ফাটা গোড়ালি থেকে মুক্তি মিলবে? ছবি: সংগৃহীত।
জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে। আর সেই ঠান্ডায় পা ফাটবে না?
ফি বছর শীত পড়তেই মাসকাবারি জিনিসের তালিকায় জায়গা করে নেয় ‘ক্র্যাক ক্রিম’ কিংবা পেট্রোলিয়াম জেলির ইয়া বড় একটি ডাব্বা! রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে সব দিয়ে ফাটা গোড়ালির নিরন্তর সেবাযত্ন চলে। পুরনো বটগাছের বাকলের মতো ফাটল ধরা, খসখসে পায়ের চামড়ায় ‘প্লাস্টিক পেন্ট’-এর প্রলেপ পড়ার মতো নিমেষে ঝিলিক খেলে যায়।
কিন্তু কোথায় কী? ফাটা গোড়ালির অমসৃণ চামড়ায় লেপ, কম্বলের রোঁয়া আটকে চড়চড় করে টান দিতে দিতেই দিনটা শুরু হয়। তার পর সারা দিন ধরে চলে লুকোচুরির খেলা। জনসমক্ষে বেরিয়ে-পড়া পায়ের ফাটল কখনও ঢেকে রাখতে হয় পোশাক দিয়ে। আবার কখনও তাকে সেঁধিয়ে থাকতে হয় পা-বন্ধ জুতোর আড়ালে। এত কিছু করেও যখন উদ্দেশ্য সফল হয় না, শেষমেশ মোজার শরণাপন্ন হতে হয়। কোনও রকমে মোজা জোড়ার ভিতর পায়ের পাতা দু’টিকে চালান করে দিতে পারলেই অনেকটা নিশ্চিন্ত!
তবে নেটপ্রভাবীরা বলছেন, এই মোজাই কিন্তু ফাটা গোড়ালি জোড়া দেওয়ার ওষুধ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু কাপড় বা উলের তৈরি মোজা নয়, ইদানীং সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ‘সিলিকন’ মোজাই নাকি রাতারাতি ফাটা গোড়ালি জুড়ে দিচ্ছে। সেই হুজুগে গা ভাসিয়ে অনলাইনে দেদার বিকোচ্ছে থলথলে, নরম সেই সিলিকনের মোজাগুলি। রাতে শোয়ার আগে গোড়ালির যৎসামান্য পরিচর্যা করে বিশেষ ওই মোজাটিতে পা গলিয়ে দিতে পারলেই খেল খতম! সারা রাত ওই ভাবে থাকতে পারলে ভাল। না হলে মিনিট পনেরো-কুড়িই যথেষ্ট।
হাতে সময় কম, কাজ থেকে ফিরে পায়ের ন্যূনতম যত্ন নিতেও ইচ্ছে করে না! চিন্তা নেই। তাঁদের জন্য রয়েছে এক বার ব্যবহারযোগ্য সিলিকনের বিশেষ মোজা। শুধু ফাটা গোড়ালি নয়, খসখসে পায়ের পাতা পেলব করার জন্য তার মধ্যে দেওয়া থাকবে ময়েশ্চারাইজ়ার, গ্লিসারিন, শিয়া বাটার কিংবা এসেনশিয়াল অয়েলের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস। অর্থাৎ ঈষদুষ্ণ জলে পা ধুয়ে ওই মোজা গলিয়ে ফেলতে পারলে আর কোনও ঝক্কি থাকবে না। কিন্তু বহু বার ব্যবহারযোগ্য, সাধারণ সিলিকন মোজার ক্ষেত্রে বাড়তি এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।
সিলিকনের মোজা পরলে আদৌ ফাটা গোড়ালি পেলব হয়?
ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া কিংবা গোড়ালি ফাটার নেপথ্যে রয়েছে আর্দ্রতা। অর্থাৎ, ত্বকের আর্দ্রতা বা ময়েশ্চারের পরিমাণ কমতে থাকলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সিলিকনের মোজা এমন ভাবে তৈরি করা, যাতে পায়ের পাতা কিংবা গোড়ালিতে সর্বদা ওই আর্দ্রতার ছোঁয়া থাকে। আলাদা করে ত্বক মোলায়েম রাখার জন্য মোজার ভিতর নানা রকম প্রসাধনীও দেওয়া থাকে। রূপচর্চা শিল্পীরা বলছেন, স্পা বা মাসাজের সময়ে গ্রাহকদের ‘সিলিকন’ কিংবা ‘জেল সক্স’-ও পরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে পায়ের পাতার খসখসে ভাব অনেকটা দূর হয়। চর্মরোগ চিকিৎসক প্রতীক্ষা জৈনের মতে, “শীতে পায়ের যত্ন নিতে সিলিকনের মোজা ব্যবহার করাই যায়। তবে ওই মোজা পরে রাতারাতি ফাটা গোড়ালি জোড়া লাগবে, সে আশা না করাই ভাল।”
কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ফেশিয়াল করার মতো সময় না থাকলে ইদানীং অনেকেই মুখে ‘শিট মাস্ক’ ব্যবহার করেন। চটজলদি জেল্লা আনতে এই ধরনের প্রসাধনীগুলি বেশ কাজের। সিলিকন বা জেল-পূর্ণ মোজাগুলি অনেকটা সে রকমই। চর্মরোগ চিকিৎসক গীতিকা শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, “সিলিকনের মোজাগুলি ‘অক্লুশান থেরাপি’-র মাধ্যমে কাজ করে। অর্থাৎ, ত্বক ভেদ করে ময়েশ্চার বেরোতে পারে না। ক্রিম বা বাম মাখার পর এই মোজা পায়ে গলিয়ে নিলে তা ত্বক শোষণ করতে পারে সহজে। তবে ফাটল গভীর হলে এটুকুই যথেষ্ট নয়।”
তবে দীর্ঘমেয়াদি ফল পেতে হলে পায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া চাই। শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করতে প্রচুর জলও খেতে হবে। সিলিকনের মোজা পরলে কিন্তু পায়ের পাতা ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ঘাম জমে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। সে দিক থেকে সুতির কিংবা উলের মোজা নিরাপদ।