2002 Bilkis Bano Case of Gujarat

বিলকিস মামলায় ধর্ষক ও খুনিদের মুক্তি নিয়ে ‘অবস্থান’ বদলেছে নিম্ন আদালত, জানাল নথি

গত ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দেবগড় বারিয়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। পরে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ আবেদনে সাড়া দেয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ১২:০৩
Bilkis Bano Case: Supreme Court says, CBI, Mumbai court change in stance led to early release of convicts

বিলকিস বানো মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। — ফাইল চিত্র।

গুজরাতে দাঙ্গাপর্বে বিলকিস বানো মামলায় গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডে অপরাধী ১১ জনের সাজার মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি নিয়ে অবস্থান বদল করেছিল নিম্ন আদালত এবং সিবিআই। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়াঁর বেঞ্চ মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র পরীক্ষা করে এ কথা জানিয়েছে।

Advertisement

২০০২ সালে গুজরাতের গোধরা পরবর্তী হিংসার দেবগড় বারিয়ায় গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এক দোষী রাধেশ্যাম ভগবানদাস শাহকে মুক্তি দেওয়ার আগে সিবিআই এবং মুম্বই ট্রায়াল কোর্টের কি মতামত ছিল, তা জানতে এ সংক্রান্ত নথি তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সাজার মেয়াদ শেষে মুক্তির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেও পরে তা বদলানো হয়েছিল।

রাধেশ্যাম-সহ ১১ অপরাধীর মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে এ কথা জানানো হয়েছে। মুম্বই ট্রায়াল কোর্টের বিচারক প্রথমে মুক্তির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলেও ২০২২ সালে জুন মাসে বিষয়টি গুজরাত সরকারের বিবেচনার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, বিলকিসকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে খুনের অভিযোগে ২০০৮ সালে মুম্বই ট্রায়াল কোর্ট রাধেশ্যাম-সহ ১১ জনকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দিয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছিল। এর পরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রও মেলে। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

১১ জনের মুক্তির পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক বাধে। বিতর্কের মধ্যেই গুজরাত সরকার জানায় যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। গুজরাত সরকার ১১ জন ধর্ষকের জেলের ভিতরে ‘ভাল আচরণের’ দাবি করলেও সরকারি তথ্য ‘অন্য কথা’ বলছে বলে অভিযোগ। ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement