(বাঁ দিকে) শি জিনপিং। ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আমেরিকার পণ্যের উপরেও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চলেছে চিন! আমেরিকা থেকে আসা কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি সরঞ্জাম ও বড় গাড়ির উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। পাশাপাশি গুগ্লের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনেছে জিনপিংয়ের প্রশাসন। এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে বেজিং। তবে গুগ্ল চিনে সাধারণ ভাবে নিষিদ্ধ। অংশীদারির ভিত্তিতে কিছু সংস্থার সঙ্গে কাজ করে তারা।
মেক্সিকো, কানাডা আপাতত স্বস্তি পেলেও চিনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত এখনও স্থগিত হয়নি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই আবহেই এ বার পাল্টা চাল চিনের।
চিনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, আমেরিকার একতরফা শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মের পরিপন্থী। এটি চিন ও আমেরিকার স্বাভাবিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও বিঘ্নিত করে। সে কারণেই আমেরিকাকে শিক্ষা দিতে পাল্টা শুল্ক আরোপের পথে হাঁটছে চিন। অন্য দিকে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আলোচনা হতে পারে ট্রাম্প-জিনপিংয়ের। আসন্ন ‘বাণিজ্য-যুদ্ধ’-এর আবহে এই প্রথম এত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনা হতে চলেছে দুই দেশের। এ ছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের প্রতিনিধি ফু কং জানিয়েছেন, আসন্ন নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকেও সাক্ষাৎ হতে পারে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই এবং আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিও-র। সেখানেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হতে পারে দু’দেশের প্রতিনিধির। কংয়ের যুক্তি, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ডব্লিউটিও-র নিয়মের পরিপন্থী। তবে দু’তরফে আলোচনার পর সমস্যার সমাধান হতে পারে বলেই আশাবাদী কং।
গত নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পরেই কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসন সমস্যা এবং সীমান্ত দিয়ে ফেন্টানাইল মাদক পাচার বন্ধ করতেই তিন দেশের পণ্যের উপর শুল্ক চাপানোর এই সিদ্ধান্ত। সেই সঙ্গে বেজিংকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চিনে তৈরি বহু অবৈধ ওষুধ মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় ঢুকলেও বেজিং কোনও পদক্ষেপ করেনি। চিন যত দিন না এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে, তত দিন পর্যন্ত চিনা পণ্যে শুল্ক চাপানো হবে। প্রয়োজনে চিনা পণ্যে আরোপিত শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
এর পর গত শনিবার কানাডা, মেক্সিকো এবং চিনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। চিনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক এবং বাকি দুই দেশের পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে জানা গিয়েছে, আপাতত কানাডা ও মেক্সিকোর উপর কার্যকর হচ্ছে না ট্রাম্পের শুল্কনীতি। কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত আপাতত ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। সোমবার রাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দুই দফায় আলোচনা হয় ট্রাম্পের। তার পরেই দুই রাষ্ট্রনেতা সমাজমাধ্যমে জানান, আপাতত ৩০ দিনের জন্য শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেনবামের সঙ্গেও সোমবার রাতে আলোচনা হয়েছে ট্রাম্পের। সেই আবহেই জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক অর্থবহ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।