মুহাম্মদ ইউনূস (বাঁ দিকে) ও শেখ হাসিনা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে এ দিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ঘোষণা করেন, “শুধু জুলাই-অগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার করব।”
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ দাবি করেছেন, এই ১০০ দিনেই দেশের অর্থনীতির নিম্নমুখী গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে উন্নতির পথে আনতে পেরেছেন। ইউনূস বলেন, “আমরা যখন কাজ শুরু করি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজ়ার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজ়ার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। গত তিন মাসে রিজ়ার্ভে কোনও রকম হাত না দিয়ে আমরা ২০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ শোধ করেছি। জ্বালানি তেল আমদানির পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭.৮ কোটি ডলার থেকে কমিয়ে ১৬ কোটি ডলারে আনতে পেরেছি।”
এ দিন ইউনূস ভাষণের গোড়াতেই জুলাই-অগস্টের শহিদদের পাশাপাশি ‘মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহিদ’-কে স্মরণ করেন। সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, “ছাত্র-জনতা কম্পিউটারের মতো বাংলাদেশেরও ‘রিসেট’ বোতাম টিপে দিয়েছেন। ফলে অতীতের সব কিছুই মুছে গিয়েছে।” ইউনূসের এই মন্তব্যে হইচই পড়ে গিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে তাঁর এই মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধের অতীত মুছে ফেলাই ইউনূসদের লক্ষ্য। কিন্তু ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণদানের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসকে মোছা যাবে না।” কেউ কেউ আবার ১৯৭০-৭১-এ ইউনূস কোথায় ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান কী— এই সব প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিন তাই সচেতন ভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের শহিদের’ স্মৃতিচারণে বক্তৃতা শুরু করেন ইউনূস। তবে একই বন্ধনীর মধ্যে তিনি গণঅভ্যুত্থানে নিহতদেরও রাখেন। আহতদের অর্থসাহায্য দেওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মতো বিষয়ে সরকারের কাজকর্ম ও পরিকল্পনার কথা এ দিন ফলাও করে বলেন তিনি।
ইউনূস এ দিন দাবি করেন, “নির্বাচনের ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই ট্রেন আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।” তবে তাঁরা নির্বাচন কমিশন গঠন করেই কাজ শেষ করে দিতে চান না। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সংস্কার করা তাঁদের লক্ষ্য, যাতে বাংলাদেশে চিরটা কাল সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। এ জন্য একটু সময় লাগবে। ইউনূস বলেন, “আপনারাই এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন।” তিনি জানান, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে কমিশনগুলি সরকারের কাছে প্রস্তাব-পরামর্শ দিয়ে দেওয়ার পরে সংবিধান সংস্কারে গতি আসবে।
তবে ইউনূস সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলই মনে করেন, সংবিধান সংস্কারের এক্তিয়ার এই ‘অনির্বাচিত সরকার’-এর নেই। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের কথা তুলে বলেন, “এই অনুচ্ছেদে আপনি সব কিছু করতে পারবেন শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া। এখন সংসদ নেই, গণভোট নেই— এ সব প্রশ্নগুলো এখানে যৌক্তিক ও আইনগত ভাবে আসবে।” তিনি জানান, এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের কোনও আইনি এক্তিয়ারই নেই। এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে নির্বাচনই একমাত্র পথ।