শিমলার ওই মন্দিরে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।
ভারী বৃষ্টি আর হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে শিমলার সামার হিলের শিব বাওয়ারি মন্দির। সোমবারের প্রবল বৃষ্টি আর ধসের মধ্যে বহু ভক্ত চাপা পড়েছেন। ভেসে গিয়েছেন অনেকে। কারও কারও দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ প্রিয়জনকে খুঁজতে মঙ্গলবার সেই মন্দিরের সামনে জড়ো হয়েছেন শ’খানেক মানুষ। উদ্ধারকারী দল এক একটি দেহ উদ্ধার করছে, আর চাপা উদ্বেগ নিয়ে সে দিকে ছুটে যাচ্ছেন লোকজন। মনেপ্রাণে চাইছেন ওই নিথর দেহ যেন তাঁদের কেউ না হন। কেউ কেউ দেহ শনাক্ত করতে গিয়ে দেখছেন, তাঁরই প্রিয়জন। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁরা। বাকিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
সোমবার শিমলার ওই মন্দির ধসে যাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১১টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রশাসন জানাচ্ছে, ধসের সময় অন্তত ৩০ জন ভক্ত এবং পুণ্যার্থী মন্দিরের ভিতরে ছিলেন। তা ছাড়া বাইরেও কেউ কেউ থেকে থাকতে পারেন। ইতিমধ্যে নিখোঁজদের খোঁজে প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁদের প্রিয়জনেরা। ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এমনই কয়েক জন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। যাঁরা ওই মন্দিরের সামনে অপেক্ষা করছেন। এক একটি দেহ উদ্ধার হচ্ছে আর তাঁরা উদ্বেগ নিয়ে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। যেমন করণদীপ নামে ৩৩ বছরের এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী জানাচ্ছেন, সোমবার তাঁর পরিবারের লোকজন মন্দিরে এসেছিলেন। ৬০ বছরের কাকা, কাকিমা, তুতো ভাই, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের তিন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পুজো দিতে এসেছিলেন। তার পর আর কারও খোঁজ পাননি। মঙ্গলবার প্রশাসনের তরফে কাকিমা, তুতো ভাই এবং তাঁর এক সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিদের পাওয়া যায়নি। করণদীপের আশা, তাঁরা বেঁচে আছেন। অন্য কোথাও নিশ্চয় নিরাপদে আছেন। মোহিত শর্মা নামে এক যুবক জানাচ্ছেন, তাঁর পরিবারও পুজো দিতে এসেছিল সোমবার। দুর্ঘটনার খবর পেয়েও তখন আসতে পারেননি। ওই সময় আসা সম্ভবও ছিল না। এখন পরিবারের সদস্যদের খুঁজছেন। ওই মন্দিরের পুরোহিত সুমন পণ্ডিতও ‘নিখোঁজ’।
রবিবার রাত থেকে প্রকৃতির ‘তাণ্ডব’ চলছে হিমাচল প্রদেশে। গত দু’দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। তার পর সোলান জেলার একটি গ্রামে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়। হড়পা বানে ভেসে যায় গ্রামের একাংশ। একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যু হয় সেই ঘটনায়। সোমবার সকালে আরও এক বিপর্যয় হয়। শ্রাবণ মাসের সোমবার উপলক্ষে শিবের পুজো দিতে মন্দিরে জড়ো হয়েছিলেন ৩০ জনের বেশি মানুষ। প্রবল বৃষ্টির কারণে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী শিবমন্দিরে উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। তবে এখনও মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের নীচে কিছু দেহ চাপা পড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে বৃষ্টির মধ্যে উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন কর্মীরা।
শুধু হিমাচলে বৃষ্টিঘটিত দুর্যোগে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মম্বা, কুল্লু, সোলান, শিমলা, হামিরপুর ইত্যাদি জায়গায় হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লাল কেল্লার বক্তৃতায় হিমাচল, উত্তরাখণ্ড-সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত রাজ্যগুলির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেশের অনেক রাজ্যে অকল্পনীয় সঙ্কট ডেকে এনেছে। যাঁরা নিজেদের পরিবার, প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার মিলেমিশে কাজ করে আমরা এই সঙ্কট থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসব। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’’