত্রেই মমতার বিরোধিতায় নেমেছেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৬
BJP leader Suvendu Adhikari wants to use old slogan of TMC supremo Mamata Banerjee against her

১৪ বছর আগে মমতার দেখানো রাস্তাতেই তৃণমূল তথা মমতার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে প্রচারে ‘কৌশলগত’ বদল এনেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। — ফাইল চিত্র।

ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, জনসভায় গিয়ে বিজেপির হয়ে ভোট চাইছেন না। বরং বলছেন, আগে তৃণমূলকে (অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে) হটাতে হবে। শুভেন্দু অধিকারীর এক আস্থাভাজনের কথায়, ‘‘শুভেন্দু’দা এখন সভায় গিয়ে বলছেন, তৃণমূলকে ভোট দেবেন না। আগে ওদের সরাতে হবে। তার পরে বলছেন, বিজেপিকে ভোট দিন।’’

যা শুনে অভিজ্ঞদের মনে পড়ে যাচ্ছে ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে মমতার স্লোগান ‘লাল হটাও, দেশ বাঁচাও’-এর কথা! অর্থাৎ, আগে সিপিএমকে সরাতে হবে। তার পরে যা হবে দেখা যাবে। শুভেন্দুও তখন ছিলেন তৃণমূলে। সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যূত করতে মমতা ‘সমমনোভাবাপন্ন’ কংগ্রেস তো বটেই, এসইউসিআই বা পিডিএসের মতো বামপন্থী দলের সমর্থনও নিয়েছিলেন। তাতে ফলও পেয়েছিলেন হাতেনাতে। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে অভূতপূর্ব ফল করেছিল তৃণমূলের নেতৃত্বে সেই জোট। যার ফলে ২০১১ সালে সিপিএমকে রাজ্যের ক্ষমতাচ্যুত করার পথ অনেকটাই সুগম হয়ে গিয়েছিল। যদিও ক্ষমতায় আসার পরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল এবং অন্য সঙ্গীদের জোট ভেঙে যায়। তখন থেকেই তৃণমূল ‘একলা চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী।

Advertisement

১৪ বছর আগে মমতার দেখানো সেই রাস্তাতেই তৃণমূল তথা মমতার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে প্রচারে ‘কৌশলগত’ বদল এনেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগান তুলতে চাইছেন তিনি। গত শনিবারেই শুভেন্দু দাবি করেছেন, পরবর্তী নির্বাচনে ‘নো ভোট টু মমতা’ মনোভাব নিয়ে মানুষ তৈরি হবেন। এমনও দাবি করেন যে, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘মানুষের জোট’ হবে। বিভিন্ন বিরোধীদল তাদের আদর্শ ও পতাকা বাঁচিয়েই তৃণমূলকে হারানোর অভিন্ন লক্ষ্যে তৈরি হবে রাজ্যে। বামেরা অবশ্য শুভেন্দুর পছন্দের জোট-তত্ত্ব খারিজ করে দেয়। শুভেন্দুর প্রস্তাবে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘শুভেন্দু কেন এ সব বলেছেন, উনিই জানেন! ওঁর দলকে চালায় আরএসএস। আমরা আরএসএস-বিজেপির সঙ্গে নেই। বিজেপি এবং তৃণমূল— দুই শক্তির বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’ আর তৃণমূল দাবি করে, লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে যেখানে যে শক্তিশালী, তাকেই মানুষ ভোট দেবেন।

তার পরে সোমবার দিল্লিতে প্রথমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শুভেন্দু। বৈঠক করেন উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও। এর পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর জোট-তত্বের ব্যাখ্যা দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘আমি জোটের কথা বলিনি। আমার বক্তব্য, সিপিএম বা কংগ্রেস মানুষকে এটা বলুক যে, তৃণমূলকে ভোট নয়। এটা নিশ্চিত হওয়ার পরে মানুষ ঠিক করবেন তাঁরা কাকে ভোট দেবেন।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই শুভেন্দুর দাবি, তৃণমূলকে ভোট না দিলে মানুষ ‘বিকল্প’ হিসাবে বিজেপিকেই বেছে নেবেন।

তবে শুভেন্দু তাঁর প্রচারে ‘কৌশলগত’ বদল আনলেও তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই। এই পথে চলে মমতা সাফল্য পেলেও এখন বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। প্রথমত, তখন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে জনমত এমনিতেই শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। মমতা কুশলী রাজনীতিকের মতো সেটি বুঝতে পেরে অন্য দলগুলিকেও সিপিএম-বিরোধী লড়াইয়ে শামিল করতে পেরেছিলেন। অন্য বিরোধী দলগুলিও তখন জোটে আসতে রাজি হয়ে গিয়েছিল নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আরও জোরদার করে তুলতে। তারাও চেয়েছিল রাজ্যে সিপিএমের-বিরোধিতার ঝড়ের অঙ্গ হতে। ফলে বিরোধী ঐক্য গড়তে কুব একটা বেগ পেতে হয়নি। যে কোনও উপায়ে সিপিএমকে হটাতে হবে— এই সামগ্রিক এবং সাধারণ লক্ষ্য সামনে রেখে তারা রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো পরিস্থিতি তো নেই-ই। বরং বিজেপির নামের সঙ্গে ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা থাকায় বাম বা কংগ্রেসের পক্ষে এমন কোনও তত্ত্ব মেনে নিয়ে এগোন মুশকিল। জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। তাই শুভেন্দুর কথায় কংগ্রেস আদৌ আগ্রহ দেখাবে কি না, সে প্রশ্নও রয়েছে। তবে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, বিরোধী দলনেতা যে পথ নিয়েছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পরিচালিত সরকারের প্রতি মানুষের যে ‘ক্ষোভ’ রয়েছে, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। দলমতনির্বিশেষে মানুষ তাতে সাড়া দিলে রাজ্যে আবার ‘পরিবর্তন’ আসবে।

তেমনকিছু হবে কি না, তার ইঙ্গিত আগামী পঞ্চায়েত ভোট এবং লোকসভা ভোটে পাওয়া যেতে পারে। সেই নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেবে, শুভেন্দুর ‘কৌশল’ সফল হবে কি না।

আরও পড়ুন
Advertisement