মেসিদের সাফল্যের রহস্য কী? ছবি: রয়টার্স
বুধবার রাতে পোল্যান্ডকে হারানোর রেশ তখনও কাটেনি। বৃহস্পতিবার সবে ঘুম থেকে উঠেছেন আর্জেন্টিনার মানুষ। হঠাৎ রেডিয়ো ফুঁড়ে ভেসে এল একটা শব্দ, ‘লা স্কালোনেতা’। সঞ্চালক বার বার একটা শব্দ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করতে লাগলেন। সঙ্গে দিলেন ব্যাখ্যা। ধীরে ধীরে গোটা ফুটবলবিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ল এই দু’টি শব্দ। সঙ্গে সঙ্গেই আলোচনা শুরু হয়ে গেল, কী এই ‘লা স্কালোনেতা’? কেনই বা তাকে নিয়ে এত আলোচনা?
আর্জেন্টিনার জয়ের পর থেকেই এই শব্দ দু’টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। নেপথ্যে জুলিয়ান আলভারেসের গোল। এই গোলের আগে ২৭টি পাস খেলেছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। বিশ্বকাপে এর আগে এত পাসে কখনও গোল দিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। শেষ বার ২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর বিরুদ্ধে ২৬টি পাসে গোল হয়েছিল। দিয়েছিলেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো। তখন কেউ বলেছিলেন গোল হয়েছে ২৬টি পাসে, কেউ দাবি করেছিলেন ২৫টি পাসে। তবে বুধবারের ম্যাচে পাসের সংখ্যা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। আর এখানেই উঠে আসছে ‘লা স্কালোনেতা’র তত্ত্ব।
আকাশি-সাদা জার্সির জন্য দেশবাসী আর্জেন্টিনাকে ‘লা অ্যালবিসেলেস্তে’ বলে ডাকেন। গত বছর কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা জেতার পর একটি মিম ভাইরাল হয়েছিল। দেখা যায় আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি একটি বাস চালাচ্ছেন, পাশে বসে রয়েছেন লিয়োনেল মেসি। পিছনে রয়েছে গোটা দল। বাসটির রং এবং আর্জেন্টিনার জার্সির রং ছিল একই। সেই বাসের সামনে লেখা ‘লা স্কালোনেতা’। অর্থাৎ দল যে মেসি এবং স্কালোনির উপরেই নির্ভরশীল, সেটা বোঝাতেই এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়।
আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিকের মুখে প্রথম বার উচ্চারিত হয় এই শব্দ, যার উত্তরে এক সাক্ষাৎকারে স্কালোনি বলেছিলেন, “লোকে স্কালোনেতার কথা বললে বেশ অস্বস্তি হয়। ওদের ভালবাসা এবং সমর্থনে আমি গর্বিত। কিন্তু জাতীয় দলের ভার আমার কাঁধে, এটা ভাবাও বেশ চাপের। তবে মানুষের ভালবাসা তো আটকানো যায় না। তাতে যদি একটু অস্বস্তিতে পড়তে হয়, আর কী করা যাবে!”
স্কালোনিকে কোচ করার সময় অনেকেই আপত্তি করেছিলেন। প্রয়াত তারকা দিয়েগো মারাদোনা পর্যন্ত বলেছিলেন, “আর্জেন্টিনা ফুটবল কি পাগল হয়ে গিয়েছে?” তবে সব আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত করে স্কালোনি নিজের ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কোচিং জীবনের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে মেসি ছিলেন না। তখনই স্কালোনি এমন একটা দল গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে মেসির দরকার পড়বে না। তাঁরই কোচিংয়ে এখন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টারে। এমনকি সেমিফাইনাল পর্যন্ত পথ প্রায় কাঁটামুক্ত। এ বার দেখার, ‘লা স্কালোনেতা’ বাকি বিশ্বকাপে নতুন কোনও খেল দেখাতে পারে কিনা।