এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রাসায়নিক সার নিয়ে রমরমিয়ে কালোবাজারি চলছে বলে অভিযোগ। ক্ষোভে সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো পোস্ট করে আত্মঘাতী হলেন কৃষক। এখানেই শেষ নয়! এর পর বিষয়টি চাপা দিতে কোনও রকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি দেহ দাহ করে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সোমবার মধ্যপ্রদেশের গুনায় ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনা ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে কৃষকের পোস্ট করা ওই ভিডিয়োটি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেই ভিডিয়োয় কৃষককে বলতে শোনা গিয়েছে, ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) একটি রাসায়নিক সার, যার বাজারদর প্যাকেটপ্রতি ১,৩৫০ টাকা। কিন্তু কিছু মানুষ শিশুদের আধার কার্ড ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে সার কিনে চড়া দামে বিক্রি করছেন। কখনও কখনও সেই দাম গিয়ে পৌঁছচ্ছে কেজি প্রতি তিন হাজার টাকায়। সোমবারও সার কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ওই কৃষক। কিন্তু চড়া দামের কারণে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও সার পাননি তিনি। ভিডিয়োয় কৃষক আরও বলেন, ‘‘সার নিয়ে কালোবাজারি চলছে। সরকারি ভাবে চাষিদের সার বিতরণ করতে হবে। জমির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে কৃষকদের সার দিতে হবে। কৃষকদের মধ্যে সার নিয়ে কোনও রকম বৈষম্য করা চলবে না।’’
কাকতালীয় ভাবে এর কিছু ক্ষণ পরেই ওই কৃষকের মৃত্যু হয়! অভিযোগ, ময়নাতদন্তের আগেই দাহ করে ফেলা হয় দেহ। কৃষকের পরিবারের একাংশের দাবি, আত্মহত্যা করেছেন তিনি। কৃষকের মৃত্যুতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতরও। প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণ যাদব বলেন, ‘‘সার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন কৃষক। জেলা প্রশাসনের চাপে দেহ তড়িঘড়ি দাহ করতে বাধ্য হয়েছে তাঁর পরিবার। বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই এমনটা করা হয়েছে।’’ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। যদিও জেলাশাসক সতেন্দ্র সিংহের পাল্টা দাবি, ওই কৃষক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। গত ১৩ নভেম্বর মাথায় চোট লাগার কারণে তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয়েছিল। তাঁর দাবি, সোমবার বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে ওই কৃষককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
কৃষক নেতা রাহুল রাজ বলছেন, ‘‘সারের জন্য দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন ওই কৃষক। কিন্তু সার পাননি। সম্ভবত এর পরেই মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। অক্টোবর মাস থেকে আমরা চাষিরা সার নিয়ে ফাঁপরে পড়েছি। কিন্তু কৃষকদের সার জোগাতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। গম এবং ছোলা বপনের মরসুম শেষ হতে চলল, অথচ এখনও সারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিতে হচ্ছে কৃষকদের।’’ উল্লেখ্য, অক্টোবর থেকে ব্যবসায়ীদের ডিএপি সার মজুত করে রেখে চড়া দামে বিক্রি করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মধ্যপ্রদেশের কৃষকেরা। রাজ্যে প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন সারের চাহিদা থাকলেও সেই তুলনায় এখনও পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে তার অর্ধেক পরিমাণ সার।