Swastika Mukherjee on R G Kar Protest

মেয়েদের আক্রমণ করতে গিয়ে বলতেই পারে বুদ্ধি কম, কিন্তু সেই বুক, পেট, নিতম্ব নিয়েই কথা!

এই আন্দোলনের তিন দিক দেখতে পাচ্ছি। কেউ একদম চুপ। তাঁদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। আর একদল মাসে এক দিন নামছে, বলছে “বিচার চাই।” তার পরে রিল বানাচ্ছে। আর একদল সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত।

Advertisement
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:০১
Image of Swastika Mukherjee

প্রতিবাদী আন্দোলন ও ট্রোলিং নিয়ে লিখলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

এক মাসে অনেক কথা বলেছি আমি। সারা জীবনে বোধ হয় একটানা এত কথা বলিনি। এমন করে প্রতিবাদে সোচ্চার হইনি। ভেবেছিলাম আমরা, এমন মনখারাপের দুর্গাপুজো আসবে? পুজোর ছবির প্রচার হয়ে যাবে কটাক্ষের মাধ্যমে?

Advertisement

কুণাল ঘোষকে অনেক ধন্যবাদ। ‘টেক্কা’ র এমন প্রচার আমরাও করতে পারতাম না। তবে আমরাও ছবি নিয়ে বলছি, এই সময় যদি মন ভাল করতে হয় দেখে আসতে পারেন ‘টেক্কা’। ইচ্ছে হলে দেখবেন, না হলে নয়।

আমরা আসলে কটাক্ষ, কটূক্তি এই বিষয়গুলিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছি। সমাজমাধ্যমে কে কী বলছে দেখে কী হবে? বন্ধ প্রোফাইলের আড়ালে বা দেশের পতাকা সাজিয়ে প্রোফাইল তৈরি করে যারা দিনরাত মেয়েদের শরীর নিয়ে মন্তব্য করে, তাদের কেন গুরুত্ব দেব? মেয়েদের সম্পর্কে কিছু বলার সময় খেয়াল করে দেখবেন, কেউ তো বলতেই পারে অমুক মেয়ে পড়াশোনা জানে না। গাধা, নির্বোধ, ইত্যাদি… এ সব নিয়েও কটাক্ষ করা যায়। মেয়েদের শরীর ছাড়া কি আর কিছু নেই? আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, ট্রোল যারা করে, তারা সংখ্যায় কম। হ্যাঁ, আমি কাজের প্রচার করছি। কাজ তো করতেই হবে। কাজ বা ছবি নিয়ে কথা বলতে আমার কোনও অনীহা নেই। কিন্তু সেই কথা বলতে গিয়ে তো আমাকে সেজেগুজে বেরোতে হবে, সেটা নিয়ে এখনও আমার মধ্যে অনীহা আছে। এই এখন যেমন ‘টেক্কা’ র প্রচারে যাচ্ছি। অনেকেই জানেন, আমার স্টাইলিস্ট অভিষেক রায় আমাকে সাজায়। অন্য সময় ছবির প্রচার করতে গেলে ওকে বলতাম, কী গয়না পরব, জুতো কী হবে। কিন্তু, এখন বাড়িতেই যা গয়না ছিল, পরে নিচ্ছি। একটু তো সাজতেই হবে। ছবি নিয়ে কথা বলার সময় আমি অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আর রাস্তায় নেমে যে আন্দোলন করছে সে ব্যক্তি স্বস্তিকা। এটা তো বুঝতে হবে। মনখারাপের সময় সাজতে কার ভাল লাগে? কিন্তু, কাজ করেছি, সেটা নিয়েও কথা বলতে হবে। কাজের মধ্যে ঢোকার জন্য নিজেকে যথেষ্ট বোঝাতে হয়েছে আমায়। এটা সহজ ছিল না আমার কাছেও।

আমাকে বাবা-মা যে ভাবে বড় করেছেন, সাহস দিয়েছেন তাতে আমার মনে হয় যার যা মনে হচ্ছে সে তা-ই করবে। আমি তো দেখছি টলিপাড়াও এই আন্দোলনে ভাগ হয়ে গিয়েছে। হতেই পারে। যার যা ইচ্ছে করবে। তবে সে ভাবে দেখতে গেলে এই আন্দোলনের তিন দিক দেখতে পাচ্ছি। কেউ একদম চুপ। তাঁদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। আর একদল মাসে এক দিন নামছে, বলছে “বিচার চাই।” তার পরে রিল বানাচ্ছে। আর একদল সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত। তারা বলছে, “আমরা সোচ্চার হব।” আমিও সেই দলের। সোচ্চার হলে, আওয়াজ তুললে আমাদের নিয়ে কথা হবে। আমাদের বুক, পেট, নিতম্ব নিয়ে সমাজমাধ্যম থেকে সর্বত্র কথা উঠবে। উঠুক! আমি চুপ করে যাব না। দেহরক্ষী নিয়ে আলাদা করে মিছিলে যাব না। খ্যাতনামী নয়, সাধারণ মানুষ হিসাবে যাব। এমন কত বার হয়েছে, ভোর রাতে বাড়ি ফিরছি। গাড়ি নেই। কোনও অপরিচিতই পরিচিত হয়ে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে। এত অচেনা মানুষ চেনা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি আমি। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।

মাঝরাতে যে মহিলারা আমাদের জন্য চা করে নিয়ে আসছেন, জোর করছেন চা খাওয়ার জন্য তাঁরা কি বলছেন জানেন? “তোমরা চা খেলে আমরা জানব আমরাও এই আন্দোলনের জন্য কিছু করলাম।” এ রকম অসংখ্য মানুষের সঙ্গে আমি মিশে গিয়েছি। কী এসে-যায় কটাক্ষ করে কী বলা হচ্ছে? স্বাস্থ্য ভবনে চিকিৎসকদের কাছে যখন গিয়েছি, তখন মাঝরাতে আমার মায়ের বয়সের মহিলারা বাড়ির বাসনে খাবার দিচ্ছেন, বলছেন, “ভাল লাগছে ভেবে যে তুমি আমাদের একজন।” তাঁদের কথাই তো আমি ভাবব। চিকিৎসকদের সমর্থনেও যেমন আমি এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি, তেমনি মেয়েদের জন্যও যুক্ত হয়েছি। সেই সব মেয়েরা, যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করেন বা কাজ করেন না। আমি যাঁর বিরুদ্ধেই কথা বলি না কেন আমাকে তাঁরা গালিগালাজ করবেনই। ভয় হলে বাড়িতে বসে থাকব। কথাই বলব না। আর ভয় না পেলে রাস্তায় নামব।

তবে আমার কাছে পুজোটা পুজো। উৎসব আলাদা। মানে আমাদের আন্দোলন চলবে। পুজোও হবে। কিন্তু খুব হইহুল্লোড়ে থাকব না। আমি যেমন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে লরিতে নাচতে নাচতে ভাসানে যাই। এ বার কি কেউ সেটা করতে চাইবে? মন সায় দেবে? তাই উৎসবে ফিরছি না। আর আমি সম্পূর্ণ আমার মত বলেছি। উৎসবে ফিরুন যেমন বলা যায় না। উৎসবে ফিরবেন না, এটাও বলা যায় না। আমি কি অঞ্জলি দেব না? দেব। আর পুজোর বিরোধিতা করে আমি পুজোর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষের পেটে লাথি মারব, এমনটা তো নয়। আর এই কথাটা মাননীয়ার ‘উৎসবে ফিরুন’ কথার প্রেক্ষিতে এসেছে। সব কি ভুলে যাব! যে দেশে মেয়েদের স্বাধীনতাই এখনও আসেনি সেখানে নিরাপত্তার কথা, স্বাধীন মত প্রকাশের কথা বলব না? আরে ইচ্ছেমতো জামাকাপড় পরার অবকাশ নেই, সারা ক্ষণ লোকজন বন্দুক তাক করে বসে আছে। আমি অন্যদের মতো এটাও বলব না যে ঠিক আছে ‘প্রতিবাদ হোক’, ‘উৎসবে ফিরুন’, ‘ঢাক বাজুক’, ‘ফুচকা খাওয়া হোক’। আমার পিছনে কেউ আদাজল খেয়ে পড়ে গেলেও ওই নিরাপদ থাকার খেলা আমি খেলতে পারব না। যাঁরা ও ভাবে ভাবছেন, তাঁরা ভাবুন।

আমার জীবনটাই এমন। সহজ। কঠিন। দ্বন্দে। ছন্দে।

আরও পড়ুন
Advertisement