কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যসভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মেজাজ হারালেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। সরাসরি আক্রমণ করে বসলেন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের পুত্র নীরজ শেখরকে। টানলেন ‘বাবা’র প্রসঙ্গও! বর্ষীয়ান নেতার এ হেন আচরণের পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
গত ৩১ জানুয়ারি থেকে সংসদে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশন। তা নিয়ে সংসদের দুই কক্ষেই উত্তেজনা তুঙ্গে। সোমবার ছিল বাজেট অধিবেশনের তৃতীয় দিন। আলোচনা চলছিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে। সে সময় মার্কিন ডলারের নিরিখে ভারতীয় টাকার পতন নিয়ে বলতে শুরু করেন খড়্গে। কথার মাঝে নীরজ তাঁকে থামাতে যান। তাতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন খড়্গে। এক প্রকার হুঙ্কার দিয়েই বলে ওঠেন, ‘‘আমি তোর বাবারও বন্ধু ছিলাম! তুই আবার কী কথা বলছিস? এক কালে তোকে নিয়ে ঘুরেছি! চুপ, চুপ, একদম চুপ করে বস!’’ খড়্গের এই আচরণের পরেই উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদের উচ্চ কক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামতে হয় চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে। উভয় পক্ষকেই শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়ে বর্ষীয়ান নেতাকে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেন ধনখড়।
যদিও সঙ্গে সঙ্গেই নিজের মন্তব্যের সপক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন খড়্গে। তাঁর যুক্তি, তাঁকে এবং প্রয়াত চন্দ্রশেখরকে একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে জন্যই তিনি বলেছিলেন যে নীরজের বাবা তাঁর বন্ধু ছিলেন। যদিও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। কেন খড়্গে আর এক সাংসদের ‘বাবা’ তুলে কথা বলেছেন, তার ব্যাখ্যা চান ধনখড়। এর উত্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করার অভিযোগ তোলেন খড়্গে। বলেন, ‘‘কেউ তাঁকে বলত তিনি স্নানের সময়েও বর্ষাতি পড়েন, কেউ বলত তিনি কথা বলতে পারেন না, কেউ বা বলত তিনি সরকার চালাতে পারবেন না। কিন্তু সব অপমান মুখ বুজে সহ্য করে দেশের স্বার্থে চুপ থেকেছেন তিনি। তাঁকে তো ‘মৌনি বাবা’ বলা হত! মানুষকে অপমান করার অভ্যাসটা আসলে তাদের। আমরাই বরং অপমান সহ্য করি।’’
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে লড়ে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া কেন্দ্র থেকে জিতেছেন চন্দ্রশেখরের পুত্র নীরজ। ১৯৯০ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৯১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ছ’মাস প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রশেখর। ১৯৭৭ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত মোট আটটি নির্বাচনে বালিয়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পরে পুত্র নীরজ ২০০৭-এর উপনির্বাচন এবং ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে বালিয়া থেকে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জয়ী হন। তবে ২০১৪-য় বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হেরে যান নীরজ। এর পর ২০১৯-এ বিজেপিতে যোগ দিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন।