(বাঁ দিকে) এনকাউন্টারে নিহত অভিযুক্ত। তদন্তে পুলিশ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
এ বার একনাথ শিন্ডে সরকারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলেন বদলাপুরকাণ্ডে নিহত অভিযুক্তের মা। তাঁর দাবি, তাঁর ছেলেকে এ ভাবে ‘ফাঁসানোর’ পর থেকেই বহু ক্ষতি হয়েছে তাঁদের পরিবারের। খুইয়েছেন সম্মান, এমনকি ছাড়তে হয়েছে বসতবাড়িও। অন্য দিকে, পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্তের মৃত্যু নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল বম্বে হাই কোর্ট। এ বার ওই ঘটনার তদন্তে সিআইডির ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করল দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
সোমবার ওই মামলার শুনানিতে বিচারপতি রেবতী মোহিতে ডেরে এবং বিচারপতি পৃথ্বীরাজ চহ্বণের ডিভিশন বেঞ্চ সিআইডির তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দুই বিচারপতির বক্তব্য, প্রাসঙ্গিক বহু প্রমাণ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তদন্ত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বদলাপুরে নার্সারির দুই পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে ধৃত অক্ষয় শিন্ডেকে জেল থেকে থানায় নিয়ে আসার পথে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ, গাড়িতে এক বার জল খেতে চেয়েছিলেন অক্ষয়। সে সময় কয়েক মিনিটের জন্য তাঁর হাতকড়া খুলে দেয় পুলিশ। তখনই আচমকা এক কনস্টেবলের বন্দুক কেড়ে নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালান অভিযুক্ত। তাঁর ছোড়া গুলিতে এক পুলিশকর্মী আহতও হন। তাঁকে আটকাতে পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে জখম হন অক্ষয়। শেষমেশ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
এর আগেও ওই মামলার শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল দুই বিচারপতির বেঞ্চ। আদালত বলেছিল, হেফাজতে ‘হত্যা’-র এই ঘটনাকে এনকাউন্টার বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না। প্রিজ়ন ভ্যানে চার জন পুলিশকর্মী থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কেন অভিযুক্তকে কাবু করতে পারলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। সিআইডিকে ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সোমবার আদালতে বিচারপতিদের প্রশ্ন, তদন্তে যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। অক্ষয়ের হাতে গুলি চালানোর প্রমাণস্বরূপ ‘গান পাউডার’ মিলেছে কি না, জলের বোতলে তাঁর আঙুলের ছাপ রয়েছে কি না— সিআইডির রিপোর্টে সে সবের কোথাও উল্লেখ নেই। আহত পুলিশকর্মীর স্বাস্থ্য রিপোর্টও চেয়েছে আদালত। এর পরেই তদন্ত শেষ করার জন্য আরও চার সপ্তাহের সময় চেয়েছে সিআইডি।
বদলাপুরের ঘটনা নিয়ে গত অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে উত্তাল হয়ে ওঠে মহারাষ্ট্র। রাজ্যের রাজনীতিতেও শুরু হয় চাপানউতর। অভিযুক্তের এনকাউন্টারের পরেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। তাঁদেরও দাবি ছিল, এটি ভুয়ো এনকাউন্টার। কী ভাবে হাতকড়া পরানো থাকা সত্ত্বেও পুলিশকে গুলি করলেন অভিযুক্ত? সে সময় পুলিশের ‘এনকাউন্টার’ যুক্তি মানেননি মৃতের মা-ও। পরিবারের অভিযোগ ছিল, সুপরিকল্পিত ভাবে তাঁদের ছেলেকে খুন করা হয়েছে। এই নিয়ে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন মৃতের বাবা। শিন্ডে সরকারের নামে মানহানির মামলাও দায়ের করেছেন তাঁরা। অভিযোগ, ওই ঘটনার পর থেকেই মুখ পুড়েছে পরিবারের। খোয়াতে হয়েছে বসতবাড়ি। এখন কল্যাণ রেলস্টেশনের কাছে একটি বাসস্টপে অস্থায়ী আস্তানা বানিয়ে থাকছেন তাঁরা। কখনও রাত কাটাতে হচ্ছে প্ল্যাটফর্মেই। তাঁদের দাবি, আসন্ন ভোটে সুবিধা পেতেই পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে শিন্ডে সরকার।
কী হয়েছিল বদলাপুরে? গত ১৩ অগস্ট বদলাপুরের এক স্কুলে নার্সারির দুই পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল স্কুলেরই এক সাফাইকর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল হয়ে ওঠে বদলাপুর। রেলস্টেশন অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায় উন্মত্ত জনতা। গ্রেফতার হন বহু বিক্ষোভকারী। এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে গড়া হয় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। এর পর ১৭ অগস্ট অভিযুক্ত অক্ষয়কে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। কিন্তু তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীনই গত ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর।