Ravichandran Ashwin

হিন্দি ভাষা নিয়ে উত্তর বনাম দক্ষিণ তরজা, মোদী সরকারকে ‘ক্যারম বল’ অশ্বিনের

হিন্দি ভারতের সরকারি ভাষা, রাষ্ট্রভাষা নয়— চেন্নাইয়ে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেন অশ্বিন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৬
Ravichandran Ashwin

রবিচন্দ্রন অশ্বিন। —ফাইল চিত্র।

ভারতে হিন্দি ভাষার গুরুত্ব কতটা, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অনেক দিনের। এ বার সেই বিতর্ক উস্কে দিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সদ্যসমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া অশ্বিন বলেন, “হিন্দি ভারতের শুধু সরকারি ভাষা, রাষ্ট্রভাষা নয়।” বোলার অশ্বিনের ক্যারম বল বিখ্যাত। ব্যাটারেরা বুঝতে অসুবিধায় পড়তেন। মোদী সরকার যখন এক দেশ, এক ভাষা হিসাবে হিন্দিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তখন অশ্বিনের বক্তব্য কিছুটা সেই ক্যারম বলের মতোই।

Advertisement

চেন্নাইয়ে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। হিন্দি ভাষা নিয়ে তাঁর এই মন্তব্যে চর্চা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর ক্রিকেটার অশ্বিন। হিন্দি ভাষা নিয়ে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে উত্তর ভারতের লড়াই নতুন কিছু নয়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জোর করে দক্ষিণ ভারতে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করে আসছে দক্ষিণের রাজনৈতিক দলগুলি। অশ্বিনও হয়তো ঠিক সেটাই বলতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।

হিন্দি ভাষা সম্পর্কে কী বলেছেন অশ্বিন?

কলেজের অনুষ্ঠানে কথা বলার জন্য মঞ্চে উঠে অশ্বিন প্রথমে জেনে নেন, উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে কত জন ইংরেজি, তামিল এবং হিন্দি জানেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, “এখানে ইংরেজি কত জন বোঝে?” কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগ চিৎকার করে জানান যে তাঁরা ইংরেজি বোঝেন। এর পর তিনি তামিল নিয়ে প্রশ্ন করেন। সেখানেও ভালই সাড়া পাওয়া যায়। সব শেষে অশ্বিন বলেন, “হিন্দি কত জন বোঝে?” এ বারে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের চিৎকারের আওয়াজটা অনেকটাই কম হয়। তার পরেই অশ্বিন বলেন, “হিন্দি আমাদের সরকারি ভাষা, রাষ্ট্রভাষা নয়।”

ভারতের ভাষা রাজনীতি

সংবিধানে হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা বলে অভিহিত করা আছে। ১৪ সেপ্টেম্বর হিন্দি দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪৩.৬৩ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হিন্দি। বর্তমান সরকারের বিপক্ষে থাকা দলগুলি বার বার বলে এসেছে যে, কেন্দ্র জোর করে অ-হিন্দি রাজ্যে হিন্দি ভাষাকে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দক্ষিণ ভারতে সেই চেষ্টা সবচেয়ে বেশি বলে অভিযোগ। গত বছর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তাঁরা হিন্দি মাস পালনের বিপক্ষে। স্ট্যালিনের মতে, এই হিন্দি মাস পালন বাকি ভাষাকে নিচু করে দেখাচ্ছে। তিনি লিখেছিলেন, “হিন্দি মাস পালনের কঠোর বিরোধিতা করছি আমি। ভারতের সংবিধান কোনও ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার সম্মান দেয় না। আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাষা রয়েছে। সেখানে অ-হিন্দি রাজ্যে হিন্দি মাস পালন অন্য ভাষাকে নিচু করে দেখায়।”

২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘এক দেশ, এক ভাষা’র কথা বলেছিলেন, যা সারা দেশে প্রতিবাদের স্বর তুলেছিল। শাহ লিখেছিলেন, “ভারত বিভিন্ন ভাষার দেশ। প্রতিটি ভাষা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশের কোনও একটি ভাষা হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। গোটা বিশ্ব যে ভাষা দিয়ে ভারতকে চিনবে। এখনকার সময়ে কোনও ভাষা যদি গোটা দেশকে এক করতে পারে, সেটা হিন্দি। কারণ বেশির ভাগ মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলে।”

শাহের এই পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছিল বিতর্ক, যা এমন পর্যায় পৌঁছে যায় যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “একজন শিশুর মানসিক বৃদ্ধি তখনই সম্ভব, যখন সে নিজের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করে। মাতৃভাষা মানে হিন্দি নয়। মাতৃভাষা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রাজ্যের ভাষা। যেমন আমার রাজ্য গুজরাতের ভাষা গুজরাতি। কিন্তু গোটা দেশের একটি ভাষা হওয়া উচিত। মাতৃভাষা বাদ দিয়ে কেউ যদি অন্য কোনও ভাষা শেখে, সেটা হিন্দি হওয়া উচিত।”

Advertisement
আরও পড়ুন