গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা মিটতে না-মিটতেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ সাতটি রাজ্যের উপনির্বাচনে ধাক্কা খেল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। ১৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ঝুলিতেই গেল ১০ আসন। বাকি তিন আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। একটা আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। কোনও কেন্দ্রের বিধায়কের দলবদল, কোনও কেন্দ্রে আবার বিধায়কের মৃত্যুর কারণে আসন ফাঁকা হয়ে যায়। সেই সব আসনেই উপনির্বাচন করিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভার ভোটের পর উপনির্বাচনের ফল চিন্তায় রাখবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে।
উত্তরাখণ্ডের দু’টি আসন— বদ্রীনাথ এবং মঙ্গলৌরও মল্লিকার্জুন খড়্গে-রাহুল গান্ধীর দলের দখলে। একটি আসন বিজেপি জিতেছে। এ ছাড়াও পঞ্জাবের জালন্ধর পশ্চিম বিধানসভায় আম আদমি পার্টি (আপ) এবং তামিলনাড়ুর বিক্রবন্দিতে ডিএমকে জিতেছে। মধ্যপ্রদেশের অমরওয়াড়ায় জিতেছে বিজেপি। হিমাচল প্রদেশের হামিরপুরে বিজেপি জিতেছে। দেহরায় জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থী তথা সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখুর স্ত্রী কমলেশ। নালাগড়েও জয়ী কংগ্রেস। বিহারের একটি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনে তিনটি আসন বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা এবং মানিকতলার উপনির্বাচনে জিতেছে তৃণমূল। অথচ ২০২১-এর নীলবাড়ির লড়াইয়ে এর মধ্যে প্রথম তিনটি ছিল বিজেপি দখলে।
উত্তরাখণ্ডের বদ্রীনাথের কংগ্রেস বিধায়ক রাজেন্দ্র সিংহ ভান্ডারি ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ওই আসনে উপনির্বাচনে হয়েছিল। ওই রাজ্যের মঙ্গলৌরে বিএসপি বিধায়ক সরওয়াত করিম আনসারি এবং তামিলনাড়ুর বিক্রবন্দিতে ডিএমকে বিধায়ক এন পুগাজ়হেথির মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন হয়েছে। পঞ্জাবের জালন্ধর পশ্চিমে আপ বিধায়ক শীতল অঙ্গুরল রিঙ্কুর বিজেপিতে যোগদানের ফলে উপনির্বাচন হয়েছিল গত বুধবার। হিমাচল প্রদেশের দেহরা, হামিরপুর এবং নালাগড়— এই তিন কেন্দ্রে ২০২২ সালে নির্দল প্রার্থীরা জিতে বিধায়ক হন। তবে পরে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে জনপ্রতিনিধিত্ব সংশোধনী আইন মেনে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তাই সেখানে ভোট হয়। মধ্যপ্রদেশের অমরওয়াড়ার কংগ্রেস বিধায়ক কমলেশ প্রতাপ শাহ বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সেখানে আবার ভোট হয়েছিল।
বিহারের রুপৌলির জেডিইউ বিধায়ক বিমা দেবী আরজেডিতে যোগ দেন। তার পরই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। এ বার রুপৌলিতে আরজেডির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন বিমা। জেডিইউ টিকিট দেয় কালাধরপ্রসাদ মণ্ডলকে। কিন্তু এই দুই প্রার্থীকেই পিছনে ফেলে দিয়ে এই আসনে জয় পায় নির্দল প্রার্থী শঙ্কর সিংহ।
বস্তুত, উপনির্বাচনের আগে এই ১৩টি আসনের মধ্যে চারটি আসন বিজেপির দখলে ছিল। বাকি ৯টি আসনের মধ্যে পাঁচটি ছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র। তিনটি নির্দল এবং একটি বিএসপির। সে দিক থেকে দেখতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া একমাত্র বিহারেই এনডিএ আসন হারিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলির মধ্যে হিমাচল প্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে হারা আসন নিজেদের দখলে এনেছে বিজেপি। অন্য দিকে, কংগ্রেস হারা তিনটি আসন জিতলেও মধ্যপ্রদেশের অমরওয়াড়াতে উলটপুরাণ হয়েছে। কংগ্রেসের জেতা আসনে থাবা বসিয়েছে বিজেপি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, উপনির্বাচনের ফল থেকে স্পষ্ট বিজেপির সে অর্থে ‘ভরাডুবি’ হয়নি। এই ভোটে নিজেদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আসন সংখ্যা আরও কমে গেল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন জিতেছিল। এই উপনির্বাচন শেষে তাদের খাতায়-কলমে বিধায়কের সংখ্যা এসে দাঁড়াল ৭১-এ।
উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশ হতেই জয়ের আনন্দে মতে ওঠে বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে লেখেন, ‘‘উপনির্বাচনের ফল স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপির তৈরি করা ‘ভয় ও বিভ্রান্তি’র জাল ছিঁড়ে গিয়েছে। কৃষক, যুব, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী-সহ প্রতিটি শ্রেণি ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জনসাধারণ এখন তাদের জীবনের উন্নতি এবং সংবিধান রক্ষার জন্য সম্পূর্ণরূপে ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে দাঁড়িয়েছে।’’ বাংলায় চারে চারে হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুম্বই থেকে কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। এক দিকে এজেন্সি, এক দিকে বিজেপি। মানুষই সব রুখে দিচ্ছেন। পুরো কৃতিত্বটাই সাধারণ মানুষের।”