গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নরেন্দ্র মোদীর সরকারের তরফে আবেদন জানানো হলেও জিন বদলানো সর্ষে (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মাস্টার্ড বা জিএম মাস্টার্ড) চাষের অনুমোদন দিল না সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি উজ্জল ভূইয়াঁর বেঞ্চ মঙ্গলবার জানিয়েছে, এ বিষয়ে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে নজর দিয়ে, প্রয়োজনীয় সমীক্ষার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে। কারণ, পরিবেশের ক্ষতি হলে তা পূরণ করা যাবে না।
জিন বদলানো সর্ষের বাণিজ্যিক চাষের ছাড়পত্র সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাট্টি শীর্ষ আদালতে জানান, দেরি করলে সর্ষে বীজ বপনের একটি মরসুম নষ্ট হবে। জবাবে দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, পরিবেশের ক্ষতির অভিযোগ সংক্রান্ত দিকটি খতিয়ে না-দেখে, এ বিষয়ে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করা ঠিক হবে না।
তবে পরীক্ষামূলক ভাবে যে আটটি কৃষিক্ষেত্রে জিন বদলানো সর্ষের বীজ বপন করা হয়েছে, সেখানে চাষের ছাড়পত্র দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাপ্রাইজ়াল কমিটি (জিইএসি) জিএম সর্ষের বাণিজ্যিক চাষে অনুমতি দেওয়ার পরেই পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে আশঙ্কার কথা সামনে এসেছিল। যদিও জিন প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ামক সংস্থা জিইএসির তরফে জানানো হয়, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার পরে বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে জিএম সর্ষে চাষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক সূত্রের খবর, জিএম সর্ষে বিষয়ক জিইএসির বিশেষজ্ঞ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দীপক পেন্টাল। তাঁরা পরীক্ষা ও গবেষণার পরে একটি বৈজ্ঞানিক ডসিয়ার প্রকাশিত করেন, যা বাণিজ্যিক চাষে ছাড়পত্রের পথ প্রশস্ত করেছে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ’ (আইসিএআর)-এর গবেষকেরা দেখেছেন এই সর্ষের ফুল পরাগমিলনে সহায়তাকারী মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গের জীবনচক্রে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না। তা ছাড়া, আখেরে জিন বদলানো সর্ষে, চাষিদের সুবিধা করে দেয়। কারণ, এতে ফলন হয় বেশি। কীটনাশকের খরচও অনেকটা বেঁচে যায়।
রাজস্থানের ভরতপুরে আইসিএআর-এর গবেষণা কেন্দ্রে দীর্ঘ পরীক্ষা ও গবেষণার পরেই পরীক্ষামূলক ভাবে ডিএমএইচ-১১-র বাণিজ্যিক চাষের ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আইসিএআর-এর রেপসিড এবং সর্ষে চাষ সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগের ডিরেক্টর পিকে রাই জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে দু’টি পর্যায়ে ফলন ও তার মূল্যায়ন সংক্রান্ত গবেষণার পরেই এই সিদ্ধান্ত। নভেম্বরে কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক ভাবে পরবর্তী রবিশস্যের মরসুম থেকে জিন বদলানো সর্ষে চাষে ছাড়পত্র দিয়েছিল।
ইতিহাস বলছে, অতীতে ওড়িশায় জিন বদলানো বিটি বেগুন চাষে পরিবেশ দূষণের কথা সমীক্ষায় উঠে এসেছিল। প্রায় দু’দশক আগে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পঞ্জাবে জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে তৈরি তুলোর চাষেও সাফল্য মেলেনি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের এই উদ্যোগ ঘিরে উঠেছে প্রশ্ন। তা ছাড়া গত কয়েক দশকে ইউরোপ-আমেরিকায় জিন বদলানো ভুট্টা, মটরশুঁটি, চাল, সয়াবিন খেলে স্তন্যপায়ী প্রাণী, প্রধানত ইঁদুরের শরীরের নানা পরিবর্তন ঘটেছে। জিন বদলানো সর্ষের তেলের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা রয়েছে বলে পরিবেশপ্রেমীদের একাংশের আশঙ্কা।