চলতি মাসে বাংলা ছবির পাশাপাশি মুক্তি পাচ্ছে হলিউড এবং বলিউডের একাধিক ছবি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নববর্ষের পর টলিপাড়ায় পুজোর ছবি নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অগস্টে বেশ কিছু ‘বড়’ ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। জুলাই মাস সবে শুরু হয়েছে। চলতি মাসে অল্প সংখ্যায় বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু জুলাইতে বলিউড এবং হলিউডের ছবির দাপটে বাংলা ছবির ফের কোণঠাসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, চলতি মাসে মোট চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। এ সপ্তাহে মুক্তি পাবে পরিচালক রাজর্ষি দের ছবি ‘মায়া’। এই ছবিতে একাধিক তারকা রয়েছেন। একই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ‘মহানগরী থেকে দূরে’ ছবিটির। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় এবং জয় সেনগুপ্ত। ১৪ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে সুব্রত সেন পরিচালিত ‘সমরেশ বসুর প্রজাপতি’ এবং রাজা চন্দ পরিচালিত ‘বিয়ে বিভ্রাট’। সুব্রতের ছবিটি গত বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজেস’-এ প্রতিযোগিতায় ছিল। অন্য দিকে, রাজার ছবিতে রয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং আবীর চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকারা। ২১ জুলাই মুক্তি পাবে ইন্দ্রাশিস আচার্য পরিচালিত ছবি ‘নীহারিকা’।
এ তো গেল বাংলা ছবির কথা। চলতি মাসে বাংলার তুলনায় ইংরিজি ছবির পাল্লা কিন্তু বেশ ভারী। গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য ডায়াল অফ ডেস্টিনি’ ছবিটি। ছবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও চর্চিত ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি হওয়ার কারণেই দর্শক ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করছেন। বৃহস্পতিবার মুক্তি পাচ্ছে ভূতের ছবি ‘ইনসিডিয়াস: দ্য রেড ডোর’। এই সিরিজ়ের ছবি নিয়েও দর্শক মহলে উৎসাহ রয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে সম্ভবত এই মাসের সব থেকে বড় ধামাকা আসতে চলেছে। মুক্তি পাচ্ছে ‘মিশন ইমপসিব্ল’-সিরিজ়ের সপ্তম ছবি। পাঁচ বছর পর আবার পর্দায় ইথান হান্টের চরিত্রে ধরা দেবেন টম ক্রুজ়। এই ছবি যে বিশ্বের মতো ভারতের বাজারেও নজির সৃষ্টি করবে, তা এক প্রকার মেনে নিয়েছেন সিনেমা ব্যবসা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
টম ক্রুজ়ের ম্যাজিক শেষ হতে না হতেই প্রেক্ষাগৃহ দখল করবে ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ওপেনহাইমার’। পদার্থবিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমারের এই বায়োপিকে নামভূমিকায় রয়েছেন ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’ খ্যাত অভিনেতা কিলিয়ান মার্ফি। এই ছবি ঘিরে নোলান ভক্তদের উন্মাদনা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে মার্গো রবির চর্চিত ছবি ‘বার্বি’।
জুলাই মাসের শেষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে বছরের অন্যতম প্রতীক্ষিত হিন্দি ছবি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’। এই ছবির হাত ধরে সাত বছর পর ফের পরিচালকের আসনে ফিরলেন কর্ণ জোহর। তা ছাড়া ছবিতে রণবীর সিংহের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন আলিয়া ভট্ট। ছবির ট্রেলার ইতিমধ্যেই দর্শকের পছন্দ হয়েছে। এই ছবির সঙ্গে টক্করে যেতে চাইছেন না বলিউডের তাবড় নির্মাতারা। দক্ষিণ কলকাতার প্রিয়াতে ইংরিজি ছবির পাশাপাশি ‘রকি অউর রানি...’ও দেখানো হবে। কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত এই লড়াই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমাদের কাজ ছবি দেখানো। ছবির বিষয়বস্তু এবং প্রচার ভাল হলে স্বাভাবিক ভাবেই আমরা সেই ছবির দিকে ঝুঁকি। ছবি ভাল হলে সেই ছবি দেখাতে তো কোনও আপত্তি নেই।’’
এখন প্রশ্ন, এই ভিড়ে যে ক’টি বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাদের কী অবস্থা? রাজর্ষির ছবিতে একাধিক তারকা রয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে আত্মবিশ্বাসী পরিচালক বললেন, ‘‘বাংলা ছবি এবং ইংরেজি ছবির দর্শক আলাদা। যাঁরা ‘প্রজাপতি’ বা ‘অর্ধাঙ্গিনী’ দেখতে ভিড় করেন, তাঁরাই আমার ছবি দেখবেন।’’ বাংলা ছবির দর্শক ইন্ডিয়ানা জোন্স বা টম ক্রুজ়কে নিয়ে বিশেষ মাতামাতি করবেন না বলেই মনে করছেন পরিচালক।
ইন্দ্রাশিস ছোট পরিসরেই তাঁর ছবি রিলিজ় করছেন। আপাতত রাজ্যের মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পাবে ‘নাহীরিকা’। কারণ কী? ইন্দ্রাশিস বললেন, ‘‘আমার বাজেট কম। তাই দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে তার পর সিঙ্গল স্ক্রিনের কথা ভাবব।’’ হিন্দি বা ইংরেজি ছবি নিয়ে চিন্তিত নন পরিচালক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আমার দর্শককে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। দর্শক ‘ওপেনহাইমার’ দেখে আমার ছবি দেখতে এলে সেটা তো সিনেমারই জয়।’’
তবে পরিচালকেরা আত্মবিশ্বাসী হলেও বাংলা ছবির টিকিট বিক্রি নিয়ে খুশি নন ইন্ডাস্ট্রির একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইম্পার (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন) এক সদস্যের কথায়, ‘‘দুঃখের বিষয়, যে ছবির রিভিউ ভাল, সেই ছবিরও বিক্রি আশাপ্রদ নয়। বাংলা ছবির দর্শক দ্রুত হারে কমছে। ইন্ডাস্ট্রির অন্য এক সূত্রের দাবি, পঞ্চম সপ্তাহে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’-র আরও ভাল ফল করা উচিত ছিল। ‘শিবপুর’ এবং ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ ছবি দুটো নিয়ে চর্চা থাকলেও টিকিট বিক্রি আশানুরূপ নয়। ইংরিজি এবং হিন্দি ছবির ভিড়ে এই মাসে নতুন বাংলা ছবিগুলোর হল পেতেও সমস্যা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। এই অসম লড়াইয়ে বাংলা ছবি কী ভাবে পেরে ওঠে সেটাই দেখার।